প্রযুক্তির এই যুগে মুঠোফোন হয়ে উঠেছে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর তার সঙ্গে দিন দিন বেড়েই চলেছে এর ওপর আমাদের আসক্তি। মাঝেমধ্যে এই আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, মুঠোফোন হাত থেকে নামালেই উদ্বেগ আর অস্বস্তি কাজ করে আমাদের মধ্যে। অনেকটা ফোবিয়ার পর্যায়ে চলে যায় তখন বিষয়টি। একে মনস্তত্ত্ববিদেরা নোমোফোবিয়া নাম দিয়েছেন।
আসলে ‘ফোবিয়া’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘ফোবোস’ থেকে। ফোবোস অর্থ ‘ভয়’। আর ‘নোমোফোবিয়া’ (Nomophobia) হচ্ছে ‘নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া’ (No Mobile Phone Phobia) শব্দগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ। মুঠোফোন কাছে না থাকার আতঙ্কই নোমোফোবিয়া নামে পরিচিত।
এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মুঠোফোনের সঙ্গে অতিরিক্ত মানসিক সংযোগ থাকায় মুঠোফোন ছাড়া তারা এক মুহূর্তও থাকতে পারেন না। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, নোমোফোবিয়া এতটাই শক্তিশালী হতে পারে যে, এতে আক্রান্ত ব্যক্তি কখনোই তাঁদের ফোন বন্ধ করেন না। রাতে ঘুমানোর সময় বা এমন সময়ও নয়, যখন তাঁদের মুঠোফোন ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই।
যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে কেন তাঁরা ফোন বন্ধ করেন না? ৫৫ শতাংশ বলেছে, তাঁদের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য মুঠোফোন প্রয়োজন। আবার ১০ শতাংশ বলেছে, কাজের কারণে তাঁদের যোগাযোগ করতে হতে পারে এবং ৯ শতাংশ বলেছে, মুঠোফোন বন্ধ করা তাঁদের উদ্বিগ্ন করে তোলে।
১. আপনি কখনোই আপনার ফোন বন্ধ করেন না এবং মিসড মেসেজ, ই–মেইল বা কলের জন্য ক্রমাগত ফোন চেক করতে থাকেন।
২. পর্যাপ্ত চার্জ থাকার পরও আপনি বারবার ফোনে চার্জ দিতে থাকেন, যেন ফোন বন্ধ না হয়ে যায়।
৩. খাবার খেতে খেতেও আপনি ফোন ব্যবহার করেন।
৪. আপনি আপনার ফোন কখনোই হাতছাড়া করেন না। এমনকি ওয়াশরুমেও আপনি ফোন নিয়ে যান।
৫. ফোনে সিগন্যাল না থাকলে আপনি একধরনের অস্বস্তি অনুভব করেন।
১. ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফোন বন্ধ করে রাখুন এবং বিরামহীনভাবে ঘুমান।
২. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন। কারণ, এসব নোটিফিকেশন আপনার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।
৩. নিজের জন্য একটি স্ক্রিনটাইম বরাদ্দ করুন যে সময়ের বাইরে আপনি ফোন ব্যবহার করবেন না।
৪. ফোনে বারবার সময় দেখার বদলে হাতঘড়ি ব্যবহার করুন।
৫. ফোনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটান, বই পড়ুন বা পছন্দের কোনো সৃজনশীল কাজে নিজেকে যুক্ত করুন।
তথ্যসূত্র : ফোর্বস
ছবিঃ পেকজেলস ডট কম