ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট প্রতিবছরই বিশ্বসেরা পুষ্টিবিদদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলের মতামত অনুযায়ী সবচেয়ে উপকারি, সবচেয়ে ক্ষতিকর ও অকার্যকর ডায়েট প্ল্যানের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। ২০২৩–এর শীর্ষ স্থানে রয়েছে মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট আর তালিকার তলানিতে র ফুড ডায়েট। বলা হচ্ছে, র ফুড ডায়েটের পরেই সব দিক বিবেচনায় সবচেয়ে অকার্যকর হচ্ছে কিটো ডায়েট।
বিশ্বের পুষ্টিবিদেরা জাপানিজ আর মেডিটেরেনিয়ান ডায়েটের ব্যাপারে সব সময় ইতিবাচক মতামত দিয়ে আসছেন যুগে যুগে। কিন্তু দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, এবার ৩৩ জন বিশ্বসেরা পুষ্টিবিদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলের রিপোর্টে টানা ষষ্ঠবারের মতো তালিকায় শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট। আর এ তালিকা করা হয়েছে সার্বিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসম্মত দিকগুলো বিবেচনায়। শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণ বা হ্রাসের নিরিখে নয়।
এই বাৎসরিক তালিকা প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টের স্বাস্থ্যবিষয়ক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেটেল শুলার বলেন, ‘যত ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা ও যত্নের দিকগুলো এ তালিকা তৈরির সময় বিবেচ্য হিসেবে রাখা যায়, ততই ভালো। এর মধ্যে আছে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখা, হৃদ্যন্ত্রের দেখভাল বা বর্ষীয়ানদের স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে ডায়েট প্ল্যানটি কতটুকু ভালো, এ রকম ব্যাপারগুলো খেয়াল করা। কিন্তু সব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া কঠিন।’
তিনি আরও বলেন, মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট মানে শুধু সে অঞ্চলের রেসিপি নয়, বরং এই ডায়াটের মূলনীতি অনুযায়ী উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া তাজা খাদ্যোপকরণ ব্যবহারের প্রবণতা ও কায়দা-কানুন মেনে চলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে একেবারে নতুন আসা কিইটো এবং প্রিটিকিন ডায়েট ঠিক এ রকম। এ কিইটো ডায়েট আসলে কিটো ডায়েটের অযৌক্তিক শৃঙ্খল ভেঙে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ভালো মানের শর্করা ও ফ্লেক্সিবল মেনু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রিটিকিন ডায়েটে যেমন কোনো কিছু না ফেলে পুরো শস্য, সবজি বা ফল ব্যবহার করা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ যথাসম্ভব কমিয়ে আনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
আসলে মেডিটেরেনিয়ান ডায়েটের স্টাইলটিই গুরুত্বপূর্ণ, নির্দিষ্ট কোনো খাদ্যোপকরণ নয়। ফল, সবজিসহ উদ্ভিজ্জ খাবারের ওপর জোর দেওয়া হয় এতে। হোলগ্রেন কার্ব বা পুরো শস্যদানা ব্যবহার করে পাওয়া শর্করা, উপকারী তেলতেলে মাছ, বিনস আর পুষ্টিকর বীজজাতীয় খাদ্যও মেডিটেরেনিয়ান ডায়েটের বৈশিষ্ট্য। পরিমিত বাদাম আর অলিভ অয়েলের সমন্বয়ে এই ডায়েটে পাওয়া যায় যথেষ্ট ভালো ফ্যাট। চিনিজাতীয় খাবার ও লাল মাংস একেবারেই সীমিত রাখা হয় এর সঙ্গে। মেডিটেরেনিয়ান ডায়েটের সুফল অনেক। ডায়াবেটিস, রক্তের কোলেস্টেরল, ডিমেনশিয়া, স্মৃতিভ্রংশ বা ক্যানসারের মতো রোগপ্রতিরোধে এ ডায়েটের কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ডায়েট অনুসরণকারীদের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, হৃদ্যন্ত্র ও মস্তিষ্ক থাকে সুস্থ।
এ বছর বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে অকার্যকর ও ক্ষতিকর ডায়েটের তকমা দিয়েছেন র ফুড ডায়েটকে। এ ক্ষেত্রে কিছুই রান্না করা হয় না বলে সত্যিকার অর্থে পুষ্টির ঘাটতি রয়েই যায়। একেবারে কাঁচা বা কোনো রকম প্রক্রিয়াজাত না করে সব ধরনের খাবার খাওয়া কঠিন। এতে জীবাণু রয়ে যাওয়া আর হজমের সমস্যার ব্যাপারটিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তথ্যসূত্র: ইউ এস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট, সিএনএন, সিএসবি
ছবি: হাল ফ্যাশন আর্কাইভ