চারপাশে প্রায়ই চোখে পড়ে ওজন কমানোর নানা পদ্ধতি। তবে এসবের ভিড়ে ওজন বাড়াতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। শরীরে একটু ভরাট ভাব এলে যেন লুকের ধরনটাই বদলে যায়। চেহারায় লালিত্য আসে। তাই অতিরিক্ত হালকা–পাতলা গড়নের মানুষ চাইতেই পারেন একটু মোটা হতে। তবে ওজন কমানোর মতো ওজন বাড়ানোর প্রক্রিয়াও সহজ নয়। আবার শর্টকাট খুঁজতে গিয়ে অজান্তেই নিজের ক্ষতি করে বসেন অনেকেই। চলুন, জেনে নিই ওজন বাড়াতে চাইলে কী কী ভুল মোটেও করা যাবে না
১.ইচ্ছামতো ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ
ওজন বৃদ্ধির চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দেন অনেকেই। অল্প সময়ে ওজন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিতে অনেকেই গ্রহণ করেন নানা ধরনের সাপ্লিমেন্ট ও ওষুধ। এ পণ্যগুলো শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ, বেশির ভাগ ওজন বাড়ানোর পাউডার বা ট্যাবলেটে খাদ্য ও ওষুধ অধিদপ্তরের (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অনুমতি থাকে না। তাই ওজন বাড়ার ওপর এ ধরনের ওষুধের কার্যকারিতার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ওজন বাড়ানোর এসব ওষুধ ও সাপ্লিমেন্টের বদলে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রস্তুত করা পুষ্টিকর খাবার খান। বেশি ক্যালরি গ্রহণ করুন।
২. কোনো বেলার খাবার এড়িয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত খাওয়া
শুনতে অদ্ভুত হলেও অনেকেই ভেবে থাকেন, এক বেলা খাবার না খেলে ওজন বাড়ে। কারণ, ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমাদের শরীর শক্তি সঞ্চয় করে রাখে, ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। আবার অনেকের এই ধারণা অতিরিক্ত খেলেই ওজন বাড়বে। তবে ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই দুই পদ্ধতিই ভুল। বরং আপনার যদি ওজন বাড়েও, তবে এটি আপনার স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। ওজন বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে, একজন পুষ্টিবিদ বা ডায়েট বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা আর তাঁর পরামর্শমতো খাবার খাওয়া।
৩. নিয়ম মেনে না চলা
আপনার যদি নিয়ম পালনে অনীহা থাকে, আপনি যদি রুটিন না মানেন, তাহলে কখনোই আপনি ওজন বাড়ানোর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না। ওজন বৃদ্ধি করার ডায়েট প্ল্যান মেনে চলুন ভালোভাবে। আমরা যখন রুটিন মেনে চলি, তখন আমাদের শরীর একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে অভ্যস্ত হতে থাকে। নিয়ম মানার ক্ষেত্রে ছাড় দিলেই আমাদের শরীর এই পুরো প্রক্রিয়াটির সব অগ্রগতিকে ভুলে যায়। ফলে আপনার এত দিনের কষ্ট পুরোটাই মাটি হয়। তখন আবার নতুন করে শুরু করতে হয় সবকিছু।
৪. ব্যায়াম না করা
ওজন কমানোর সঙ্গে ব্যায়াম একেবারেই যায় না—সবার মধ্যেই এ ধারণা কমবেশি প্রচলিত। বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, ব্যায়াম কেবল ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি শারীরিক পরিশ্রম না করে শুধু ওজন বাড়াতেই মনোযোগী হোন, তবে তা কেবল আপনার জীবনে সমস্যাই ডেকে আনবেন। কারণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টের মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখ হতে পারে। তাই আপনার ওজন কম হোক বা বেশি, ব্যায়ামকে পরিণত করুন দৈনন্দিন জীবনের অংশে।
৫. অন্যদের অন্ধভাবে অনুসরণ করা
আমাদের প্রত্যেকের শারীরিক গঠন আলাদা। খাবার, পুষ্টির চাহিদা, শারীরিক বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও আলাদা। তাই অন্যদের জন্য যে পদ্ধতি কাজ করেছে, তা আপনার জন্য কাজ না–ও করতে পারে। তাই অন্য কারও ডায়েট প্ল্যান বা ওজন কমানোর পরামর্শ না মেনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন। খাবারের পছন্দ ও শারীরিক ধরন অনুযায়ী ডায়েট প্ল্যান মেনে চলুন।
৬. মনোবল হারিয়ে ফেলা
ওজন বাড়াতে আপনার অনেকটা সময় লাগতে পারে। অনেকেই এ সময়টুকুতে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। দ্রুত ফল চাওয়ার মনোভাব হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। ওজন বাড়ানো একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন। এই প্রক্রিয়া কখনোই রাতারাতি ঘটে না। তাই অযথা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করে নিজের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং নতুন খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের রুটিনে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করুন। ওজন বাড়ানোর এই যাত্রাকে ভালোবাসুন। কারণ, অভ্যাসকে আপন করে নিলেই পরিবর্তন সহজে ধরা দেয়।
তথ্যসূত্র: প্রিস্টিনকেয়ার ডট কম
ছবি: পেকজেলস ডট কম