যদি প্রশ্ন করা হয়, কোনো কিছুতে আমরা বিক্ষিপ্ত বা অস্থির থাকলে কি আমাদের চিন্তা বা মন বর্তমানে থাকে, নাকি অন্য অতীত বা ভবিষ্যতের কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করি?
আসলে তখন আমাদের বিক্ষিপ্ত চিন্তা বর্তমানের হয় না; বরং তা হয় অতীত বা ভবিষ্যতের। এই যেমন—আমি আগেও ফেল করেছি, আবারও করব। এমন চিন্তাই বারংবার এসে আমাদের মধ্যে চিন্তার শিকল তৈরি করে। ফলে আমাদের মন আরও অশান্ত হয়ে ওঠে।
এই অস্থির চিন্তা থেকে মনকে শান্ত করার জন্য আমেরিকান বিজ্ঞানী জন কাবাত-জিন বুদ্ধদর্শন থেকে একটি কৌশল আবিষ্কার করেন, যা মাইন্ডফুলনেস নামে পরিচিত।
কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সচেতনভাবে কোনো কিছু বিচার-বিশ্লেষণ না করে বর্তমান মুহূর্তে থাকার অভিজ্ঞতা হলো মাইন্ডফুলনেস। এই কৌশলকে আয়ত্ত করতে মনোবিজ্ঞানীরা কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপিতে অনেক ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন, যার একটি হলো মাইন্ডফুলনেস জরি জার।
মাইন্ডফুলনেস জরি জার হলো গ্লিটার বা জরি ও পানিভর্তি একটি কাচের জার বা পাত্র। আসলে জরি জার বা পাত্রটি মাইন্ডফুলনেস অনুশীলনের জন্য রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়; কারণ, একজন অল্প বয়সী ছেলে বা মেয়ে খুব আনন্দের সঙ্গে সহজে অনুশীলনটি রপ্ত করতে পারে।
এই পদ্ধতি তিন বছর থেকে মূলত কৈশোর পর্যন্ত হলেও প্রাপ্তবয়স্করাও এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করতে পারেন।
বিক্ষিপ্ত চিন্তা, অস্থিরতা, রাগ, মানসিক চাপ, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ, নিজেকে আঘাত করাসহ বিভিন্ন আবেগময় সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
১. ছোট একটি কাচের জার বা পাত্র
(নিশ্চিত করুন এটি শক্তভাবে তরল ধরে রাখবে)
২. সাদা আঠা বা গ্লু
৩. গ্লিটার বা জরি (আপনার পছন্দের যেকোনো রঙের)
৪. কয়েক ফোঁটা ফুড কালার
৫. হালকা গরম পানি
৬. একটি লাঠি বা চামচ
১. কাচের জারটি প্রথমে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
২. প্রায় ২০% আঠা বা গ্লু ও ৮০% হালকা গরম পানি দিয়ে কাচের জারটি পূর্ণ করতে হবে। এবার একটি কাঠি দিয়ে পানি ও গ্লু ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
৩. তারপর ১-২ টেবিল চামচ গ্লিটার বা জরি সেই পানিতে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিয়ে পছন্দমতো ফুড কালার যোগ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে রং বেশি দিলে পানিভর্তি জারটি কালো হয়ে যাবে, তাই সাবধানে অল্প ও হালকা রং দিয়ে পুনরায় কাঠি দিয়ে নাড়তে হবে।
৪. সবকিছু মেশানো হয়ে গেলে কাচের জারের ঢাকনাটি বন্ধ করে ভালোভাবে ঝাঁকুনি দেওয়ার পর ঢাকনা খুলে পানি ঠান্ডা হতে দিতে হবে।
৫. পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে আমাদের মাইন্ডফুলনেস কাচের জার তৈরি হয়ে গেল।
১. আমরা বিক্ষিপ্ত বা অস্থির হলে মাইন্ডফুলনেস জারটি হাতে নিয়েও ওপর–নিচ করে ঝাঁকুনি দিতে হবে।
২. এবার মাইন্ডফুলনেস জারটি নির্দিষ্ট একটি জায়গায় রেখে শ্বাস নেওয়া ও শ্বাস ছাড়ার মাধ্যমে জারটিকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৩. আর ভাবতে যে আমার মানসিক চাপ, বিক্ষিপ্ত বা বিচলিত অবস্থা কাচের পাত্রের জরির মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
৪. তারপর চারপাশের জরিগুলো ধীরে ধীরে পাত্রের নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে ও পাত্রের পানি পরিষ্কার হচ্ছে। বিক্ষিপ্ত অবস্থা থেকে মন শান্ত হলে নিজের ঠিক যেমন অনুভূতি হয়। এ কারণেই যখন মন খারাপ বা অস্থির থাকে, তখন সেই সময়ের প্রতিক্রিয়া খারাপ হয় ও চিন্তা থাকে অস্পষ্ট। তাই বিক্ষিপ্ত বা অস্থির থাকলে মাইন্ডফুলনেস জার নিয়ে সেটি ঝাঁকিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়া ও নেওয়ার মধ্য দিয়ে জরি পাত্রের নিচে পড়া দেখতে ও পানি পরিষ্কার হওয়া উপভোগ করতে হবে। ঠিক একইভাবে নিজের অস্থির মনকে স্থির করতে হবে। এমন করে প্রতিনিয়ত অনুশীলনের মাধ্যমে রপ্ত হবে মাইন্ডফুলনেস।
ছবি: লেখক ও পেকজেলসডটকম