হ্যাপি হরমোনে মনের সতেজতা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের কাজের চাপে নিজের, বিশেষত নিজের মনের যত্ন নিতে ভুলে যাই আমরা। ঘুম থেকে উঠে হয় অফিস, নয় পড়ালেখা কিংবা সংসারের কাজ লেগেই থাকে। শারীরিক ক্লান্তির পাশাপাশি চলে আসে মানসিক অবসাদের বিষয়টিও। কিন্তু এভাবে চললে একসময় দেখা দিতে পারে বড় সমস্যা। পুষ্টিবিদেরা বলেন, রুটিন মেনে চলা, ওয়ার্কআউট করা ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর অভ্যাস তৈরি হলে শরীরের হ্যাপি হরমোনগুলো কাজ শুরু করে। দৈনন্দিন আঁটসাঁট রুটিনের চাপে মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি আমরা। হ্যাপি হরমোনের মুক্ত নিঃসরণ নিশ্চিত করতে পারলে এ চাপ ও ক্লান্তি অনেকটা সামাল দেওয়া যায়। তবে তত্ত্বকথার ভেতরে না ঢুকে সাধারণভাবে বহুল আলোচিত এই হ্যাপি হরমোন কী, তা প্রথমে জেনে নেওয়া যেতে পারে।

হেলথলাইনের তথ্য অনুসারে, সাধারণভাবে কয়েক ধরনের হরমোনকে হ্যাপি হরমোন বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডোপামিন, সেরেটোনিন, অক্সিটোসিন, এন্ডোরফিন ইত্যাদি। ডোপামিন ‘ফিল-গুড’ হরমোন হিসেবে পরিচিত, কারণ তা আনন্দের অনুভূতি দিতে সক্ষম। মন ফুরফুরে ও সতেজ রাখতে এর জুড়ি নেই। আবার সেরোটোনিন হরমোন আমাদের মেজাজ, ঘুম, ক্ষুধা ও হজমের বেশ কিছু দিক নিয়ন্ত্রণ করে। এরপরই আসে সবার মুখে মুখে ফেরা ‘লাভ হরমোন’ অক্সিটোসিনের কথা। সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস, পারস্পরিক সহানুভূতি ও বন্ধনের মতো মানবীয় বিষয়ে কলকাঠি নাড়ার ক্ষেত্রে অক্সিটোসিনের ভূমিকা রয়েছে। এদিকে এন্ডোরফিন হচ্ছে ব্যথা উপশমকারী হরমোন, যা প্রবল মানসিক চাপের সময়ও নিঃসৃত হয়। আমরা যখন ব্যায়াম করি বা ধ্যান করি, তখন এর নিঃসরণ বেড়ে যায়। কেউ যখন সুখ বা আনন্দ অনুভব করে, তখন এর উৎপাদন বেড়ে যায়। নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনা বাড়ানোর জন্য সাপ্তাহিক রুটিন বানিয়ে নেওয়া যায়। আগে খুঁজে বের করতে হবে কোন বিষয়গুলো স্ট্রেস কিংবা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে সঠিক খাবার, ঘুম, ব্যায়াম—সব ভেস্তে যাচ্ছে। সুতরাং সপ্তাহের রুটিনে ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিনের মতো হ্যাপি হরমোন উৎপাদন করতে উৎসাহিত করে—এমন কাজ যোগ করতে হবে।
প্রাকৃতিকভাবে এই হরমোনগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখার কিছু কৌশল জেনে নেওয়া যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ঘুম

উপযুক্ত ঘুম শরীরে ডোপামিন নিঃসরণ করতে এবং কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে একটি রুটিন তৈরি করা উচিত যেন পর্যাপ্ত ঘুম হয়। বেলা তিনটার পর ক্যাফেইন গ্রহণ এড়ানো, প্রতি রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া বা রাতের খাবারের পরে ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা—এ ব্যাপারগুলোর দিকে খেয়াল রাখা উচিত। প্রতিদিন সাত ঘণ্টা ঘুম জরুরি।

ব্যায়াম

ব্যায়াম শুধু ওজন কমানোর জন্য বা পেশি তৈরির জন্য নয়, এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও বিশাল ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম এন্ডোরফিন, ডোপামিন ও সেরোটোনিনের উৎপাদন বাড়ায়। মানসিক শক্তি, ভালো মেজাজ এবং সামগ্রিকভাবে ভালো থাকার অনুভূতি দেয় ব্যায়াম। এ ক্ষেত্রে যোগব্যায়ামও খুব ভালো কাজে দেয়।

সাপ্তাহিক পরিকল্পনা

লিখে রেখে মনে করে দেখা যায়, গত সপ্তাহে কোন পাঁচটি কাজ আমাদের মনকে উৎফুল্ল করেছে। এটা হতে পারে বন্ধুর সঙ্গে কফির আড্ডা কিংবা অফিসের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করা। এবার আসন্ন সপ্তাহের কিছু কাজের পরিকল্পনা ওই আলোকেই করে ফেলা যায়। প্রতিদিন রুটিনে এমন কিছু রাখতে হবে, যা করলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে এক সপ্তাহের সম্ভাব্য কাজগুলোও লিখে রাখলে ভালো। তাহলে সারা সপ্তাহ গুছিয়ে চলতে সুবিধা হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো

প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটালে আমরা নিরাপদ বোধ করি। ভালো লাগার অনুভূতি জাগে। তখন শরীরে ডোপামিন ও এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়। সপ্তাহান্তের রুটিনে এক দিন অন্তত চেষ্টা করতে হবে প্রিয় কোনো মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে। এ পরামর্শ দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানী ও আর্ট থেরাপিস্ট জাহিদ হাসান নীল। তিনি বলেন, সারা দিন পর বাসায় ফিরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো যায়। আড্ডা, গান, একসঙ্গে খাবার খাওয়ার মতো কাজগুলো হ্যাপি হরমোন উৎপাদন করে। হাতে সময় থাকলে কাছের মানুষটির সঙ্গে কোথাও ঘুরতে আসা যেতে পারে।

খাবার

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী জানান, প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার খেলে হ্যাপি হরমোন নিঃসৃত হতে সাহায্য করে। খাদ্যতালিকায় প্রোবায়োটিক খাবারগুলো যোগ করতে হবে। দই, চিয়া বীজ, পালং শাক, সবুজ মটরশুঁটি, রসুন, আমন্ড, আদা, কলা, বেরি, ডার্ক চকলেট ইত্যাদি প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার।

সুখস্মৃতি স্মরণ করা

মেজাজ ও স্মৃতির মধ্যে মস্তিষ্কে একটি মিথস্ক্রিয়া আছে। ইতিবাচক স্মৃতিগুলো মনে করা যেতে পারে। হতে পারে কোনো ছুটির দিনে কাটানো বিশেষ মুহূর্ত কিংবা বিয়ের অ্যালবাম দেখা, যা আনন্দ অনুভূতি দেয়, সেসব স্মৃতিই রোমন্থন করা যেতে পারে। এতে সেরটোটিন হরমোন নিঃসৃত হতে সাহায্য করবে।

কৃতজ্ঞতা অনুশীলন

কৃতজ্ঞতা মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমকে সক্রিয় করে। প্রতিদিন কী কী বিষয়ে আমরা প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞ বা অন্যের কাছে কৃতজ্ঞ, তা লিখে রাখা যেতে পারে। তিনটি বিষয়ে লিখলেই হবে। শুরু করে দেখা যেতে পারে; ভালোও তো লাগতে পারে!

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৩, ০৪: ০০
বিজ্ঞাপন