ভাতের মাড় ত্বকের জন্য বেশ উপকারী বলেই জাপান, কোরিয়া ও চীনের নারীরা তাঁদের রূপচর্চায় ভাতের মাড় ব্যবহার করে আসছেন বহু বছর ধরে। তবে ভাতের মাড় অবশ্যই গরম থাকা অবস্থায় ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না। এতে করে হিতে বিপরীত হতে পারে। ভাতের মাড় ঠান্ডা করে ১২-১৪ ঘণ্টা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
ত্বকে অস্বস্তিকর চুলকানি, জ্বালাপোড়া থেকে সহজেই মুক্তি পেতে গোসলের পানিতে সামান্য ভাতের মাড় মিশিয়ে নিন।
চোখের নিচের বলিরেখা ও কালি নিয়ে চিন্তিত? ভাতের মাড়েই পাবেন সমাধান! ভাতের মাড়ে টিস্যু ভিজিয়ে নিন। টিস্যু বেয়ে যেন ভাতের মাড় না পড়ে, সে জন্য খানিকটা সময় টিস্যু একটি প্লেটে রেখে দিন। এরপর এই টিস্যু ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে দুই ভাগ করে চোখের ওপরে দিয়ে রাখুন।
ত্বকে বয়সের ছাপ এড়াতেও সাহায্য করবে ভাতের মাড়। টমেটোর রস ও ভাতের মাড় সমপরিমাণে নিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ব্যবহারে ত্বক হবে টান টান ও উজ্জ্বল।
রোদে পোড়াভাব দূর করতে ভাতের মাড় ঠান্ডা করে ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে তফাতটা নিজেই বুঝতে পারবেন।
ভাতের মাড়ের সঙ্গে সামান্য ভাত, টক দই, ভেজানো কাঠবাদাম, অ্যালোভেরা জেল ও রেড়ির তেল একত্রে জোগাড় করুন। এবার ভাত, ভাতের মাড়, খোসাছাড়ানো কাঠবাদাম একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এর সঙ্গে এক চা-চামচ করে টক দই, অ্যালোভেরা জেল ও আধা চা-চামচ রেড়ির তেল মিশিয়ে নিন। রাতে ঘুমানোর আগে ভালো করে মুখ ধুয়ে এই ফেস প্যাক ১৫-২০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন। এরপর হালকা ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে নিন। এই ফেস প্যাক ত্বকের মৃত কোষ দূর করবে, রোমকূপ পরিষ্কার করবে এবং ত্বককে করে তুলবে প্রাণবন্ত ও সতেজ।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা! এই চুলের নেশায় কত কিছুই না ব্যবহার করে থাকেন! এবার ঘরের খুব সহজলভ্য উপাদান ভাতের মাড় ব্যবহার করেই দেখুন না!
ভাতের মাড়ের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি যেন খানিকটা ঘন হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণ চুলে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণ আপনার চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে এবং ভাতের মাড়ে থাকা ভিটামিন ই ও বি চুলকে করবে ঝলমলে উজ্জ্বল।
চুলে নানান রকম স্টাইলিং করে প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে স্ক্যাল্পে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভাতের মাড় খুবই উপকারী। স্ক্যাল্পে যখন বেশি পরিমাণে প্রাকৃতিক তেল বা সিবাম তৈরি হয়, তখন স্ক্যাল্প শুষ্ক হয়ে যায় এবং স্ক্যাল্পে খুশকি হতে পারে। তাই ভাতের মাড়ের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে এই মিশ্রণ চুলের গোড়ায় ভালো করে ঘষে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই মিশ্রণ ব্যবহারের ফলে খুশকির সমস্যা থেকে খুব দ্রুতই রেহাই পাবেন।
আগা ফাটার জন্য চুলের সৌন্দর্যই যেন নষ্ট হয়ে যায়। নানান কারণে চুলের আগা ফাটলেও প্রোটিনের অভাবেই মূলত চুলের আগা ফেটে যায়। ভাতের মাড়ে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড চুলের আগা ফাটার সমস্যা কমাতে দারুণ সাহায্য করে। চুলের আগা ঠান্ডা ভাতের মাড়ে ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ব্যবহারে চুলের আগা ফাটার সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।
ভাতের মাড়ে রয়েছে ভিটামিন ই, বি, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক। এই উপাদানগুলো চুলের বৃদ্ধি এবং চুলকে নরম ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। ভাতের মাড় ঠান্ডা করে স্প্রে বোতলে ঢেলে নিন। এরপর চুলের গোড়ায় ভালো করে স্প্রে করে তেলের মতো ম্যাসাজ করে নিন কয়েক মিনিট ধরে। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের বৃদ্ধি নিজেই লক্ষ্য করতে পারেবন।
শুধু ত্বক আর চুলের যত্নেই নয়, আরও অনেক কাজেই উপকারে আসে ভাতের মাড়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভাতের মাড়ের আরও কিছু টোটকা।
নন-স্টিক হাঁড়ির নিচের দিকে পুড়ে কালি পড়েছে? সেখানে সামান্য পরিমাণে ভাতের মাড় লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। পোড়া দাগ অনেকটাই উঠে যাবে।
অনেক বছর ধরেই পুরোনো একটা পদ্ধতি সবাই ব্যবহার করে আসছেন। কাপড় ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ভাতের মাড়ে ধুয়ে নিন। কাপড় হবে একদম নতুনের মতো।
১০ কাপ পানিতে ১ কাপ ভাতের মাড় মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ঢেলে দিন। এটি প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করবে। তবে ভাতের মাড় যেন অবশ্যই ঠান্ডা করে নেওয়া হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন।
ছবি: পেকজালসডটকম