ফাস্টফুড এড়াতে জেনে নিন ৫টি কার্যকর উপায়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

এখন ঢাকা নগরী তো বটেই, যেকোনো শহরতলি বা গ্রামের অলিগলি, রাস্তার মোড় আর শপিং মল কিংবা স্থানীয় বাজারে দেখা যায় অগুনতি ফাস্টফুডের দোকান। পথ চলতে ফ্রায়েড চিকেন, পিৎজা, বার্গারের মতো ফাস্টফুডের লোভনীয় রূপ আর মোহনীয় সুবাসে আকৃষ্ট না হয়ে পারা যায় না৷

বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে হোক আর দিন শেষে বাড়ি ফিরে মজাদার কিছু খেতে চাইলে হোক, দোকানে বসে বা ডেলিভারিতে আনিয়ে ফাস্টফুড খাওয়া হয় প্রায়ই। এদিকে ফাস্টফুড নিয়মিত খাওয়া যে স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু ছাড়ি ছাড়ি করেও যারা ফাস্টফুড বা জাংকফুড ছাড়তে পারছেন না, তাঁদের জন্য আজ থাকছে কিছু টিপস।

বিজ্ঞাপন

১. বেশি বেশি পানি পান করুন

ফ্রায়েড চিকেন, বার্গার, পিৎজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কোমল পানীয় ইত্যাদি মুখরোচক ও প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ও চিনি। দুটি উপাদানই আমাদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করে, যা বারবার আমাদের এ ধরনের খাবারের দিকে হাত বাড়াতে বাধ্য করে। যাঁরা পানি কম পান করেন, তাঁদের দেহে সোডিয়ামের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। ফলে আরও বেশি করে জাঙ্ক ফুড বা সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে ইচ্ছা করে। তাই বেশি করে পানি পান করলে দেহে সোডিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং ফাস্টফুডের প্রতি আকর্ষণ কমে আসে।

২. প্রোটিন ও ফাইবার–সমৃদ্ধ খাবার খান

প্রোটিন ও ফাইবার–সমৃদ্ধ খাবার বেশি সময় পর্যন্ত পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেয়। তাই প্রতিদিনের খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার–সমৃদ্ধ শাকসবজি ও আমিষজাতীয় খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি যোগ করতে হবে। এ ছাড়া তিন বেলা ভরপেট স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যখন তখন খাওয়ার ইচ্ছা কম হয়। তাই অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমে আসে। এ ছাড়া ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমরা হাতের কাছে থাকা অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাই। কিন্তু পেট ভরা থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম থাকে। এ জন্য তিনটি প্রধান মিল ছাড়াও দুই বেলা হালকা নাশতা করা যেতে পারে। এ সময় খাওয়ার জন্য এক মুঠ বাদাম বা কোনো একটি ফল ভালো হবে।

বিজ্ঞাপন

৩. আগে থেকে ঠিক করে রাখুন কখন কোন খাবার খাবেন

এখনকার যুগে হুট করে বাইরে থেকে কিছু কিনে আনা অনেক বেশি সহজ হয়ে এসেছে। তাই আগে থেকে সময়ের খাবার ঠিক করে রাখা জরুরি। সম্ভব হলে আগের দিন রাতে পরদিন কখন কী খাবেন, তা ঠিক করে রাখুন। যদি প্রতিদিন পরিকল্পনা করা সম্ভব না হয়, তাহলে ছুটির দিনগুলোতে পুরো সপ্তাহের খাবারের প্ল্যান ঠিক করে রাখতে পারেন। পশ্চিমা দেশগুলোতে বর্তমানে ‘মিল প্রেপ’ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে করে সপ্তাহে এক দিন বেশি করে রান্না করে খাবারগুলো ছোট ছোট পরিমাণে আলাদা আলাদা বাটিতে করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এতে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে ব্যস্ত দিন কাটিয়ে এসে রান্না করার ঝক্কি পোহাতে হবে না। আবার বাইরে থেকে প্রতিদিন জাংকফুড কিনেও খেতে হবে না।

৪. ফল ও বাদামের মতো স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো হাতের কাছে রাখুন

ক্ষুধার্ত অবস্থায় হাতের কাছে সহজে পাওয়া খাবারের দিকে প্রথমে চোখ যায়। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে হাতের কাছে রাখতে পারেন ফল, বাদাম ও বিভিন্ন ধরনের বীজ (কুমড়া, সূর্যমুখী, তিসির বীজ)। যদি শুধু শুধু বাদাম কিংবা বীজ খেতে পছন্দ না করেন, তবে খেজুর, কোরানো নারকেলের সঙ্গে মিশিয়ে নাড়ু কিংবা প্রোটিন বার বানিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে রসনাতৃপ্তি হবে আর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির উপাদানও পাওয়া যাবে।

৫. খাবারের ক্ষেত্রে নিজেকে শৃঙ্খলিত করবেন না

‘নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেশি’—কথাটি আমরা কমবেশি সবাই শুনেছি। আর কথাটি যে সত্য, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই কোনো খাবার পুরোপুরি বাদ দিতে হবে, এই মানসিকতা দূর করতে হবে। তবে অবশ্যই তা সীমার মধ্যে থাকতে হবে। যদি আপনার পিৎজা খেতে ইচ্ছা করে, তবে এক স্লাইস খেয়ে নিন। এতে করে খাবারটি খাওয়ার চিন্তা আপনার মাথা থেকে দূর হবে। তবে গোটা পিৎজা খেয়ে নিলে চলবে না কিংবা প্রতিদিন এই কাজ করা যাবে না। যেকোনো খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে ‘পোর্শন কন্ট্রোল’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ পরিমিত পরিমাণে যেকোনো খাবার গ্রহণ করতে হবে।
বিভিন্ন উৎসব কিংবা দাওয়াতে মুখরোচক খাবার খাওয়া স্বাভাবিক। এদিকে খাদ্যাভ্যাস থেকে পুরোপুরিভাবে জাঙ্ক ফুড বাদ দিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে তা দৈনন্দিন খাবারের বেলায় এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণও বটে। এখানে যেগুলো বলা হয়েছে,  সে রকম ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ খুব সহজে আমাদের এই অভ্যাস পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে।

ছবি: হাল ফ্যাশন ও পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩, ০২: ০০
বিজ্ঞাপন