কী করবেন যখন শুধু আবেগ কাজ করে, বিবেক নয়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আবেগ বা অনুভূতি মানবজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে তা প্রকাশের বেলায় একেকজন একেক রকম। আচ্ছা, কখনো কি এমন হয়েছে যে আপনি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি, জায়গা বা ঘটনার কারণে খুব বেশি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন অথচ এর কিছুক্ষণ আগপর্যন্ত আপনি ঠিক ছিলেন? এই বিষয়টি কমবেশি আমাদের সবার সঙ্গেই হয়ে থাকে। আর এর নামই হলো ইমোশনাল ট্রিগার। এই ইমোশনাল ট্রিগারগুলো আমাদের আচার–আচরণ আর জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।

ইমোশনাল ট্রিগারের কিছু ধরন

অতীতের কোনো দুর্ঘটনা বা খারাপ কোনো অভিজ্ঞতা

যেকোনো বিষয়ের প্রতি ফোবিয়া বা ভয়

এমন কোনো অবস্থা, যা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে

বড় ধরনের ক্ষতি বা কিছু হারানোর আশঙ্কা

ত্রুটিপূর্ণ সম্পর্ক

জীবনে হঠাৎ বড় কোনো পরিবর্তন

বিজ্ঞাপন

ইমোশনাল ট্রিগার নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু উপায়

১. আপনার ইমোশনাল ট্রিগারের কারণ খুঁজে বের করুন

ইমোশনাল ট্রিগার শনাক্ত করার প্রথম ধাপ হলো নিজেকে সচেতন করে তোলা। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, কোন পরিস্থিতি বা ঘটনাগুলো আপনার মধ্যে শক্তিশালী মানসিক প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তোলে। পরবর্তী সময়ে সেগুলো নিয়ে কাজ করে নিজের ইমোশনাল ট্রিগারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবেন।

২. নিজের অনুভূতিকে মেনে নিন

নিজেকে জানার চেষ্টা করুন। আপনার আবেগ প্রকাশ করার জন্য কিছু সময় নিন। অতীতের সঙ্গে বর্তমানকে তুলনা করে নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করবেন না। অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানের সঙ্গে চলুন। নিজের প্রতি সদয় হোন। কেননা মানসিক ট্রিগারগুলো প্রায়ই আমাদের দেহে শারীরিক সংবেদনশীলতা হিসেবে প্রকাশ পায়। আপনি যখন একটি ট্রিগারের সম্মুখীন হন, তখন যেকোনো শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দিন।

বিজ্ঞাপন

৩. বিরতি নিন

আপনি যখন ট্রিগার অনুভব করছেন, তখনই প্রতিক্রিয়া জানানো ঠিক না। আপনার যেকোনো মানসিক প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য বা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সময় নিন। এমনকি যদি আপনি পরিস্থিতি থেকে পুরোপুরি সরে যেতে না পারেন, তবে সেই সময়টাতে অন্য কিছু করুন। যেমন গভীর শ্বাস নেওয়া যেতে পারে। এটি যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় করতে পারবেন।

৪. চিন্তাভাবনা আর বিশ্লেষণ করুন

কোন বিষয়ে আমরা কী প্রতিক্রিয়া দেব, তা আমাদের বিশ্বাস আর চিন্তাভাবনার ওপর নির্ভরশীল। আপনি যখন একটি ট্রিগারের সম্মুখীন হন, তখন আপনার চিন্তাগুলোর দিকে খেয়াল করুন। আপনার ভাবনা কি যুক্তিবাদী আর লক্ষ্য অনুযায়ী চলছে, নাকি নেতিবাচকতা আর অহেতুক আত্মসমালোচনার দিকে ঝুঁকছে? আপনার মানসিক ট্রিগারে অবদান রাখতে পারে, এমন কোনো নেতিবাচক বিশ্বাসকে ইতিবাচক বিশ্বাসে রূপ দিতে চেষ্টা করুন।

৫. মাইন্ডফুলনেস আর মেডিটেশন অনুশীলন করুন

মাইন্ডফুলনেস অনুশীলনেরর মাধ্যমে আপনি আপনার মানসিক ট্রিগারকে নিয়ন্ত্রণে করতে পারবেন। এ ছাড়া ব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন, যা আপনার নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রবণতা দূর করবে। এতে আপনার চিন্তাভাবনা আর আবেগগুলো পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা বাড়ে। এর পাশাপাশি শান্তি ও স্বচ্ছতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।

৬. সাহায্য নিন

মানসিক ট্রিগারগুলো অতিক্রম করা একটি জটিল কাজ। বিশ্বস্ত বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা প্রয়োজনে একজন থেরাপিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনি আপনার অভিজ্ঞতা ও আবেগ সম্পর্কে কথা বলতে পারেন, এমন মানুষ খুঁজে বের করুন। একজন ভালো থেরাপিস্টের পরামর্শ আপনাকে সঠিকভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করবে।  

৭.সীমানা নির্ধারণ করুন

অন্য লোকেরা আপনার প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী নন। তবে তাঁরা তাঁদের সেই ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়ী, যা আপনার আবেগকে ট্রিগার করতে পারে। অন্যদের ব্যাপারে আপনার সীমানা চিহ্নিত করুন। এমন সব মানুষ থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন, যাঁরা সব সময় নেতিবাচক আবেগকে ট্রিগার করেন। প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শিখুন, আপনার প্রয়োজন প্রকাশ করুন এবং স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক স্থাপন করুন, যা ট্রিগারিং পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা কমাতে পারে।

আমাদের জীবন উত্থান-পতনে পরিপূর্ণ এবং প্রায়ই আমরা স্থান, কাল, পাত্রভেদে সেসব পুরোনো আবেগ ও স্মৃতি আমাদের মনে বয়ে বেড়াই। আপনি আপনার ট্রিগারগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারলে এবং আপনি যদি ওপরে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো মনোযোগসহকারে অনুশীলন করেন, তবে আপনিও সঠিক উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শিখতে পারেন।

সূত্র: ভেরি ওয়েল মাইন্ড

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০২: ৩২
বিজ্ঞাপন