লড়তে হয় হতাশার বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে একেকজন বেছে নেন একেক কৌশল। তবে প্রধান হাতিয়ার হলো নিজের যত্ন নেওয়া, নিজের জন্য কিছু করা, নিজেকে ভালোবাসা। খেয়াল করলে দেখবেন, আপনি যখন নিজেকে সময় দেন, তখন হতাশা কিংবা বিষণ্নতা দূরে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হতাশার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাঁচটি কৌশল।
হতাশা থেকে মুক্তি পেতে ব্যায়াম বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ব্যায়াম যেকোনো মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১২০ মিনিট ব্যায়াম করুন। এটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করবে। শুধু তা–ই নয়, এটি অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের জন্য আপনাকে অনুপ্রেরণা দেবে। যদি ভারী কোনো ব্যায়াম সম্ভব না হয়, তবে হাঁটাহাঁটির চেষ্টা করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিনিট হাঁটা উচিত। এ ছাড়া চাইলে যোগব্যায়াম করা যায়। এগুলো আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শরীর ভালো রাখবে।
আপনি কী খাচ্ছেন তা শুধু আপনার শরীরকে প্রভাবিত করে না। এগুলো আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করে। তাই খাবারের তালিকার দিকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। হতাশার কারণে কিছু মানুষের ক্ষুধা বাড়তে পারে আবার কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বিপরীত ঘটনাও ঘটে। তাই বিষয়টি ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার। চিনি, চর্বি ও সোডিয়ামযুক্ত খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করতে ভুলবেন না।
হতাশা আমাদের তখনই গ্রাস করে, যখন আমরা একা থাকি। তাই চেষ্টা করুন সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে। সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চ্যুয়াল জগৎ থেকে বেরিয়ে আসুন। বাস্তব জগতে বন্ধু বানান। পরিবারকে সময় দিন। সবার সঙ্গে কথা বলুন। নিজের কথাগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং অন্যদের কথাও শুনুন। বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘুরতে যান।
কাউকে সাহায্য করেও নিজের হতাশা দূর করা সম্ভব। আপনি যখন কাউকে সাহায্য করেন, এটি আপনার মনের মধ্যে একধরনের প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দেবে। চেষ্টা করুন নিজের জীবনে দয়া, সহানুভূতি ও উদারতার মতো গুণগুলো অনুশীলন করার। বেশ কিছু গবেষণা বলছে, এ কাজগুলো মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও এন্ডোরফিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে, যা আপনার মেজাজ প্রভাবিত করতে পারে। খুব ছোট কাজের মাধ্যমে কিন্তু আপনি এগুলো করতে পারেন যেমন ধরুন কারও সঙ্গে হেসে কথা বলা, প্রশংসা করা, গাছ লাগানো, পরিবেশের দিকে খেয়াল রাখা, অন্যের বিপদে এগিয়ে যাওয়া, বৃদ্ধদের সাহায্য করা ইত্যাদি।
বর্তমান যুগে দেখা যায়, কেউ কোনো কিছু নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। চেষ্টা করুন সন্তুষ্ট থাকার। দেখা যায় অনেকে নিজের কাজ, জীবন এমনকি অবয়ব নিয়েও সন্তুষ্ট নয়। এসব আমাদের হতাশার দিকে ঠেলে দেয়, যা মোটেও ঠিক নয়। জীবনকে উন্নত করার চেষ্টা করুন, তবে নিজের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। নিজেকে ভালোবাসতে জানতে হবে। অন্যকে সাহায্য করার পাশাপাশি নিজেকেও সাহায্য করতে হবে। নিজের কোনো অর্জন কখনোই ছোট মনে করবেন না। নিজের অর্জনগুলো উদ্যাপন করুন। সর্বোপরি জীবনকে উদ্যাপন করুন। প্রতিটি মুহূর্ত উদ্যাপন করুন। দেখবেন আপনার মধ্যে আর কোনো হতাশা কাজ করছে না।