গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বা প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে নারকেলগাছ অহরহই আমাদের চোখে পড়ে। আমাদের দেশেও সর্বত্র সরু পাতাবিশিষ্ট নারকেলগাছ উঁকি দেয়। গ্রীষ্মের প্রখরতা থেকে একটু স্বস্তি আর তৃষ্ণা জুড়াতে ডাবের পানির জুড়ি নেই।
ন্যাচারাল ভিটামিন ও মিনারেলসসমৃদ্ধ ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। বলা হয়, এক কাপ ডাবের পানিতে মাঝারি সাইজের একটি কলার চেয়েও বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে। আর এই পটাশিয়াম রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং সার্বিকভাবে হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। তবে পটাশিয়ামের আধিক্য বেশি হওয়ার কারণে কিডনিসংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং গর্ভবতী নারীদের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেই নিয়মিত ডাবের পানি পান করা উচিত।
এ ছাড়া ডাবের পানিতে রয়েছে ৯৪ শতাংশ পানি, যা দেহের আর্দ্রতা বজায় রাখে, অতিরিক্ত গরমে দেহে পানির চাহিদা পূরণ করে। লো সুগার এবং কম পরিমাণে ক্যালরি থাকার কারণে ডায়াবেটিস, হজমের সমস্যাসহ পেটের নানা রোগের জন্য ডাবের পানি উত্তম পানীয়। আয়ুর্বেদিক মেডিসিনে ডাবের পানিকে হজম, মূত্রত্যাগ এবং বীর্য উৎপাদনের অন্যতম সহায়ক ওষুধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ডাবের পানি সুক্রোজ বা শোষণযোগ্য চিনি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ খুবই কম। এক কাপ ডাবের পানিতে আছে মাত্র ৪৫ ক্যালরি। তাই যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ পানীয়। এদিকে ডিটক্স ওয়াটার হিসেবে ডাবের পানি আজকাল একটু ব্যতিক্রমীভাবে আরও সব স্বাস্থ্যগুণসম্পন্ন উপকরণের সঙ্গে মিশিয়ে উপস্থাপিত হচ্ছে। সাধারণ ডাবের পানিতে কার্ব ও সব ধরনের ভিটামিন অত বেশি পরিমাণে থাকে না বলে বাজারে বেশ কিছু ব্র্যান্ড ভিটামিন সি, ডিসহ অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত করে এনার্জি ড্রিংক ফর্টিফাই করা ডাবের পানিকে হিসেবে প্রচলন করছে, যা ব্যায়ামের পরবর্তী পানীয় হিসেবেও বেশ পরিচিত বিশ্বব্যাপী।
• ডাবের পানিতে বিদ্যমান অ্যামিনো অ্যাসিড এবং হাই ইলেকট্রোলাইট; যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম ত্বকের আর্দ্রতা ও মসৃণতা ধরে রাখে।
• এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদানসমূহ ব্রণ দূর করে, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট সিস্টেম তারুণ্য ধরে রাখে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
• ত্বকের বিকাশে কোলাজেনের উৎপাদনে সাহায্য করে ডাবের পানি ও শাঁস।
ডাবের পানির তৈরি কিছু ডেজার্ট যেমন পুডিং বা জেলি খুবই জনপ্রিয় বর্তমান সময়ে। এ ছাড়া এই গরমে সাধারণ পানির চেয়ে একটু বেশি মিনারেলস ও ক্যালরিসম্পন্ন কোকোনাট ড্রিটক্স বা ইনফিউজড ওয়াটার সহজেই তৃষ্ণা দূর করে, তৃপ্তি জাগায়।
আবার অনেক সময় আপেল, আনারস, তরমুজ, স্ট্রবেরি জুসের সঙ্গে কিছুটা লেবুর রস, লবণ, চিনি, পুদিনা আর ঠান্ডা ঠান্ডা বরফকুচি দিয়ে তৈরি করা যায় ডাবের পানির কুলারস, চিলার্স, মহিতো ইত্যাদি।
যেভাবেই খাওয়া বা পান করা হোক, ডাবের পানি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রকৃতির অমূল্য দান এই ডাব রমজান মাসের রোজায় ইফতারে দিতে পারে সারা দিনের তৃষ্ণা আর ক্লান্তির পরে পরিপূর্ণ তৃপ্তি।