আমরা প্রত্যেকেই নিজেকে একজন সফল, সুখী মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। চাই ভালো চাকরি, বাড়ি-গাড়ি, সুন্দর একটি পরিবার। তবে জীবনে সফল হওয়ার জন্য আসলে কী কী কাজ করা জরুরি? পরীক্ষায় ভালো ফল, ভালো একটি চাকরি, আর?
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ে বিভিন্ন সময় এই সফলতার মূলমন্ত্র খোঁজার প্রয়াসের সঙ্গে সম্পর্কিত নিবন্ধগুলো গুরুত্ব পায়। বর্তমান সময়ের যাপনবিশেষজ্ঞরা বলেন, যাপন-দক্ষতা আর সফট স্কিলসগুলোই জীবনের পথে আমাদের আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়, যদি সেগুলোকে আত্মস্থ করা যায়, জীবনভর অভ্যাসে পরিণত করা যায়। এবার এমনই ছোট ছোট কিছু কাজের কথা জেনে নেওয়া যাক।
একই দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের সঙ্গে মিশতে আমরা বরাবরই স্বস্তি পাই, তবে তা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। যেকোনো বিষয়কে যথাযথভাবে বিচার করতে চাইলে একেক জায়গার, একেক শ্রেণি বা পেশার, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করুন।
একজন যুক্তিশীল মানুষ নিজের সিদ্ধান্তকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখেন। এতে করে নিজের ভুলগুলো তাঁর চোখে পড়ে, যা পরবর্তী সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তাই দাম্ভিক বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়ার বদলে নিজেকে প্রশ্ন করতে শিখুন।
প্রতি মাসে নিজের জন্য কিংবা পরিবারের জন্য এমনভাবে বাজেট তৈরি করুন, যাতে আপনার সব মৌলিক প্রয়োজন আগে পূরণ হয় এবং আপনি অপূর্ণ অনুভব না করেন। এরপর সম্ভব হলে নিজের শখ পূরণের জন্য যতটুকু সম্ভব বাজেট রাখুন।
নিজের পূর্ণকালীন চাকরির পাশাপাশি টুকটাক কিছু টাকা উপার্জনের চেষ্টা করুন। এই উপার্জিত অর্থ মাসিক খরচে ব্যয় না করে আলাদা অ্যাকাউন্টে জমা করুন। নিজের নতুন যেকোনো স্কিল গড়ে তুলুন। হতে পারে তা কারিগরি বা প্রযুক্তিগত কোনো ট্রেনিং। প্রাথমিকভাবে ক্লান্তিকর মনে হলেও নতুন দক্ষতা তৈরিতে তা সাহায্য করবে।
খারাপ সময়ে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে কোনো একটি গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত থাকুন। তা হতে পারে শরীরচর্চা, ছবি আঁকা, নাচ, বইপড়া, রান্না কিংবা অন্য যেকোনো ভালো অভ্যাস। এতে রাগ, দুঃখ কিংবা হতাশাজনক পরিস্থিতিতে আপনি কোনো খারাপ কাজ, যেমন মাদক বা এমন কোনো দিকে ধাবিত হবেন না। আর মানসিক স্বাস্থ্যও থাকবে ভালো।
আমরা অনেক সময়ই শুধু ক্ষণিকের ভালো লাগার জন্য এমন অনেক জিনিস কিনে ফেলি, যা আমাদের আদতে কোনো কাজে আসবে না। এ ধরনের জিনিস আমাদের ঘরে অযথা জায়গা দখল করে ও ঝক্কি বাড়ায়। তাই মাসে অন্তত একবার পুরো বাসা পরিষ্কার করে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ফেলে দিন। এতে যেমন ঘরে গাদাগাদি ভাব আসবে না, একই সঙ্গে আপনার মাথা থেকে এসব গুছিয়ে রাখার চিন্তাও কমে যাবে।
ট্রেন্ডে গা না ভাসিয়ে নিজেকে চেনার চেষ্টা করুন। আপনার বন্ধু ডাক্তার বলেই যে আপনারও একই পেশায় যেতে হবে, কিংবা আপনার বোন গান ভালোবাসেন বলে আপনারও গান ভালোবাসতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। নিজের ভালো লাগা, খারাপ লাগাকে মূল্য দিন। আপনার কী পছন্দ, কোন জিনিসটি অপছন্দ, আপনি কোন বিষয়ে কিংবা কোন কাজে দক্ষ, আপনার জীবনে কোন জিনিসটিকে আপনি মূল্যবান মনে করেন—এসব বিষয় বোঝার চেষ্টা করুন। আর সময়ের সঙ্গে নিজের মধ্যে আসা পরিবর্তনগুলোকেও মেনে নিন।
আপনার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করুন। নিজের মানসিকতা এমনভাবে গড়ে তুলুন, যা আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে। আমরা দিনের অনেকখানি সময় নিজের সঙ্গে মনে মনে কথা বলে কাটাই। এই কথা কিংবা চিন্তাগুলো আমাদের কার্যকলাপকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই নিজের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করুন।
জীবনের প্রতিটি কাজ মন দিয়ে করুন। এতে সব পদক্ষেপের ঠিক-ভুল বিবেচনা করে নিতে পারবেন। খামখেয়ালিভাবে কিংবা চিন্তাভাবনা ছাড়া কাজ করার অভ্যাস আমাদের দিশাহীন করে তোলে। আপনি পৃথিবীর চোখে নিজেকে যেভাবে দেখতে চান, নিজের কাছেও নিজেকে সেভাবেই তুলে ধরুন।
নিজের করা ভুলগুলোকে মাথায় রেখে যতবার ইচ্ছা নতুন করে কাজ শুরু করুন। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে নিজেকে বারবার দোষারোপ করতে মন চাইবে। এ ক্ষেত্রে নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করুন। এতে আপনি হালকা অনুভব করবেন এবং নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার শক্তি পাবেন।
মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে কেউই নিখুঁত নয়। সবার নিজস্ব কিছু খুঁত, কষ্ট আর ভুল রয়েছে। বাইরে থেকে সফল এবং সুখী মনে হলেও ভেতরে অনেকেই সুখী নন। তাই পৃথিবীর চোখে সফল হওয়ার আগে নিজের চোখে সফল হওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে পাছে লোকে যা–ই বলুক, আপনি নিজের জীবন নিয়ে স্বস্তিতে থাকবেন।
হিরো ইমেজ: সাইফুল ইসলাম