কাছের মানুষ আসলে কে? কখন কাকে আপনি কাছের মানুষ বলবেন। যে আসলে আপনাকে বোঝে, আপনার কথা ভাবে, যেকোনো পরিস্থিতি বা সময়ে আপনার পাশে থাকে, সে–ই তো কাছের মানুষ। তিনি হতে পারে আপনার খুব ভালো বন্ধু, সহকর্মী বা জীবনের পথে হঠাৎ পড়ে পাওয়া, ঘটনাচক্রে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া কোনো মানুষ। একসময় দেখা যায়, তাঁকে ছাড়া আপনি আর থাকতে পারছেন না। খুব কষ্ট হচ্ছে তিনি আপনাকে গুরুত্ব, সময় বা ভালোবাসার অনুভব না দিলে। একটা সময় দেখবেন, তিনি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। আপনি যেন তাঁর ওপরে ভয়ংকর রকমের নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছেন। আর এ রকম সময়েই জেনে অথবা না জেনে আপনার কাছের মানুষেরাই আপনার মনোবল ভেঙে দিতে পারেন তাঁদের কথা, কাজ ও আচরণের মাধ্যমে।
১. আপনাকে প্রচণ্ড অপরাধবোধে ভোগানো
সরাসরি মুখে বলে তো বটেই, অনেক সময় কারও আচরণেই এমন কিছু থাকে যে আপনি সারাক্ষণ অপরাধবোধে ভুগবেন। নিজেদের সমস্যা নিয়েই তাঁরা আসবেন আপনার কাছে বা তাঁদের আচরণেই সমস্যা আছে। অথচ দিন শেষে আপনার মনে হবে দোষ আপনারই। বলবেন, আমার জায়গায় থাকলে বুঝতে অথবা আমার কী যাচ্ছে, তা আমিই জানি ইত্যাদি।
২. নেতিবাচকতায় পরিপূর্ণ তিনি
আপনি যা–ই বলেন, যা–ই করেন কিছু একটা নেতিবাচক কথা আসবেই তাঁর তরফ থেকে। শুধু আপনি নন, আসলে সব বিষয়েই তাঁরা নেতিবাচক ধারণায় পরিপূর্ণ। আপনার অনেক ভালোর মধ্যে এতটুকু মন্দ পেলে তাঁরা সেটা নিয়েই থাকেন। আর বড় বিষয় হলো অনেক সময় এই পুরো বিষয়টিকে তাঁরা কৌতুক বলে উড়িয়ে দেন। আপনার শারীরিক বৈশিষ্ট্য হোক বা কোনো দুর্বলতা—বলতে ছাড়বেন না তাঁরা।
৩. অভিযোগের পাহাড়
আপনি কোনো কিছু করেই তাঁদের খুশি করতে পারবেন না। পৃথিবীর সবকিছু নিয়েই তাঁদের অভিযোগের শেষ নেই। আর আপনার সঙ্গে থাকলে তিনি আপনার আর দুনিয়ার তাবৎ জিনিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেই যেতে থাকবেন। এই অভিযোগের ভাগাড়ের দায়িত্ব পালন করার কোনোই দায় নেই আপনার। আর অভিযোগ শুনতে শুনতে একসময় আপনারও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে।
৪. আপনার প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই
আপনার ভালো লাগা, খারাপ লাগা, চাওয়া বা পাওয়া কোনো কিছুর প্রতিই তাঁদের শ্রদ্ধাবোধ নেই। আপনাকে তুচ্ছ হেয়প্রতিপন্ন করবে তাঁর প্রতিটি আচরণ, কথা ও কাজ। আর আপনি সেটি তাঁকে বললেও তাঁর কিছুই যায়–আসে না। তিনি শুধু নিজের কথাই ভাববেন, নিজে যা চান তা–ই করবেন। আদায়ও করবেন সবকিছু আপনার থেকে নিজের চাওয়া অনুযায়ী।
৫. নিজেই ভিকটিম সাজতে পারদর্শী তিনি
যাঁরই দোষ হোক বা পরিস্থিতি যেমনই হোক, তিনিই ভিকটিম। তাঁরই যত কষ্ট, যত দুঃখ, যত যুদ্ধ। তাঁকেই সবাই কষ্ট দেন, তাঁকে কেউ বোঝেন না ইত্যাদি। এ তালিকা শেষ হওয়ার নয়। আপনি নিজে তাঁর ওপর অভিমান নিয়ে যদি যান, তিনি আপনাকে শেষ পর্যন্ত বুঝিয়ে ছাড়বেন যে তিনিই ভিকটিম। আপনার চোখের সামনেই আপনার আবেগগুলো একেবারে বাতিলের খাতায় চলে যাবে।
৬. আপনার নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে মনে
আপনিই কি তবে যথেষ্ট নন? আপনার মধ্যেই কোনো কমতি বা গলদ আছে? এই ভাবতে ভাবতে আপনি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবেন। নিজেকে মনে হবে নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর। আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারবেন না আপনি। মনে হবে আমি যদি যোগ্য হতাম, তবে আমার সঙ্গে এমন আচরণ করা হতো না। নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন আপনি একটু একটু করে।
মনে রাখতে হবে, এমন কাছের মানুষদের যত দূরে রাখা যায়, ততই ভালো। হয়তো আপনার খুব কষ্ট হবে তাঁদেরকে ছেড়ে থাকতে। হয়তো আপনি ভালো থাকবেন না। তবুও এভাবে ভাঙা মনোবল নিয়ে বেঁচে থাকার মানে নেই।
তথ্যসূত্র: থট ক্যাটালগ
ছবি: পেকজেলস ডট কম