বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী সাফা কবিরকে তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন আইকন বলা যায়। আবার তাঁর ছোটবেলার বন্ধু, দেশের মেধাবী ফ্যাশন ডিজাইনার সাগুফতা ওসমান তাঁর ডিজাইনার লেবেল বাটারফ্লাই বাই সাগুফতার চমকপ্রদ সব সংগ্রহের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই দেশের ফ্যাশনজগতে নিজেকে চিনিয়েছেন ভালোভাবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রিয় বন্ধু সাগুফতার পোশাকেই দেখা যায় সাফাকে যেকোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে। সাফার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরিতে সেই স্কুলজীবনের বন্ধুত্ব এখন নতুন রূপ পেয়েছে। আবার সাগুফতার সৃজন জীবন্ত হয়ে উঠেছে, সবার কাছে পৌঁছে গেছে বন্ধু সাফার অনবদ্য পরিবেশনায়। দেশের ফ্যাশনজগতের এই অনন্য বন্ধুত্ব নিঃসন্দেহে উদ্যাপনের দাবি রাখে আজকের বন্ধু দিবসে।
গল্পে গল্পে জানা গেল, সাফা কবির আর সাগুফতা ওসমান—দুজনের পরিচয় হয় বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ার সময়ে। সাফা ছিলেন সাগুফতার জুনিয়র। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে দুজনার সখ্য গড়ে ওঠে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁরা একসঙ্গে নাচতেন। পরিচয় হওয়ার পর নাচ শেখার জন্য সাফা প্রায়ই সাগুফতার বাসায় যেতেন। এভাবেই দুজনের বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে।
সাগুফতার ব্যাপারে সাফা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি, কোনো সিনিয়র তাঁর জুনিয়রকে এত সুন্দর করে কাছে টেনে নিতে পারে। ছোটবেলায় সে আমাদের “ক্রাশ” ছিল। আমরা সবাই তাঁর মতো হতে চাইতাম।’
সাফা আর সাগুফতার স্বতঃস্ফূর্ত স্মৃতিচারণা থেকে এক মজার তথ্য জানা গেল। সাগুফতাই নাকি সাফাকে মেকআপ করা শিখিয়েছেন। সাফা বলেন, ‘সাগুফতা ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশন, স্টাইল ও লুক নিয়ে বেশ নিরীক্ষা করত।’ একবার সাগুফতা সাফার নাকে ছোট কালো পাথর লাগিয়ে দিয়েছিলেন নাকফুলের জায়গায়। বলাই বাহুল্য সাফার নাকে ছিদ্র ছিল না, কিন্তু লুকটি সাফার এত ভালো লেগেছিল যে তিনি বারবার আঠা দিয়ে সেঁটে পাথরটি পরতেন নাকে।
আরও জানা গেল, ছোটবেলায় তাঁরা জন্মদিনে থিম পার্টি করতেন, আর সেই থিম অনুযায়ী সবাই সেজেগুজে আসতেন। গল্পের ধারাবাহিকতায় সাগুফতা ওসমান বলেন, স্কুলে থাকতেই তিনি নিজের পোশাক নিজে ডিজাইন করতেন। ব্যতিক্রমধর্মী ডিজাইনের কারণে এসব পোশাক তাঁর আত্মীয় ও বন্ধুমহলে বেশ প্রশংসা পেত।
২০১১ সালে ঈদের সালামির টাকা জমিয়ে পাঁচটি টপ বানান সাগুফতা। এরপর বাসার ছাদে বন্ধুদের নিয়ে ফটোশুট করেন। সাফা কবির সব সময়ই সাগুফতা ওসমানের মডেল হতেন। সেখান থেকেই এক পা দুই পা করে শুরু হয় সাফা কবিরের সঙ্গে বাটারফ্লাই বাই সাগুফতার যাত্রা।
অন্যদিকে সাফার শুরু অভিনয় দিয়ে। ২০১৩ সালে ‘অ্যাট এইটটিন: অল টাইম দৌড়ের ওপর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। এরপর অবশ্য ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি আসলে কী করবেন। তখন তিনি মডেলিং করেন। ওই সময় সাগুফতা ওসমানের ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাটারফ্লাই বাই সাগুফতা ওসমানের মডেল হয়েছেন বন্ধু সাফা। এরপর ধীরে ধীরে আবার অভিনয়ে ফিরে আসেন আর জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠেন তিনি।
সাফা কবিরের ফ্যাশন আইকন হয়ে ওঠা আর সাগুফতা ওসমানের ডিজাইনার লেবেলের বিকাশ লাভ করা, এই পথচলায় সাফা ও সাগুফতা, দুজন দুজনার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে আছেন। বন্ধু সাগুফতার সাফল্যে গর্বিত সাফার কথায় শোনা গেল তৃপ্তির সুর। বললেন, ‘সেই ছাদ থেকে ফটোশুট করার জার্নি পার হয়ে বাটারফ্লাই বাই সাগুফতা এখন একটা স্বনামধন্য ফ্যাশন ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এ জন্য আমি ওকে নিয়ে বেশ গর্বিত বোধ করি।’
এই পর্যায়ে সাফার ব্যাপারেও একইভাবে সাগুফতা বলেন, ‘আমি কখনো চিন্তাই করিনি, সে এত বড় একজন অভিনেত্রী হবে। এমনিই আমরা সাফাকে বলতাম, তুমি এত নাটক করে কেন কথা বল? আসলে ও ছোটবেলায় অনেক কিউট ছিল, সবার আদরের ছিল। এভাবে আদুরে ভঙ্গিমায়ই কথা বলত।’ আর সেই আদর যেন সাগুফতার কথাতেই ঝরে পড়ছিল।
বলা যায়, সাফা কবির ও সাগুফতা ওসমান দুজন একে অপরকে বিকশিত করেছেন। সাফার ফ্যাশন ও স্টাইলিংয়ে ছোটবেলা থেকেই বেশ বড় ভূমিকা রেখেছেন সাগুফতা। আর এখন কোনো বড় ইভেন্ট হলেই সাফা সাগুফতার ডিজাইন করা পোশাক পরেন। দুজনের সমান প্রচেষ্টায় এক অনন্য ফ্যাশনেবল লুক তৈরি হয়। যেমন গত বছর অনুষ্ঠিত মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের কথাই ধরা যাক। সাফা সেদিন পরেছিলেন লাল ও মেরুন রঙের সমন্বয়ে চোখধাঁধানো কেপ-গাউন। তাঁর সেই লুক সবাইকে মুগ্ধ করেছিল।
সাগুফতার কাছে জানা গেল সেই লুকের পেছনের কাহিনি। সাগুফতা ওসমান বলেন, ‘কোনো স্পেশাল ইভেন্ট হলেই সাফা আমার কাছে আসে। আমরা দুজন মিলে আলোচনা করি। ওর আইডিয়া সাফা শেয়ার করে, আমি আমারটা বলি। এরপর দুজন মিলে একটা সমঝোতায় আসি। কারণ, আমাদের চিন্তাভাবনা অনেক মিলে যায়।’
সাগুফতার কথায়ই জানা গেল, গত বছর তাঁকে সাফা বলেন যে তিনি লাল কিছু একটা পরতে চান। একদম গাঢ় লাল কিছু, যাতে অনেক ফ্রিঞ্জ থাকবে। সাফা কবির বলেন, ‘আমি ব্যতিক্রমী ভাবেরই কিছু পরতে চাচ্ছিলাম। এক কথায় ফিউশনধর্মী। তখন সাগুফতা আমাকে কেপ পরার সাজেশন দেয়, যেটা পুরো দৈর্ঘ্যের হবে।’ এভাবেই তাঁরা দুজন মিলে টিমওয়ার্ক করে এক-একটি লুক তৈরি করে আসছেন।
সাফার ফ্যাশন স্টেটমেন্টে সাগুফতার যেমন অবদান আছে, তেমনই সাগুফতার বাটারফ্লাই গড়ে ওঠার পেছনেও সাফার অবদান কোনো অংশেই কম নয়। দুজন যখন একই সঙ্গে সময় কাটান, তখন তাঁদের আড্ডার অনেক বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হলো ‘নতুন কি ডিজাইন হতে পারে’। সাফাও সাগুফতাকে তাঁর অনেক আইডিয়া দিয়ে সাহায্য করেন। প্রিয় বন্ধু সাফার ব্যাপারে সাগুফতা ওসমান বলেন, ‘আমার কখনো মনে হয়নি সে একজন অভিনেত্রী বা মডেল। সে আমার কাছে সব সময় শুধুই “সাফা”।’
এই নিয়ে সাফা বলেন, ‘আমি ওর সঙ্গে একমত। আমি কখনো সাগুফতাকে শুধু ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে দেখিনি। আমি মডেল বা অভিনেত্রী দেখে সাগুফতা কখনো ভাবেনি আমি ওর ডিজাইনের মুখ বা মিউজ হব। আমরা একসঙ্গেই বড় হয়েছি। শুরু থেকে আমরা একসঙ্গেই ছিলাম।’ সাফার স্মিতহাস্য সমর্থন পেয়ে সাগুফতা অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়েই বলেন, ‘আমি আশা করি, সামনে যত দিন যাবে, আমরা একসঙ্গেই থাকব।’