অটিস্টিক শিশুদের মা-বাবাকে যে সাতটি কথা বলবেন না
শেয়ার করুন
ফলো করুন

যেদিন থেকে কেউ এক বিশেষ শিশুর অভিভাবক হন, তখন থেকেই তাঁর প্রতিটা দিন আর কখনো আগের মতো হবে না। রুটিন হবে অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এর মধ্যে ছোটখাটো বিষয় আপনাকে ট্রিগার করতে পারে অভিভাবক হিসেবে, যেটা আপনি আগে হয়তো ভাবতেই পারেননি। অনেক সময় মানুষ মনে করেন, তাঁরা ক্ষতিকর এমন কিছু বলছেন না। কিন্তু অনায়াসে অবলীলায় বলে ফেলেন আর এটাই বুঝে উঠতে পারেন না যে তাঁরা কতটা অসংবেদনশীল কথা বলেছেন। এবার এমন কিছু কথা জেনে নিই, যা প্রতিনিয়ত একজন অটিস্টিক শিশুর বাবা-মাকে শুনতে হয়, অথচ তা একেবারেই বলা উচিত নয়।


১. তাদের বয়স অনুযায়ী এই আচরণ তো স্বাভাবিক

যেসব অভিভাবকের অটিজমে আক্রান্ত সন্তান আছে, তাঁরা রোজ দেখেন তাঁদের সন্তানদের লড়াই করতে। বহিরাগত হিসেবে আপনার মনে হতেই পারে যে এই আচরণ খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা দিয়ে একটা দিন আসলে কেমন যাচ্ছে, সেটা নির্ধারণ করা যায় না।

২. খুব খারাপ লাগছে আপনার জন্য

অটিজমে আক্রান্ত সন্তান থাকার জন্য কাউকে প্রকাশ্যে করুণা দেখানো বা এটা বলা সমীচীন নয়, আহা, আপনার কী দুর্ভাগ্য, আপনার জন্য খারাপ লাগছে। এতে মনে হতে পারে যে শিশুটির অটিজম থাকাটা খুবই খারাপ একটি বিষয় এবং এতে শিশুর বাবা-মা নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন। বরং বলার চেষ্টা করুন আমি বুঝতে পারছি যে এটা কতটা কষ্টসাধ্য আর কঠিন আপনাদের জন্য।

বিজ্ঞাপন

৩. আমি জানি সব, কারণ আমি এমন একজনকে চিনি, যার অটিজম আছে।

অটিজম একটা ডিজঅর্ডার, যেটা অনেকের কাছেই চেনা। কিন্তু একজন অটিজমে আক্রান্ত মানুষকে জানা মানে আপনি কখনোই পুরো স্পেক্ট্রামের মানুষগুলোকে জেনে ফেলেছেন ব্যাপারটা এমন নয়। প্রত্যেকের ধরন আলাদা, স্পেক্ট্রাম আলাদা। তাই বলুন আমি একজনকে চিনি, যার অটিজম আছে, তাকে এভাবে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। তোমার বাচ্চাকে কীভাবে এফেক্ট করেছে অটিজম?


৪. অটিজম এখন খুবই কমন।

এখনকার সব বড় ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে অটিজম একটা ট্রেন্ড। আগে এটা কম দেখা যেত, মানে নির্ণয় কম হতো। অটিজম নিয়ে সবাই সচেতন এখন। যেখানে ২০০০ সালে প্রতি ১৫০ জনে ১ জন অটিজমে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত ছিল, এখন তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ জনে ১ জন। প্রত্যেক শিশুর সঠিক লেবেল প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে, যার কারণে তার জন্য উপযোগী থেরাপির ব্যবস্থা করতে হয়।

বিজ্ঞাপন

৫. আপনি কি নিশ্চিত ওর অটিজম আছে?

অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার নির্ণয় খুব সহজ কোনো বিষয় নয় কিংবা সহজলভ্য কোনো রিপোর্ট নয়। এটা নির্ণয়ে যেমন লাইসেন্সধারী প্রফেশনাল প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন সময়সাপেক্ষ টেস্ট আর পর্যবেক্ষণ। তাই এই রোগের ডায়াগনোসিসকে প্রশ্ন করে আপনি শুধু শিশুর অভিভাবককেই অপমান করছেন না, বরং আপনি এই প্রফেশনালদের কাজকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। বরং আপনি শিশুটির ডায়াগনোসিস প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চান, অভিভাবককে সুযোগ দিন তাঁর সন্তানের কীভাবে অটিজম ধরা পড়ল, সেটা আপনাকে ব্যাখ্যা করার।


৬. সব খাওয়াতে শেখালে ও এমন খুঁতখুঁতে হতো না

একটা মানুষের অটিজম থাকুক আর না থাকুক, তার ক্ষুধা লাগবেই। সাধারণ মানুষ খাবারটা দেখতে কেমন যেন কিংবা টেক্সচারটা ভিন্ন এসব ভেবে খাওয়া বন্ধ করে না। অটিস্টিক শিশুদের খাবারের প্রতি অনীহা সব সময় এই কারণে হয় না যে খাবারের স্বাদ তাদের পছন্দ হচ্ছে না। বরং খাবারটার রং, খাবারের আকার কিংবা স্পর্শ করলে খাবারের কি টেক্সচার অনুভূত হচ্ছে, এটাই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যাদের বেড়ে ওঠার গতিতে মন্থরতা আছে, তাদের একেকজনকে একেকভাবে এই খাদ্যাভ্যাস প্রভাবিত করে এবং একেকজনের সেন্সরি ইস্যু একেক রকম হয়ে দাঁড়ায়। এমন শিশুর অভিভাবককে বরং জিজ্ঞেস করুন তার অটিজমে আক্রান্ত শিশুটির প্রিয় খাবার কী এবং তাদের জন্য এই ব্যাপার সহজ করে তুলুন।

৭. ওকে দেখে তো অটিস্টিক লাগছে না

সাধারণ মানুষের ধারণা অনুযায়ী অটিজমে আক্রান্ত শিশু হাত নাড়াতে থাকবে, মুখ দিয়ে আজব সব শব্দ করবে এমন কিছু। হতে পারে কিছু অটিস্টিক মানুষের মধ্যে এই লক্ষণগুলো বিদ্যমান। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সবাই এমনই করে। কাউকে দেখে আপনি মত দিতে পারেন না যে সে অটিস্টিক বা অটিস্টিক নয়। এতে শিশুর বাবা-মায়ের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্যসূত্র: ভেরি ওয়েল ফিট

ছবি: পেকজেলস ডট কম, আন্সপ্ল্যাশ ডট কম

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন