প্রিয় মানুষটির বুকে মাথা রাখলেই হৃৎস্পন্দনের মোর্স কোড অস্ফুট ভাষায় শুধু বলতে থাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি। দিন শেষে বাড়ি ফিরে আপনার চেয়েও আপন জীবনসঙ্গীর আলিঙ্গনে মেলে পরম নির্ভরতা। জীবনকে খুব বেশি সুন্দর মনে হয়, যখন ছোট ছোট হাত আগলে ধরে অনিঃশেষ কিচিরমিচিরসহ।
আবার লোমশ আর চারপেয়ে আদুরে বন্ধুরা যখন হুটোপুটি করে স্পর্শের আদর খোঁজে, সে অনুভূতির বর্ণনা দেওয়া বড়ই দুঃসাধ্য। জড়িয়ে ধরলেই মনপ্রাণ ভরিয়ে দেওয়া মায়ের গায়ের মিষ্টি গন্ধ মানেই আদরের মহাসমুদ্র। সীমাহীন আদর থাকে মাথায় রাখা বাবার আশীর্বাদের হাতেও। এসব স্পর্শ আর আদর শুধু অনুভব করা যায়, বয়ানে প্রকাশ করা যায় না হাজার চেষ্টা করেও।
যুগে যুগে ভালোবাসার সংজ্ঞা খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়ে চলেছেন বিজ্ঞানী, দার্শনিক আর কবি-সাহিত্যিকেরা। আবার এদিকে আদর কেন ভালোবাসার সঙ্গে এতটা জড়িয়ে থাকে, সে প্রশ্নের উত্তরও তত্ত্বকথায় দেওয়া মুশকিল। তবে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভালো লাগার হরমোন বা ফিল-গুড হরমোন নিঃসরণ করার ক্ষেত্রে মায়া, মমতা আর ভালোবাসাপ্রসূত স্পর্শ অত্যন্ত কার্যকর। এদিকে স্পর্শ বা আদরের অনুপস্থিতি শৈশব, কৈশোর বা প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায়েও আমাদের গভীর মানসিক অবসাদ, ডিপ্রেশন, হতাশায় নিমজ্জিত করতে পারে। সাম্প্রতিক এক স্টাডি বলছে প্রিয়জনের আলিঙ্গনে ১০ সেকেন্ডে কেটে যায় দুশ্চিন্তা, হতাশা আর স্ট্রেস।
পরীক্ষায় দেখা গেছে প্যানিক অ্যাটাক, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, স্ট্রেসসহ বিভিন্ন রকমের সামাজিক ও আচরণগত সমস্যায় স্পর্শ ও জড়িয়ে ধরা অত্যন্ত কার্যকরভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। মাদকাসক্তির মতো ভয়ংকর সমস্যায়ও সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি আদর আর ভালোবাসা প্রয়োজন হয়। দিনের সব ক্লান্তি, জীবনের সব সমস্যা একপলকে মিলিয়ে যায় প্রিয় মানুষটির আদরে। ভালোবাসার শক্তি আসলে অশ্বক্ষমতায় মাপা যায় না।
ভালোবাসা কাকে বলে, অতশত না জানলেও আমরা সবাই কাউকে না কাউকে ভীষণ ভালোবাসি। ভালোবাসার মানুষটিকে না দেখলে কেমন একটা কষ্ট হয়। তার হাত ধরার জন্য নিজের আঙুলগুলো তৃষ্ণার্ত হয়, সঙ্গে অধীর হয় শরীর, মন আর সত্তা। আদর ছাড়া কি ভালোবাসা হয়?
আদরের পোষা প্রাণীটি গায়ে গা ঘষলে সে যে কী এক উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে দেহ-মনে! আমরা তার পেটে-পিঠে আদর করে দিলে সে–ও কেমন চোখ বুজে ফেলে, গড়াগড়ি দিয়ে প্রকাশ করে নিঃশর্ত ভালোবাসা।
শিশুর আধো আধো বোল আর আলাভোলা হাসিও সেই ভালোবাসায় টইটম্বুর। কোলে নিতে ইচ্ছা করে, আদর করতে ইচ্ছা করে। মন চায় বুকে জড়িয়ে নিতে। বাবা-মায়ের ভালোবাসা কালের আবর্তে রূপ বদলাতে থাকে জীবনচক্রের পর্যায় ধরে। কিন্তু মা–বাবার ভালোবাসাময় স্পর্শের আদরের তুলনা আর কোথাও নেই।
ভাই-বোনের আদরে জড়িয়ে থাকে গভীর ভালোবাসা। আদর থাকে কাঁধে রাখা প্রিয় বন্ধুর হাতে, অগ্রজ বা অনুজসম দীর্ঘদিনের সহকর্মীর হাতের স্পর্শেও। শুধু বলে বা লিখে নয়, সবার জীবনে আদরে জড়িয়ে থাকুক ভালোবাসা। উছলে উঠুক জীবনপাত্র।
তথ্যসূত্র: ভেরিওয়েলমাইন্ড, মাইন্ডবডিগ্রিন, বিগলাইফজার্নাল, উইমেন্সহেলথ
ছবি: পেকজেলস ডট কম