বদমেজাজি মানুষ শুধু নিজেই অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকেন তা নয়, এ স্বভাবের মানুষের চারপাশে অন্যরাও মানসিক কষ্ট, বিরক্তি ও অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকেন। এর কারণে পরবর্তী সময়ে দাম্পত্য জীবন থেকে ভালোবাসা, হৃদ্যতা ও সুসম্পর্ক বিদায় নেয়। সব সময় ঝগড়াবিবাদ ও কলহ লেগে থাকে।
মনে রাখতে হবে, সামনের মানুষটি আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চান। সে জন্য গল্প কিংবা কোনো সমস্যার কথা শেয়ার করে থাকেন। সামনের ব্যক্তি যা-ই বলুন না কেন, কারও কথার মাঝখানে বারবার ফোড়ন কাটলে তিনি বিরক্ত হতে পারেন। এভাবে যারা বেশি কথা বলেন এবং অপরের কথার মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন, তাঁদের এ অভ্যাস অপরের অপছন্দের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য সামনের মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পরই নিজের বক্তব্য দেওয়া উচিত।
অবাক করা কথা হলেও সত্যি যে খুব ভালো হওয়াও অপরের অপছন্দের বড় কারণ হতে পারে। কেউ কোনো বিষয়ে খুব ভালো হয়ে থাকলে সেই মানুষের সামনে অনেকে নিজেকে খুব হীন ও ছোট মনে করেন। আর সেটা অনেকেই চান না। আরেকটি বিষয় হলো কেউ বেশি ভালো হলে লোকে তাঁকে অবিশ্বাস করেন। কারণ, সবাই তখন মনে মনে ভাবেন—এত ভালো মানুষ হতেই পারে না। আর তখনই তাঁর দোষ খোঁজার জন্য সবাই মরিয়া হয়ে ওঠেন। ফলে বেশি ভালো লোকেরা অন্যদের থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন।
বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার আগে কিংবা কোনো মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের শুরুতে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো তাঁকে বলে ফেলা উচিত নয়। কারণ, একজন মানুষ অপরকে জেনেবুঝে ওঠার আগেই এত ঘটনার বিবরণ শুনতে ভালো না–ও লাগতে পারে। অথবা অতিরিক্ত ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশ করলে তা দুর্বল ব্যক্তিত্বের পরিচয় হয়ে উঠতে পারে। তাই খুব কাছের কেউ না হলে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার না করা ভালো। কারণ, অপরের কাছ থেকে দীর্ঘ ও অপ্রয়োজনীয় কথা শুনতে অনেকে পছন্দ করেন না।
মনোযোগ আকর্ষণ করতে গিয়ে ‘আমি এই করেছি, ওই করেছি, অমুকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে—এমন প্রচারসুলভ প্রচেষ্টা অপরের অপছন্দের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার কারও সঙ্গে পরিচয়ের সময় দেখা যায়, অনেকে নিজের যাবতীয় গুণ উজাড় করে দিতে গিয়ে সামনের মানুষটির মৌখিক বাহবা পেলেও প্রকৃতপক্ষে হয়ে ওঠেন অপছন্দের মানুষ। অনেকে আবার অপরের কাছে নিজের উদারতার কথা কিংবা অন্য কাউকে সাহায্য করার মতো কৃতিত্ব দেখাতে চান। স্বভাবটি নিঃসন্দেহে অপরের অপছন্দের কারণগুলোর মধ্যে একটি। আবার সামনের মানুষকে যদি আমি মনে মনে অপছন্দ করি, তাহলে স্বাভাবিকভাবে তিনিও আমাকে অপছন্দ করবেন। অপছন্দের বিনিময়ে কেবল অপছন্দই পাওয়া যায়। তাই কারও পছন্দের মানুষ হতে হলে তাঁকে অন্তর থেকে পছন্দ করতে হবে।
অনেকেই আবেগ-অনুভূতি লুকানোর চেষ্টা করে থাকেন। মনে রাখতে হবে, আবেগ লুকানো আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয়। পরিস্থিতির প্রয়োজনে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, তবে আবেগ লুকানো কখনোই ভালো নয়।
অনেকে মুখে মুখে কারও বিষয়ে খুব ভালো বলে আড়ালে তাঁর সম্পর্কে রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন; এটি মানুষের খুব অপছন্দের একটি বিষয়। এ জন্য বিরক্তি এলেও তাঁকে সংযতভাবে মন্তব্য করা বা তাঁর ব্যাপারে স্পস্ট ধারণা প্রকাশ করা প্রয়োজন।