ফিকে হতে দেওয়া যাবে না সম্পর্কের রং
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আকর্ষণ
এটি সম্পর্কের প্রথম ধাপ। চাইলে এর নাম হানিমুন পর্বও দেওয়া যায়। এই সময়ে সবকিছুই  থাকে নতুন আর উত্তেজনায় ভরপুর। তাই যতটা সম্ভব একে অপরের কাছাকাছি থাকাটাও স্বাভাবিক। মন এই সময়ে এতটাই উচ্ছ্বসিত থাকে যে অনেক কিছুই আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কিনসে ইনস্টিটিউটের নিউরোসায়েন্টিস্ট ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হেলেন ফিশারের মতে, একটি সম্পর্কের প্রথম ধাপে সঙ্গীর সবকিছুই ক্ষমাযোগ্য বিবেচিত হয়ে থাকে।  

বিজ্ঞাপন

কৌতূহল
আকর্ষণ কিংবা মোহ কিছুটা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরের ধাপ শুরু হয়। কৌতূহলী মন তখন জানার চেষ্টা করে, সে সঙ্গী হিসেবে কেমন। এই সময়ে সঙ্গীর আসল রূপ প্রকাশ পেতে থাকে। আর আপনিও সিদ্ধান্তে আসবেন যে জীবনসঙ্গী হিসেবে এমন একজনকেই আপনি চেয়েছিলেন কি না। অপর পক্ষের ক্ষেত্রে একই ব্যাপার ঘটবে।

বিজ্ঞাপন

সংকট
প্রতিটি সম্পর্কের নিম্নমুখিতা রয়েছে। এমনকি প্রাথমিক পর্যায়েও এমন সময় আসে, যখন একটা দম্পতি আলাদা হয়ে যায়। উভয়েই এ সময় সম্পর্কের দুর্বলতা, পার্থক্য ও ত্রুটিগুলো লক্ষ করতে থাকেন। সম্পর্কে সংকট ও হতাশার সময় আসবেই, তবে শেখারও থাকে ইতিবাচক অনেক কিছু।

সম্পৃক্ততা
সম্পর্কের এই পর্যায় ‘সংকট’ নামক ঝড়-পরবর্তী শান্ত রূপ। সংকট মোকাবিলা করার পর সম্পৃক্ততা বাড়ে। একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার ও বোঝার এটা চূড়ান্ত সময়। সংকট থেকে শেখা অভিজ্ঞতা সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। এই ধাপে এসেই একজন মানুষ সিদ্ধান্ত নেন এর পরের ধাপে যাবেন কি না।

প্রতিশ্রুতি
ভবিষ্যতের জন্য একে অপরের মূল্যবোধ ও লক্ষ্য সম্পর্কে দৃঢ় বোঝাপড়াই হলো ‘প্রতিশ্রুতি’। সম্পর্কের এই ধাপ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘপথ চলার প্রস্তুতিও বটে। একে অপরের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্কের জন্য।

সম্পর্ক কখনো সহজ, কখনো জটিল। তবে এটা সম্পূর্ণই নির্ভর করে রসায়নের ওপর। একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।  


*যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গীর কথা শোনা, পাশাপাশি নিজের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলো স্পষ্টভাবে জানাতেও হবে। যেকোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া আপনার সঙ্গীর কাছ থেকে আসতেই পারে; সে জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকাটা জরুরি।


* সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিষ্কার সীমানা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে কী গ্রহণযোগ্য ও কী নয়, তা প্রতিষ্ঠা করা। সম্পর্ক থেকে নিজের কোনটা প্রয়োজন, সেটাও স্পষ্ট থাকা জরুরি। এসব বোঝাপড়া ভুল-বোঝাবুঝি ও দ্বন্দ্ব মেটাতে সহায়ক হবে।

* কৃতজ্ঞতা ও সৌজন্য প্রকাশ সম্পর্ককে শক্তিশালী ও দীর্ঘায়িত করে। এ জন্য যেকোনো কাজে সঙ্গীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। ইগো দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই; এমনকি অহংকারী হওয়ারও। বরং সঙ্গীর ছোট ছোট কাজের জন্য তাঁকে অনুপ্রাণিত করা শ্রেয়। পাশাপাশি নানা কারণে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকাটাও বাঞ্ছনীয়।

* সম্পর্কের জন্য ধৈর্য, নমনীয়তা ও বোঝাপড়ার প্রয়োজন। সঙ্গীর চাহিদা ও দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে আপস করতেও পিছপা হওয়া যাবে না।

* সম্পর্কে যেকোনো ধরনের জটিলতা কিংবা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতেই পারে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত বন্ধু, পরিজন বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে দ্বিধা করা যাবে না। বরং এই সহায়তা থেকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যেতে পারে। এমনকি সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার রসদ পাওয়া যেতে পারে।

* সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখতে নিজের যত্ন নেওয়া, নিজেকে সময় দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম, ধ্যান, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো—সবকিছুই থাকতে পারে এই ‘মি টাইম’-এ । নিজেকে রিচার্জ করতে পারলেই অন্যের মধ্যে ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। প্রয়োজনে দুজনের সম্মতিতে সম্পর্কে ছোট বিরতি নেওয়া যেতে পারে। সম্পর্কেও নিশ্বাসের প্রয়োজন হয়।

* দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য একসঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটানো অপরিহার্য। সারা দিনের কিংবা সপ্তাহের কাজের চাপে হয়তো সঙ্গীকে ঠিক করে সময় দেওয়া হয় না। তাই ছুটির দিনগুলোতে বা সময় পেলেই ‘কোয়ালিটি টাইম’ কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। হতে পারে সেটা নৈশভোজে, লং ড্রাইভ কিংবা মুভি ডেট। একে অপরকে সময় দিয়ে সম্পর্কের বন্ধন শক্তিশালী করে তোলা যায়।

ছবি: কে ক্র্যাফটের ভালোবাসা সংগ্রহ ‘এ টেল অব লাভ’ অ্যালবাম থেকে

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩: ০০
বিজ্ঞাপন