সমাজের একটি প্রচলিত ধারণা হলো, পুরুষেরা শুধু নারীদের রূপেই আকৃষ্ট হন। কিন্তু ধারণাটি পুরোপুরি সত্য নয়। যদি কেউ শুধু কারও রূপ দেখে আকৃষ্ট হয়েও থাকে, আর তারপর মনকে মন ছুঁয়ে না যায়, তবে মুগ্ধতা ধীরে ধীরে কেটে যেতে শুরু করে। ফলে সম্পর্ক স্থায়ী হয় না। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো, রূপের কোনো সংজ্ঞা হয় না। এদিকে সমাজের সৌন্দর্যনিক্তিতে যাকে নিখুঁত রূপ বলা হয়, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ে যেতে বাধ্য।
কিন্তু মানুষের স্বভাব, ভালোবাসা দিতে পারার ক্ষমতা আর মানবিক গুণের মতো বিষয়গুলো চিরস্থায়ী। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণামূলক প্রবন্ধে আকর্ষণের কেন্দ্রে রাখা হয়েছে এই মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে; শারীরিক সৌন্দর্যকে নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভালোবাসার মানুষটিকে সব সময় প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে, এমন সব মানবিক গুণ সম্পর্কে।
বলা হয়, কারও মধ্যে যদি রসবোধ কিংবা সেন্স অব হিউমার থাকে, তবে তাঁরা খুব সহজেই মানুষকে কাছে টানতে পারেন। কারণ, খুব কম মানুষই রয়েছেন, যাঁরা মন খুলে হাসতে পারেন বা কাউকে হাসাতে পারেন। সচরাচর এ বিষয়কে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তবে খেয়াল করলেই দেখা যাবে, এ ধরনের মানুষকেই সবাই বেশি পছন্দ করেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে, হাসতে ও মজার সময় কাটাতে চান। জিনিসটি অবচেতনেই যে কাউকে বরাবর অত্যন্ত আকৃষ্ট করে থাকে।
যখন কেউ জীবনের ছোট ছোট বিষয়ে খুশি হন, তখন তাঁর সঙ্গী একধরনের স্বস্তি পান। যদি আপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সঙ্গী আপনার জন্য যা করেন, তার প্রশংসা করতে পারেন, আপনার প্রতি বিশেষ একধরনের আকর্ষণ কাজ করবে তাঁর। সঙ্গী যদি আপনার জন্য ফুল নিয়ে আসেন, কাজের ফাঁকে বা সুখে-অসুখে আপনার খোঁজ নেন—এসব বিষয়ে আপনার খুশি হওয়া ও তা প্রকাশ করা তাঁকে আত্মতৃপ্তির অনুভূতি দেবে। এসব জিনিসই সঙ্গীকে বেশি আকৃষ্ট করে।
আপনি যত সুন্দরই হোন না কেন, এটি মূল্যহীন, যদি আপনার মধ্যে দয়া, মমতা ও সহমর্মিতার মতো মানবিক গুণগুলো না থাকে। আপনি যদি স্বভাবতই সবকিছুর প্রতি সদয় হন, তবে আপনার সঙ্গীও গভীর মমতা অনুভব করবেন আপনার জন্য। তা হতে পারে মানুষ কিংবা পশুপাখির জন্য মায়া। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঙ্গী ও তাঁর পরিবারের প্রতি সদয় থাকা। আপনি যখন তাঁকে পরম মমতায় আগলে রাখবেন আর তাঁর পরিবারের প্রতিও সদয় থাকবেন, সঙ্গীর আপনার প্রতি আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
সবাই সাধারণত তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ভালোবাসার মানুষটির একটি সাবলীল সম্পর্ক থাকুক—এটিই পছন্দ করেন। এর অর্থ এই নয় যে আপনাকে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে সব সময় ঘুরতে যেতে হবে কিংবা প্রতিদিন কথা বলতে হবে। তবে আপনারা যখন একসঙ্গে আড্ডা দেবেন, ভালোবাসার মানুষটিকে এমন অনুভব করতে দেবেন না যে আপনি তাঁর বন্ধুদের প্রতি বিরক্ত কিংবা তাঁদের পছন্দ করছেন না। এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত। তাই এ ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। তবে তাঁদের ব্যাপারে যেকোনো নেতিবাচক বা আপত্তিকর বিষয় চোখে পড়লে সঙ্গীকে সাবধান করাও আপনার দায়িত্ব।
স্বভাবজাতভাবে হাসিখুশি মানুষদের মধ্যে অন্যদের আকৃষ্ট করার একধরনের জাদুকরি ক্ষমতা থাকে। হাসিমুখের চেয়ে সুন্দর উপহার আর হতে পারে না। মনে রাখবেন, সঙ্গীর কাছে বারবার প্রাক্তনের কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করবেন না। এটি সংবেদনশীল বিষয়।
এই আধুনিক যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শক্ত করে সঙ্গীর হাত ধরে পাশে থাকতে পারা। কিন্তু তখনই সঙ্গী আপনার মধ্যে নিজেকে হারাবেন, হারিয়ে ভারমুক্ত হবেন, যখন আপনি তাঁকে পরিপূর্ণ আস্থা দেবেন যে আপনি সব অবস্থায় তাঁর পাশে আছেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে কিছু করতে পারুন কিংবা না-ই পারুন, সঙ্গীকে সবভাবে আশ্বস্ত করুন যে আপনি তাঁর পাশে আছেন। সঙ্গীর দুঃসময়ে ছায়া আর ঢাল হয়ে দাঁড়ালেই তো তাঁকে জয় করে নেওয়া যায়, নিজের করে পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র: ভেরিওয়েলমাইন্ড, সাইকোলজি টুডে, থটক্যাটালগ
ছবি: পূর্ণ দাস