স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাবা-ছেলের জিম রুটিন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আজকাল নগরীর জিমগুলোতে ভিড় জমানো তরুণদের দেখে মনে হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বেড়েছে সত্যিকার অর্থেই। তবে বাবারাই বা কেন বাদ যাবেন এই জিম রুটিন থেকে! বরং বাবা-ছেলে মিলেই দিনের একটি সময় বের করে সময় কাটানো যায় জিমে গিয়ে ঘাম ঝরিয়ে। এতে বাবার শারীরিক সুস্থতা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি তাঁর মনও থাকবে সতেজ। নিজের ছেলেমেয়েদের চেয়ে ভালো জিম পার্টনার আর হতেই পারে না।

নিজের ছেলেমেয়েদের চেয়ে ভালো জিম পার্টনার আর হতেই পারে না
নিজের ছেলেমেয়েদের চেয়ে ভালো জিম পার্টনার আর হতেই পারে না

মূলত করোনাকালেই শরীরকে ফিট রাখার প্রতি সববয়সীদের মধ্যেই একধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছে নতুন করে। করোনার পরে বাবা-মাদের শরীরের ফিটনেস ফেরাতে চিকিৎসকেরা পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন আর পর্যাপ্ত ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে নিয়ে ব্যায়াম সেভাবে আমাদের করা হয় না। তাই প্রায়ই সে অধ্যায় বাকি থেকে যায়। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, যেকোনো বয়সের জন্যই ব্যায়াম অত্যাবশ্যক।

বিজ্ঞাপন

বাবারা শুধু পার্কে হাঁটবেন আর টুকটাক ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম করবেন, এমন কোনো কথা নেই। কিছু নিয়ম ও পরামর্শ মেনে, ফিটনেস কোচ বা ইন্সট্রাক্টরের তত্ত্বাবধানে থেকে অনায়াসে জিম মাতাতে পারেন বাবারাও। তবে প্রথমেই চিকিৎসকের ছাড়পত্র লাগবে এর জন্য। বিশেষ করে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস বা এমন কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকলে জিম করা যাবে না। তারপরেও খুব বেশি ভারী ব্যায়াম না করলেও ট্রেডমিলে দৌড়ে বা সাইক্লিং করে খুব সুন্দর সময় কাটাতে পারেন বাবা-ছেলে মিলে।

কৈশোরে দূরত্বটা কমে গিয়ে জিম করতে করতে তৈরি হতে পারে দুজনের বন্ধুত্ব
কৈশোরে দূরত্বটা কমে গিয়ে জিম করতে করতে তৈরি হতে পারে দুজনের বন্ধুত্ব

বাবার জিম রুটিন তৈরি করতে হবে সাবধানে। আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে ব্যায়ামের সময় ও পরিশ্রমের পরিমাণ। যদি এমন হয় যে একসময় বেশ কায়িক পরিশ্রম করতেন বা ব্যায়াম করতেন, কিন্তু বহুদিন অভ্যাস নেই, তাহলে সাবধানতা দরকার। অনেকে আছেন যাঁরা কখনোই ব্যায়াম করা ছাড়েননি। তাঁদের জন্য জিম সংস্কৃতিতে ছেলের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে চলা সহজ হবে।

বিজ্ঞাপন

আবার একেবারেই অভিজ্ঞতা নেই এমন ক্ষেত্রে খেলাচ্ছলেও জিমে বেশি লোড নেওয়া যাবে না বাবার। সেদিকে ছেলেকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে পুরো ব্যাপারটির মধ্যে অন্যরকম আনন্দ থাকে। কারণ, এমনিতে হয়তো বাবার সঙ্গে কৈশোরে তৈরি হওয়া দূরত্বটা কাছে ঘেঁষতে দেয়নি; অথচ এখন জিম করতে গিয়ে দুজনের হচ্ছে নতুন করে বন্ধুত্ব।

বাবার জিম রুটিন তৈরি করতে হবে সাবধানে
বাবার জিম রুটিন তৈরি করতে হবে সাবধানে

প্রথমত গবেষণায় দেখা গেছে, বয়সের কারণে ক্ষয় হয়ে আসা পেশিগুলোকে ভালো রাখে, এমনকি পুনর্গঠনও করতে পারে রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং ঘরানার ব্যায়াম। স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রে সাবধানতা খুবই জরুরি। নয়তো আঘাত লাগতে পারে। এ ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতিই টেকসই রূপ পায়। আইসোমেট্রিক মুভমেন্ট আর অল্প গতির টেম্পো কার্যকর হতে পারে বাবার স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ে। সপ্তাহজুড়ে তিনটি রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং আর চার থেকে পাঁচটি ব্যায়ামের সেশন দিয়ে শুরু করা যায়।

জিম মানেই আমরা মনে করি, ডামবেল-বারবেল ভাঁজা। ওয়েট ট্রেনিং ছাড়া জিম সেশন অপূর্ণ থেকে যায় আসলে। এ ক্ষেত্রেও সাবধানে ধীরে ধীরে বেশি ভারী ওজনের দিকে যেতে হবে। সারা দেহের ব্যায়ামের পাশাপাশি হাতের বাইসেপ গঠনের মতো বডি বিল্ডিং স্টাইলও গুরুত্বপূর্ণ। তবে আর যা–ই হোক, কার্ডিও ব্যায়ামগুলো করতে হবে খুবই নিয়মিত। এতে রক্তনালি শিথিল হয়, হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া ভালো থাকে ও রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে।

ছেলের সঙ্গে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরালে স্ট্রেসও ঝরে সমানুপাতিক হারে
ছেলের সঙ্গে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরালে স্ট্রেসও ঝরে সমানুপাতিক হারে

ছেলের সঙ্গে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরালে স্ট্রেসও ঝরে সমানুপাতিক হারে। একে তো বিজ্ঞানীরা বলেন, ব্যায়ামে মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়। আবার দিনে বাবা-ছেলে বা বাবা-মেয়ের কোয়ালিটি টাইম কাটানোর এর চেয়ে দারুণ উপায় আর হতেই পারে না। জিম করা শেষ করে বাবা বিশ্রাম গ্রহণ করেছেন কি না, দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করছেন কি না, সঙ্গে সুষম খাদ্য খাচ্ছেন কি না—এসবও কিন্তু ছেলেমেয়েদেরই দেখতে হবে। জেনজি প্রজন্মের তরুণদের সঙ্গে এমন করে তাদের বাবারাও থাকুন স্টাইলিশ আর একদম ফিট।

তথ্যসূত্র: মেনজ হেলথ ম্যাগাজিন
মডেল: আমীর হাসান ও নিহাল মোফাচ্ছাল
ছবি: পূর্ণ দাস
লোকেশন ও জিম রুটিনবিষয়ক পরামর্শ: ইন শেপ জিম, কলাবাগান, ঢাকা

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ০৫: ০০
বিজ্ঞাপন