প্রাক্তনের অনলাইন জগৎ থেকে বেরিয়ে আসুন এভাবে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

'তোমাকে ডাকিনা প্রিয়
ডাকো না তুমি আমায়।
দূরত্ব বাড়ে যোগাযোগ নিভে যায়'

সূর্যের চারদিকে যেমন নিজের কক্ষপথ বা অরবিটে ঘুরতে থাকে গ্রহ, তেমনি আমরাও মাঝে মাঝে এককালের কাছের মানুষের অনলাইন জগতের বৃত্তে আটকা পড়ে যাই। আর ঘুরতে থাকি একইভাবে, নীরবে। হয়তো তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই। হয়তো তিনি আর ফোন করেন না, আপনিও না।

মেসেজ আদান–প্রদানও বন্ধ। তারপরেও হয়তো তিনি নীরবে আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বন্ধু তালিকায় রয়ে গেছেন। আনফ্রেন্ড করে দিলেও বারবার তার নামের সাজেশন আসে কমন বন্ধু আর এআইয়ের কল্যাণে।

বিজ্ঞাপন

আনফ্রেন্ড করে দিলেও কি আর আনফ্রেন্ড হয় মন থেকে! সচেতনভাবে অথবা অবচেতনেই তখন আমরা চাই অন্তত তাঁর অনলাইন উপস্থিতিটুকু থাকুক আমাদের জীবনে। আর আপনি তখন তাঁর মেসেঞ্জারের সবুজ বাতি, ফেসবুকের ছবি বা ইনস্টাগ্রামের রিলস খুঁজে বেড়ান। স্টোরি আপলোড করে অদ্ভুত এক অপেক্ষা করেন আপনি একা একা। তিনি হয়তো স্টোরি দেখেন, কিন্তু রিঅ্যাক্ট করেন না। এভাবেই আপনি তাঁর অনলাইন জগতে বাঁধা পড়ে যান।


কাউকে ছাড়ব বললেই এত সহজে ছাড়া যায় না। একই আকাশ বা একই চাঁদের আলোর মতো একই অনলাইন জগৎ দুজনকে জুড়ে রেখেছে—এই রকম এক অনুভূতি কাজ করে অনেক সময়। কিন্তু এই বন্ধন ছিঁড়তে না পারলে আপনি জীবনে আর এগোতে পারবেন না৷ যখন খুব বেশি মনে পড়ে তাঁকে,  তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল চেক করলে একধরনের স্বস্তি মেলে; যাকে ডোপামিন বুস্ট বলা যায়। কিন্তু এই ভালো লাগার অনুভব আসলে খুবই ক্ষণস্থায়ী। আপনি যখন দেখবেন, তিনি তাঁর জীবনে অন্য কারও সঙ্গে ভালো আছেন, ভালো সময় কাটাচ্ছেন, তখন নিজের অবস্থা নিয়ে আরও হতাশা ও বিষণ্নতা গ্রাস করবে আপনাকে। হীনম্মন্যতা তৈরি হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ তাই ক্ষত ভরানোর সময় নিজের ক্ষত নিজেই খুঁচিয়ে রক্তাক্ত হওয়ার মানে হয় না।

বিজ্ঞাপন

দিনে মাঝেমধ্যে প্রোফাইল চেক করা বা অনলাইনে আছেন কি না, দেখলে কী আর এমন হবে—এই ভাবনা আসাই স্বাভাবিক এ ক্ষেত্রে৷ কিন্তু প্রাক্তনের অনলাইন জগতের কক্ষপথে একাকী পরিভ্রমণের আছে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব। এগুলোর কথা ভালোভাবে জেনে নিয়ে তা অনুধাবন করলেই একমাত্র এমন আচরণ করা থেকে বিরত থাকা যাবে। আমাদের মানসিক অবস্থার ওপরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে যদি আমরা সারা দিন প্রাক্তনের অনলাইন উপস্থিতি খেয়াল করতে থাকি।

১. এমন অভ্যাস ধীরে ধীরে স্টকিংয়ের দিকে যেতে পারে

একই অনলাইন জগতে থাকার ফলে বারবার সেই মানুষের সবকিছু দেখার বিষয়টি এক অভ্যাসে পরিণত হয়ে যেতে পারে। আর এটি একধরনের নেশা বা অবসেশনের দিকে চলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তখন তিনি নিজে থেকে অনলাইনে যেটুকু তথ্য দিচ্ছেন সবার জন্য, তারচেয়ে আরও একটু বেশি জানার প্রবল আগ্রহ জাগে। মেসেজ বা ই–মেইল পাঠানো শুরু করবেন আপনি, তিনি না চাইলেও। হয়তো উপস্থিত হয়ে যাবেন তাঁর বিচরণক্ষেত্রে, যা তাঁর জন্য অস্বস্তির কারণ হবে। একসময় তিনি আপনাকে খুব সচেতনভাবে এড়িয়ে যাবেন বা অপমান করতে পারেন।

২. আপনি বুঝে উঠতে পারবেন না সম্পর্কের অবস্থান

আপনি কি তাঁর জন্য অপেক্ষা করবেন, নাকি এগিয়ে যাবেন জীবনের পথে? যদি ঘুম থেকে উঠেই হাতড়ে মুঠোফোন খুঁজে ঘুমঘুম চোখেই দেখতে হয় যে আপনার সেই মানুষ অনলাইনে আছেন কি না, তবে আপনি এক শিকলে বাঁধা পড়েছেন। তিনি হয়তো আর সবার মতোই আপনার প্রোফাইল পিকচারে লাইক দিলেন বা সাফল্য পেলে অভিনন্দন জানিয়ে কমেন্ট করলেন। কিন্তু আপনি ধরে নিলেন তা আরও একটু বেশি কিছু। অবাস্তব আশা আপনার হতাশা আরও বাড়াবে সামনের দিকে।

৩. আপনার মনে হতে পারে যে তিনি এখনো আপনাকে ভালোবাসেন

কনফার্মেশন বায়াস বলে একটি বিষয় আছে। এতে আপনি নিজের মতো করে একটি ধারণা করেন প্রথমে, তারপর তার সপক্ষে যা কিছু ঘটে, শুধু ওইটুকুই দেখতে পান। কিন্তু তার বাইরেও অনেক সত্য রয়ে যায় যা আপনি অবচেতনে এড়িয়ে যান। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে আপনার প্রাক্তনকে একই সময় অনলাইনে দেখলে ভাবতে পারেন যে তিনিও হয়তো চেক করছেন আপনার অনলাইন উপস্থিতি। তাঁর মন খারাপের সব স্ট্যটাসে নিজেকে দেখতে পাবেন আপনি। অথচ হয়তো তিনি নতুন বা পুরোনো কাউকে নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। আপনিই কেবল অনলাইন জগতের কক্ষপথে ঘুরছেন তাঁকে কেন্দ্র করে।

যা করতে হবে

এক কথায়, একদিন মনস্থির করে সব সুতা ছিঁড়ে ফেলুন। 'অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার ধরিয়া রাখার মত বিড়ম্বনা আর হয় না '। তিনি আপনার জন্য নন, কোনোদিনও ছিলেন না৷ তাই তিনি চলে গেছেন বা আপনাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। এই বিষয়গুলো অনুধাবন করে শক্ত হাতে কিছু বাটন টিপে বেরিয়ে আসুন প্রাক্তনের অনলাইনের জগৎ থেকে।

তথ্যসূত্র: থট ক্যাটালগ

ছবি: পেকজেলস ডট কম

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন