দীর্ঘ জীবন সবারই কাম্য। আর সেই জীবন যেন হয় সচল ও সুস্থ, সে চেষ্টা বিশ্বজুড়ে আমরা সবাই করি। আর এদিক থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপান অনেকটা এগিয়ে। সম্প্রতি সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে জাপানি পুষ্টিবিদ আশিকো মিয়াসিতা জানিয়েছেন দীর্ঘ জীবনের মূলমন্ত্র। এটা মূলত খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে তিনি মনে করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর নবতিপর মাতামহীর উদাহরণ দিয়েছেন।
মিয়াসিতা বলেন, জাপানে খাবারকে ওষুধের মতোই ভাবা হয় শরীর সুস্থ রাখতে। আর এ জন্যই আসলে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘায়ু জনগোষ্ঠীর বাস এ দেশেই। বর্তমানে এক লাখের কাছাকাছি শতবর্ষী মানুষের বাস সেখানে। যেসব খাবার এ দেশের এই সুস্থ ও দীর্ঘায়ু মানুষেরা সারা জীবন নিয়মিত খেয়ে আসছেন, সেগুলো এবার দেখে নেওয়া যাক।
জাপানি ভাষায় ইমো নামে পরিচিত এই মিষ্টি আলু। স্ন্যাক অথবা মিষ্টি খাবার হিসেবে জনপ্রিয় এখানে এটি। এতে জটিল শর্করা থাকায়, খেলে অনেকক্ষণ ক্ষুধা পায় না। আবার অ্যান্থোসায়ানিন গ্রুপের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় মিষ্টি আলু জরার প্রভাব কমায়। গবেষণায় এ–ও দেখা গেছে, মিষ্টি আলু ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের প্রকোপ কমাতে পারে।
জাপানে ফার্মেন্ট করা বা গাঁজানো খাবারের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এর মধ্যে জাপানি খাবারের রোজকার উপকরণ মিসো অন্যতম। সয়া ও অন্যান্য শস্যদানা গাঁজিয়ে মিসো বানানো হয়। গাঁজানো সয়াবিন ন্যাটোও খুব জনপ্রিয় এখানে। ফার্মেন্ট করা খাবারের প্রোবায়োটিক, লাইভ কালচারড ব্যাকটেরিয়া আর ইস্ট পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে, ইমিউন সিস্টেমকে করে শক্তিশালী। একটি নির্ভরযোগ্য গবেষণা বলে, যাঁরা নিয়মিত এমন ফার্মেন্টেড খাবার খান, তাঁদের অকালমৃত্যুর হার ১০ শতাংশ পর্যন্ত কম হয়।
ঢাউস আকারের ডাইকন মুলা খুবই জনপ্রিয় জাপানে। এই মুলা সর্দিকাশি থেকে দূরে রাখে আর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এই মুলা একটি খেলে দিনের ভিটামিন সির চাহিদা ১২৪ শতাংশ পূরণ হয়।
সুশি আর রামেনের মতো জনপ্রিয় জাপানি খাবারের কল্যাণে আমরা সবাই সি-উইড বা সামুদ্রিক শেওলা চিনি। এই খাবার আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফোলেট আর ম্যাগনেশিয়ামে ঠাসা। জাপানিদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকবেই বিভিন্ন কায়দায় ব্যবহৃত এই সি-উইড। আবার এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য আঁশ থাকে, যা হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এতে থাকা ফুকোজ্যানথিন আর ফুকোইডান গোত্রের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট প্রদাহরোধী আর ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
জাপানে প্রোটিনের মূল উৎসই মাছ। স্যামন আর টুনার মতো মাছ সেখানে সাশিমি আর সুশিতে কাঁচাই খাওয়া হয়। আরও সব মাছ থাকে প্রতিদিনের মেনুতে। এই মাছের ওমেগা-থ্রি ফ্যাট রক্তচাপ কমায়, রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড কমায় আর প্রদাহ প্রশমন করে।
পুষ্টিবিদ আসাকো মিয়াশিতা ২০ বছর ধরে লংজিভিটি রিসার্চ বা দীর্ঘ জীবনের রহস্য নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। পূর্ব ও পশ্চিমের জীবনদর্শনের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি বাস্তবসম্মত ডায়েটের পরামর্শ দেন সবাইকে। পড়ান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি প্রভাষক হিসেবে। তাঁর এই নিবন্ধে যে খাবারগুলোর কথা বলা হয়েছে, নিঃসন্দেহে তার প্রতিটিই খুব উপকারী। আমাদের খাদ্যতালিকায় এগুলো যোগ করে আমরাও দীর্ঘ জীবনের আশা করতে পারি যদি সঙ্গে সম্পূর্ণ জীবন যাপন হয় স্বাস্থ্যসম্মত।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, জাপান, সিএনবিসি
হিরো ইমেজ: পেকজেলসডটকম