গতকাল সোমবার রাতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের তীব্র গন্ধ ও তিতাস গ্যাসের পাইপলাইনে সম্ভাব্য লিকেজের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা আমরা প্রায় সবাই গ্যাসের চুলা ব্যবহার করি। সঠিকভাবে ইনস্টল করলে এমনিতে যথেষ্ট নিরাপদ তা। তবে বিভিন্ন কারণে গ্যাস লিক করার আশঙ্কা হাজার সাবধানতা সত্ত্বেও থেকেই যায়। আর তা থেকে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
এ জন্য আতঙ্কিত না হয়ে ঘরের গ্যাসলাইনে লিকেজ আছে কি না, তা পরীক্ষা করার পদ্ধতি জানতে হবে। এর সঙ্গে জেনে নিতে হবে করণীয় পদক্ষেপগুলো। সব সময় বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ড নয়, দরজা-জানালা লম্বা সময় ধরে বন্ধ থাকলে অপর্যাপ্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ভয়াবহ বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হতে পারে। প্রশ্বাসের সঙ্গে এই গ্যাস পর্যাপ্ত পরিমাণে ঢুকলে তা মৃত্যু ঘটাতে পারে।
গ্যাসলাইনের পাইপের ক্ষয়
পানি ও বায়ুর উপস্থিতিতে পাইপে মরিচা ধরা শুরু হয়। একপর্যায়ে এতে ক্ষয় হয়ে গ্যাস লিকেজের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ জন্য ভালো মানের চুলা ও গ্যাসের পাইপ ব্যবহার করা উচিত আর ব্যবহারের সময়ও যত্ন করা উচিত।
সংযোগ আলগা হয়ে যাওয়া
পরিষ্কার করা বা ব্যবহারের সময় নাড়াচাড়া অথবা বিভিন্ন কারণে গ্যাসলাইনের জয়েন্টগুলো আলগা হতে পারে। আর সেখান থেকে গ্যাস লিকেজ হবে।
চুলা ভালোভাবে স্থাপন না করা
আনাড়ি হাতে গ্যাস স্টোভ স্থাপন করলে বা ইনস্টল করতে ত্রুটি থাকলে গ্যাস লিক করা খুবই স্বাভাবিক। এ জন্য পেশাদার ও দক্ষ লোকের হাতে চুলা স্থাপন করতে হবে রান্নাঘরে। চুলা মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ করতেও দক্ষতা প্রয়োজন।
কীভাবে বোঝা যাবে গ্যাস লিক হচ্ছে
প্রাকৃতিক গ্যাসের কোনো বর্ণ বা গন্ধ নেই। তাই গ্যাসের গতিবিধি ও উপস্থিতি বুঝতে এর সঙ্গে সরবরাহের সময়েই মিথাইল মারক্যাপটানের মতো অ্যাডিটিভ দেওয়া হয়, যার কারণে আমরা গ্যাসের গন্ধ পাই। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তামূলক ধাপ, যা গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পালন করতে হবে।
যদি ঘরে বা এর আশপাশে ক্রমাগত বা থেকে থেকে বারবার গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়, তবে বোঝা যাবে গ্যাস লিক করছে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
যত মৃদু হোক, ঘরে বা বাইরে গ্যাসের লাইনে হিসহিস শব্দ হলে সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে চুলার কাছে এমন শব্দ পেলে তৎক্ষণাৎ চুলা বন্ধ করে লিক চেক করতে হবে। তবে সব সময় লিক হলে শব্দ হয় না। আবার খুব ক্ষীণ লিকেজ হয়ে গ্যাস জমলে ঘরের গাছ মরে যেতে থাকে। এ ব্যাপারও লক্ষ রাখতে হবে। আগুনের শিখার রং খেয়াল করতে হবে। নীলের বদলে যদি সব সময় হলদে বা কমলা শিখা দেখা যায়, তা স্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে গ্যাস লিকেজ আছে কি না, তা দেখতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ চুলার জন্যও এমন হয়। ব্যবহারের তুলনায় অতিরিক্ত গ্যাস বিল এলেও সতর্ক হতে হবে। দেখতে হবে লাইনে কোথাও গ্যাস লিক হচ্ছে কি না।
ঘরের গ্যাস লিকেজ পরীক্ষা করার সহজ উপায়
থালাবাসন ধোয়ার লিকুইড বা ডিটারজেন্ট পাউডার পানিতে মিশিয়ে নিয়ে তা দিয়ে খুব সহজে গ্যাস লিকেজ পরীক্ষা করা যায়। গ্যাস অন করে গ্যাসের পাইপে স্পঞ্জ দিয়ে এই সাবানপানি লাগিয়ে দিতে হবে। বুদ্বুদ দেখলে বুঝতে হবে গ্যাস লিক করছে।
রান্নাঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রান্না করা উচিত নয়। এমনিতে বাইরে থেকে এসে দরজ-জানালা খুলে রেখে একটু পরে আগুন জ্বালানো উচিত চুলায়।
ছবি: পেকজেলসডটকম