অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দিয়ে ঘর গুছিয়ে রাখার জাপানি পদ্ধতি
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আজকাল আশপাশে সবার মুখে শুনতে পাওয়া মোটামুটি নতুন একটি শব্দ ‘ডিক্লাটার’। যার অর্থ হলো, অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে নেওয়া। মূলত অগোছালো ঘরকে পরিপাটি করে গুছিয়ে জীবনকে সহজ করার নামই হচ্ছে ডিক্লাটার।

ব্যস্ত জীবনে ঘর গোছানো কঠিন হয়ে পড়ে
ব্যস্ত জীবনে ঘর গোছানো কঠিন হয়ে পড়ে
ছবি: পেকজেলসডটকম

কম–বেশি প্রত্যেকেই ঘরের বাইরে ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। এ কারণে ঘর গুছিয়ে রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। সারা দিন কাজ করে অগোছালো ঘরে এসে মনটা খারাপ হয়ে যায়। যাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য আশা জাগানিয়া পন্থা হতে পারে ডিক্লাটার করা। লেখাটি পড়ে চট করেই ধারণা নিতে পারেন ডিক্লাটারিং সম্পর্কে।

বিজ্ঞাপন

ডিক্লাটার নিয়ে কথা বলতে গেলে যার নাম বলতেই হয়, তিনি হচ্ছেন মেরি কন্ডো। ডিক্লাটারিংয়ের বিষয়ে মেরি কন্ডোর যে বিশেষ একটি বই বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগিয়েছে, এর নাম হচ্ছে ‘দ্য লাইফ চেঞ্জিং ম্যাজিক অব টাইডিং আপ-দ্য জাপানিজ আর্ট অব ডিক্লাটারিং অ্যান্ড অর্গানাইজিং’। বইটিতে ডিক্লাটারিংয়ের জন্য একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার উল্লেখ রয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে কোনমারি মেথড।

বিপ্লব ঘটিয়েছেন মেরি কন্ডো
বিপ্লব ঘটিয়েছেন মেরি কন্ডো
ছবি: মেরি কন্ডোর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল থেকে

এখানে বলা হয়েছে, আপনি যদি একবার এই মেথড অনুসরণ করে আপনার ঘরকে সহজ ও সুশৃঙ্খলভাবে গুছিয়ে ফেলতে পারেন, তাহলে দ্বিতীয়বার আর একই কাজ করা লাগবে না। সুতরাং, যাঁরা সময়ের অভাবে ঘর গোছাতে পারছেন না, তাঁদের জন্য উত্তম পন্থা এই ডিক্লাটারিং।

বিজ্ঞাপন

এই কোনমারি মেথডে ছয়টি বিশেষ নিয়মের কথা বলা আছে। সেগুলো অনুসরণ করে ডিক্লাটার শুরু করা যায়।

প্রথমত, আপনার আদর্শ জীবনের কথা ভেবে দেখুন। কীভাবে আপনি ঘরের ভেতর আপনার আদর্শ জীবন কাটাতে চান? আপনার জীবনে এই ঘরের কী প্রয়োজনীয়তা আছে? আপনি ঘরটিতে কী করতে চান? এই কথাগুলো ভাবতে হবে প্রথম ধাপে।

ঘরের প্রতিটা জিনিস পরিপাটি করে রাখতে হবে
ঘরের প্রতিটা জিনিস পরিপাটি করে রাখতে হবে
ছবি: পেকজেলসডটকম

দ্বিতীয়ত, আপনার ঘরের প্রতিটা জিনিস পরিপাটি করে রাখার কথা বলা হয়েছে এখানে। প্রথমে আপনার ঘরে যা কিছু আছে, সেসব জিনিসকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করে নিতে হবে। যেমন কাপড়, বই, কাগজপত্র, কোমোনো (জাপানি শব্দ), অর্থাৎ ঘরে টুকটুক করে জমে ওঠা মায়া জন্মে যাওয়া বিবিধ জিনিস। এই শ্রেণিতে ভাগ করে ডিক্লাটার করা সহজ হবে।

তৃতীয়ত, ডিক্লাটার করে ঘর গোছানোর সময় শুধু সেসব‌ জিনিসই রাখুন, যা আপনার হৃদয়ের খুব কাছের। এ সময় প্রতিটা জিনিসকে দেখুন এবং আপনার মনকে প্রশ্ন করুন, জিনিসটা আপনাকে আনন্দ দেয় কি না। এমন ভাবেই আপনি বেছে নিতে পারবেন কোন জিনিসটা আপনি রাখতে চান বা না।

অপ্রয়োজনীয় পোশাক না রাখাই ভাল
অপ্রয়োজনীয় পোশাক না রাখাই ভাল
ছবি: মেরি কন্ডোর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল থেকে

কাপড় ডিক্লাটার করার ক্ষেত্রে খুব পছন্দের কাপড়গুলো নিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। এমন কিছু কাপড় থাকে, যা কখনো ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু ফেলেও দেওয়া যায় না। বিশেষ কোনো স্মৃতি থাকলে সেই কাপড় অপ্রয়োজনীয় হলেও আলমারি থেকে সরিয়ে ফেলা কঠিন। সে ক্ষেত্রে মনকে একটু শক্ত করে অপ্রয়োজনীয় কাপড়গুলো ডিক্লাটার করতে পারেন। বইয়ের ক্ষেত্রেও একই সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক বই থাকে, যা আপনার কখনো পড়া হয়নি বা হবে না।

ডিক্লাটার করতে হলে আবেগ বর্জন করতে হবে
ডিক্লাটার করতে হলে আবেগ বর্জন করতে হবে
ছবি: পেকজেলসডটকম

সেসব বই সরিয়ে নিয়ে প্রয়োজনীয় এবং পড়া হচ্ছে, এমন বই বাছাই করা খুবই কঠিন। তবে ডিক্লাটার করার জন্য অবশ্যই সেই আবেগ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যেসব বই আপনি কিছুদিন পড়ে রেখে দিয়েছিলেন পরে পড়বেন ভেবে, সেসব বইকে আবার দেখুন। যদি সেই বইগুলো পড়ার জন্য আপনার মন পুলকিত না হয়, তাহলে ডিক্লাটার করে সরিয়ে নিন। এরপর আসে কাগজপত্র। শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র—দুজনের প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় প্রচুর কাগজপত্র জমে যায় ঘরে।

তবে ডিক্লাটার করার সময় দেখবেন অধিকাংশ কাগজেরই আর কোনো দরকার নেই। উদাহরণস্বরূপ, আমরা বাঙালিরা বছরের পর বছর মেডিকেল রিপোর্ট জমিয়ে রাখি, যার কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকে না। আবার স্কুল-কলেজের বই–খাতাও জমিয়ে রাখি, যেসব কোনোদিন কাজে আসবে না। সব কাগজপত্র চেক করে আজই প্রয়োজন আছে এমন কাগজগুলো ছাড়া বাকি সব ডিক্লাটার করুন। তারপর আসছে ঘরে টুকটুক করে জমে থাকা জিনিসপত্র। বহু বছর ধরে জমতে জমতে অনেক জিনিস হয়ে যায় ঘরে। কোনমারি মেথডে বলা হয়েছে, জায়গা বা স্থান কম। তাই যতটুকু ব্যবহার করা হয়, ততটুকু জিনিসই রাখুন।

কঠিন হলেও ডিক্লাটারিং জীবনকে বদলে দিতে পারে
কঠিন হলেও ডিক্লাটারিং জীবনকে বদলে দিতে পারে
ছবি: পেকজেলসডটকম

শেষে আসে মায়া পড়ে যাওয়া জিনিস। এ ধরনের জিনিসপত্র বলতে বুঝিয়েছে, যেসবের সঙ্গে আপনার আবেগ জড়িয়ে আছে। যেমন কোনো ছবির অ্যালবাম, কারও দেওয়া বিশেষ উপহার ইত্যাদি। এসব জিনিসের মধ্যে যেগুলো আপনার মনের খুব কাছের, সেগুলো রেখে অন্যগুলো ডিক্লাটার করুন।

চতুর্থত, ঘরের সব অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ডিক্লাটার করার পর টাইডিং করার সময় কোনমারি মেথড অনুযায়ী, আপনার ঘরের সব জিনিসপত্র পরিপাটি করে রাখুন।
যেসব জিনিস নিত্যপ্রয়োজনীয়, সেগুলো হাতের কাছাকাছি কোনো জায়গায় রাখুন। এর বাইরে অন্যগুলো একটু দূরেই রাখুন। ছোট সব জিনিস এক জায়গায় রাখুন, আর সেগুলো রাখার জন্য ছোট বাক্স ব্যবহার করুন। কেবিনেট, আলমারি, ওয়ার্ডরোব ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয়, সেগুলো সামনের দিকে রাখুন আর যেগুলো খুব কম ব্যবহার করা হয়, সেগুলো পেছনের দিকে রাখুন।

কোনমারি মেথডের উদ্ভাবক মেরি কন্ডো বদলে দিচ্ছেন বিশ্ব জুড়ে মানুষের জীবন
কোনমারি মেথডের উদ্ভাবক মেরি কন্ডো বদলে দিচ্ছেন বিশ্ব জুড়ে মানুষের জীবন
ছবি: মেরি কন্ডোর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল থেকে

সবশেষে ঘরভর্তি যত জিনিস আছে, সেগুলোর মধ্যে যেসব আপনার মনকে প্রশান্তি দিচ্ছে শুধু সেগুলোই রাখুন। সেসব জিনিস ডিক্লাটার করুন, যা আর আপনার মনকে প্রশান্তি দিচ্ছে না।

কোনমারি মেথড অনুযায়ী, ঘরের সব জিনিস এভাবে ডিক্লাটার করে ঘরকে হালকা করুন এবং জীবনকে সহজ করুন।

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৩, ০৭: ৩৪
বিজ্ঞাপন