আমাদের ছেলেবেলায় গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়ার আনন্দ যে কী অপরিসীম, তা আজকের দিনের শিশুরা সেভাবে না জানলেও আমরা বোঝাতে চেষ্টা করতে পারি। মানছি অত সময় শিশুদের এখন আর নেই; তবু একদম পড়াশোনা আর কঠিন নিয়মে হাঁপিয়ে ওঠা শিশুরা একটু সময় পেলেই গ্যাজেটে মনোনিবেশ করে, যা তাদের মস্তিষ্ককে বিশ্রাম না দিয়ে আরও ক্লান্ত করে তোলে। এর প্রভাবে খুব ছোটবেলা থেকেই তারা খিটখিটে মেজাজের আর অনেকটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে।
আজকের দিনে সব ফ্ল্যাটেই কমবেশি, ছোট–বড় বারান্দা থাকেই, আমরা খুব সহজেই তার সদ্ব্যবহার করতে পারি। খুব কম যত্নে পালন করা যায় এবং খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়, এমন কিছু গাছ দিয়ে যদি শিশুদের বোঝাতে পারি এই গাছটা তার, এটার যত্ন নেওয়া ও পানি দেওয়া তার দায়িত্ব। এর ফলগুলো তারই হবে। আর সেই ফল সে কাজিন এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে খেতে পারবে। এভাবে আমাদের ছোটবেলার সেই ফল পেড়ে খাবার অনন্য আনন্দ কিছুটা হলেও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও পাবে। ধীরে ধীরে শিশুদের ভেতর ছোট্ট একখানি বাগানের আগ্রহ তৈরি করতে পারলেই তাদের গ্যাজেট ছেড়ে জীবনমুখী করা সম্ভব।
এ ক্ষেত্রে খুব সহজেই রোপণযোগ্য একটি গাছ হলো মালবেরি বা তুঁত ফল। একটি ডাল সংগ্রহ করে, মাটি রেডি করে টবে পুঁতে দিলেই গাছে পাতা আসার আগেই ফল চলে আসবে। খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না, নিয়মিত পানি আর ভার্মি কম্পোস্টের প্রয়োগেই বছরভর ফল পাওয়া যায়।
তুঁতের লালচে কালো ফল খুবই রসাল, নরম, টক-মিষ্টি ও সুস্বাদু। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য পাকা তুঁত ফল উপকারী। এ ছাড়া পাকা ফলের টক-মিষ্টি রস বায়ু ও পিত্তনাশক, দাহনাশক, কফনাশক ও জ্বরনাশক। তুঁতগাছের ছাল ও শিকড়ের রস কৃমিনাশক। পাকা লালচে কালো বা কালচে ফলের প্রজাতি। এদের গাছও তুলনামূলকভাবে খাটো। মোরাস অ্যালবা প্রজাতির ভিন্ন এক তুঁত দেখা যায়, যার ফল সাদা, পাকলে হয় হালকা গোলাপি-সাদা। এ ফল টক নয়, স্বাদে খুব মিষ্টি ও রসাল। মূলত এ প্রজাতির তুঁত ফলের জন্য চাষ করা হয়। পাকা তুঁত ফলের রস থেকে জ্যাম, জেলি ও স্কোয়াশ বা পানীয় তৈরি করা যায়।
তুঁত ফলের প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ তৈরি হলে তা গুটিপোকা থেকে আদি ও অকৃত্রিম রেশম চাষের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। আবার স্বল্প পরিসরে ঘরের বারান্দা, ছাদ বা আঙিনায় মালবেরির মতো সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলের গাছ লাগিয়ে তার যত্নে বাড়ির তরুণ সদস্যদের উৎসাহিত করতে পারলে তা অত্যন্ত কল্যাণকর একটি ব্যাপার হতে পারে। এভাবেই একটু একটু করে সবুজে সবুজে সেজে উঠতে পারে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য একটি পৃথিবী।
ছবি: লেখক