দেখতে দেখতে আবারও চলে এল ঈদ। তাই এখনই ঘরদুয়ার পরিষ্কার অভিযানে নেমে পড়া ভালো। প্রথমেই মাথা ঠান্ডা করে ভেবে নিন কোথা থেকে শুরু করবেন। সে জন্য যেদিন ঘর গোছাবেন, তার আগের দিন একটি লিস্ট বানিয়ে নিতে পারেন। এতে কাজটি অর্ধেক সহজ হয়ে যাবে। অনেক বাসায় পরিষ্কার অভিযান বছরের বিভিন্ন সময়ে করা হয়। তবে কর্মব্যস্ত মানুষের পক্ষে তা করা খুব কঠিন। এই যান্ত্রিক জীবনে বছরে একদিন পুরো বাসা পরিষ্কার করার অভিযানে নামা যেন বিশাল একটা কঠিন ব্যাপার। ঈদের দিন যেহেতু প্রচুর মেহমানের আনাগোনা হয়, তাই পরিষ্কার অভিযানের সময়টি ঈদের আগে বেছে নেওয়াই শ্রেয়।
প্রথমেই ঘরের সিলিং ফ্যান পরিষ্কার এবং ঝুল ঝাড়ার পালা। সিলিং ফ্যানগুলো প্রতিদিনই ব্যবহার হয়। চলতে চলতে ফ্যানগুলোতে ময়লার আস্তরণ পড়ে যায়। ঈদের আগে তাই এগুলো পরিষ্কার করে নিলে ঘর পরিষ্কারও দেখাবে আবার অনেক দিন পর্যন্ত এই কঠিন কাজ করার প্রয়োজনও হবে না। তারপরেই আসে ঝুল ও মাকড়শার জাল। প্রতিদিন ঝুল পরিষ্কার করা সম্ভব না হলেও ঈদের আগে এক দিন করতেই পারেন। ঈদের দিন ঘরটা থাকুক চকচকে।
এরপর নজর দিন আপনার ঘরের সব আসবাবের দিকে। আসবাব প্রধানত প্রয়োজনীয় কার্যকারিতা মেটালেও ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সহায়ক। ঈদের দিনটিতে ঘরের সব আসবাব থাকবে ঝকঝকে। আসবাব পরিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিষ্কারক দ্রব্য এখন বাজারে ভূরি ভূরি। একটু উপযোগিতা বুঝে এগুলো ব্যবহার করে ঘরের আসবাবগুলো ঈদের সাজে সাজান।
প্রত্যেকের সংসারে টুকটুক করে জমে যায় প্রচুর গৃহস্থালি ও গৃহসজ্জার অনুষঙ্গ। এসব অনুষঙ্গ আপনার জীবনেরই অংশ। তাই ঈদের মতো একটি বিশেষ দিনে এদেরও চাই বিশেষ গ্রুমিং। ঘরের সব শোপিস, বইপত্র, গাছপালা, কাপড়চোপড় এই সব জিনিসপত্র মিলিয়েই সংসার এবং আপনারই। তাই এসবের পেছনে একটু সামান্য সময় দেওয়াও আপনার দায়িত্ব। ধুলাবালু ঝেড়ে-মুছে একটু অদল-বদল করে সাজিয়ে নিন এগুলো।
কমবেশি সব গৃহকর্ত্রীরই খুব প্রিয় একটি সাংসারিক জিনিস হচ্ছে ক্রোকারিজ বা চিনামাটির টেবিলওয়্যার। অতিথি আপ্যায়নে একেবারে নতুন অথবা শোকেসে থাকা বিশেষ ক্রোকারিজে খাবার ও পানীয় পরিবেশনের রীতি চলে আসছে যুগে যুগে। ঈদের দিনেও এমন কিছু বিশেষ ও উন্নত মানের ক্রোকারিজ খাবার টেবিলে পদার্পণ করে শোকেস বা ওয়াগন থেকে। ঈদের আগে এসব তৈজসপত্র ঝকঝকে করে পরিষ্কার করে নিলে নিজেরই খুব ভালো লাগবে।
সবার ঘরেই কমবেশি বিভিন্ন ধরনের শোপিস থাকে। আর এসব শোপিসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে যত নস্টালজিয়া। একসময় ক্রিস্টাল আর ফাইবারের মিনিয়েচার থেকে শুরু করে বড় বড় শোপিস দেখা যেত সবার ঘরে ঘরে। এখন দিন পাল্টে যাওয়ায় এর চাহিদাও কমে গেছে। তবে যাঁদের বাসায় আজও সেই সব শোপিস আছে, তাঁরা এগুলোর ব্যাপারে কতটা যত্নশীল, তা ভাবতেই অবাক লাগে। এই ছোট ছোট শোপিস পরিষ্কার রাখা কঠিন। ঈদের আগে পরিষ্কার অভিযানে আপনার ঘরের যত শোপিস আছে, সেগুলো শামিল করুন। একটু সময় নিয়ে সুন্দর করে পরিষ্কার করে নিলে আবার অনেকদিন পর্যন্ত হাত দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
দুজনই চাকরিজীবী, এমন দম্পতির ঘরে তুলনামূলকভাবে কাপড়ের জঞ্জাল থাকে বেশি। এখানে-সেখানে সব জায়গায় শুধু কাপড় আর কাপড়। কিছু গোছানো তো কিছু ওলট-পালট। এভাবেই সারাটা বছর চলে যায়। তবে ঈদের দিন এত এত মেহমান এসে এই অবস্থা দেখলে ভালো লাগবে? নিশ্চয়ই না! তাই পরিষ্কার অভিযানের ক্ষেত্রে ঘরের সব কাপড়চোপড় অর্গানাইজ করে রাখাটা একটা গুরুদায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কাপড় গোছানোর ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ইউটিউবের মাধ্যমে জেনে নিয়ে মেরি কন্ডোর কোনমারি মেথড অনুসরণ করতে পারেন।
অবশেষে থাকে কিছু শৌখিন জিনিসপত্র। যেমন দেয়ালঘড়ি, পেইন্টিং, বইপত্র, গাছপালা। দেয়ালঘড়ি সবার ঘরেই একটা না একটা থাকে। পুরো ঘর পরিষ্কার করার সময় এটি চোখে পড়বেই। তখন চট করে একটু শুকনা কাপড় বা ডাস্টার দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেই হয়ে গেল। দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের পেইন্টিং বা ছবি থাকে, যা প্রতিদিন মোছা সম্ভব হয় না। কিন্তু এগুলো ঈদের আগে একটু মুছে পরিষ্কার করে নিলে দেখতে একদম নতুন মনে হবে। অনেকের ঘরে হয়তো দেখা যাবে, বই এবং বিভিন্ন ধরনের হাউস প্ল্যান্টের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলোর সঠিক যত্ন নেওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।
ঈদ এলে ঘর গোছানোর কাজে আগের দুটি দ্বিগুণ ব্যস্ততায় কাটে কাটুক। সেই সুবাদে নিজের আপন ভুবনটিকে সাজিয়ে তোলার সুযোগ হয়। ঝকঝকে পরিষ্কার অন্দরে বসবাসে আপনার মনটাও থাকবে ফুরফুরে। তবে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে ঝাড়পোছের সময়ে মাস্ক ও চশমা পরে নেওয়া উচিত।
ছবি: পেকজেলসডটকম ও উইকিপিডিয়া