এক কাপ পানিতে বিদ্যুৎ বিল অর্ধেক, জেনে নিন রেফ্রিজারেটর ব্যবহারের এই জাদুকরি টিপসগুলো
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আমাদের সবারই কমবেশি মাস শেষে বিদ্যুৎ বিলের হিসাব মিলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। এই গরমে যদি কিছু টিপস অনুসরণ করে আমাদের ঘরের নিত্যদিনের ব্যবহার্য সঙ্গী রেফ্রিজারেটরের বিল কিছুতা কমিয়ে আনা যায়, তাহলে তো মন্দ হয় না। গ্রীষ্মের দাবদাহ কিংবা বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া—বছরের প্রতিটি ঋতুতেই ঘরের রেফ্রিজারেটর যেন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে টাটকা শাকসবজি, ফলমূল—সবকিছুর সতেজতা ধরে রাখার এক নির্ভরযোগ্য যন্ত্র এটি। তবে এই নিরবচ্ছিন্ন সেবার পেছনে একটি বড় খরচের নাম হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল। অনেকেই জানেন না, একটু সচেতন হলেই প্রতিদিনের এই ব্যবহারে আমরা এক বড় পরিবর্তন আনতে পারি ।

রেফ্রিজারেটরের বিল কিছুতা কমিয়ে আনা যায় কিছু টিপস মেনে চললে
রেফ্রিজারেটরের বিল কিছুতা কমিয়ে আনা যায় কিছু টিপস মেনে চললে
এক কাপ পানি দিয়েই বিদ্যুৎ বাঁচানো যায় ফ্রিজের
এক কাপ পানি দিয়েই বিদ্যুৎ বাঁচানো যায় ফ্রিজের

এক কাপ পানির ছোট এক কৌশল হয়ে উঠতে পারে বড় সাশ্রয়ের চাবিকাঠি।রেফ্রিজারেটর আমাদের সকলের ঘরের প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত এমন একটি যন্ত্রপাতি, যা সারাক্ষণই চালু থাকে। ফলে এটি স্বাভাবিকভাবেই বেশ খানিকটা বিদ্যুৎ খরচ করে। তবে কিছু সহজ উপায় মেনে চললেই মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে আনা সম্ভব। চলুন বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা একটি সহজ ও কার্যকর পদ্ধতির কথা বলছেন। সেটি হলো প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ফ্রিজারের চেম্বারে একটি বাটি, ট্রে বা কাপ ভরে পানি রেখে দিন। সকালে তা বরফ হয়ে গেলে সেটি মূল ফ্রেশ চেম্বারে (তাজা খাবার রাখার অংশে) রেখে দিন এবং এই প্রক্রিয়া প্রতিদিন অব্যাহত রাখুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে রেফ্রিজারেটরের দরজা খুব একটা খোলা হয় না, ফলে পানি বরফে পরিণত হওয়ার সময় যন্ত্রটিকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। এতে বিদ্যুৎ খরচ অনেকটাই কমে যায়। পরদিন সেই বরফ ফ্রেশ চেম্বারে রাখলে তা ধীরে ধীরে গলে ঠান্ডা বাতাস ছড়ায়, যা রেফ্রিজারেটরকে সেট করা তাপমাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে সাহায্য করে এবং এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এছাড়া, বরফ গলে যে আর্দ্রতা তৈরি হয়, তা ফলমূল ও শাকসবজির সতেজতা ও পুষ্টিগুণ রক্ষায় সহায়তা করে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও আরো কিছু টিপস আছে, যা রেফ্রিজারেটরের বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে আনে।

রেফ্রিজারেটর বসানোর সঠিক স্থান

রেফ্রিজারেটর এমন স্থানে রাখতে হবে, যেখানে সরাসরি সূর্যালোক না পড়ে এবং আশপাশে যেন কোন তাপের উৎস নেই। রেফ্রিজারেটরকে দেয়াল থেকে অন্তত ১৫–২০ সেন্টিমিটার দূরে রাখলে এটির বাতাস চলাচল সহজ হয়।

দরজার গ্যাসকেট পরীক্ষা

রেফ্রিজারেটরের দরজার চারপাশের রাবার গ্যাসকেট যেন ঠিকঠাক থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এটি নষ্ট হলে ঠান্ডা বাতাস বাইরে বেরিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে।

অতিরিক্য বোঝাই না করে গুছিয়ে রাখতে হবে ফ্রিজ
অতিরিক্য বোঝাই না করে গুছিয়ে রাখতে হবে ফ্রিজ

দরজা খোলার ব্যাপারে সচেতন হওয়া

প্রয়োজন ছাড়া রেফ্রিজারেটরের দরজা বারবার খোলা উচিত নয়। দীর্ঘ সময় খোলা রাখলে গরম বাতাস ভেতরে ঢুকে যন্ত্রটিকে বেশি পরিশ্রম করায়, যার ফলে বিদ্যুৎ বিলও বেশি আসতে পারে।

কনডেনসার কয়েল পরিষ্কার

প্রতি ৬ মাসে একবার রেফ্রিজারেটরের পেছনের কনডেনসার কয়েল পরিষ্কার করা জরুরি। সেই সাথে এটির প্লাগ খুলে নরম ব্রাশ ও শুকনা কাপড় দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে।

সঠিক তাপমাত্রায় চালাতে হবে ফ্রিজ
সঠিক তাপমাত্রায় চালাতে হবে ফ্রিজ

তাপমাত্রা ঠিকমতো সেট করা

রেফ্রিজারেটরে খাবারের পরিমাণ অনুযায়ী তাপমাত্রা ঠিক করুন। প্রয়োজন ছাড়া সবচেয়ে ঠান্ডা সেটিং ব্যবহার না করাই ভালো।

খাবার সঠিকভাবে মোড়ানো

খাবার ভালোভাবে প্যাক করে রাখলে রেফ্রিজারেটর অতিরিক্ত আর্দ্রতা অপসারণে বেশি বিদ্যুৎ খরচ করতে হয় না। এতে দুর্গন্ধের সমস্যাও অনেকটাই কমে যায়।

অতিরিক্ত বোঝাই নয়

রেফ্রিজারেটরে অতিরিক্ত খাবার রাখলে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে যন্ত্রটি অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করে এবং খাবারও দ্রুত নষ্ট হয়।

বিজ্ঞাপন

রেফ্রিজারেটর কেনার সময় যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার

এনার্জি লেভেল

রেফ্রিজারেটর কেনার সময় অবশ্যই এনার্জি লেভেলের দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (BSTI) বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দেওয়া রেটিং স্কেলে ৫-স্টার মানে সবচেয়ে বেশি এনার্জি দক্ষতা। উচ্চ রেটিংযুক্ত রেফ্রিজারেটর কম বিদ্যুৎ খরচ করে, ফলে দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ বিল অনেকটাই কমে যায়। তাই শুরুতেই কিছুটা বেশি দাম দিতে হলেও ভবিষ্যতে এটি হয়ে ওঠে লাভজনক এক বিনিয়োগ।

মাপ ও ধারণক্ষমতা

রেফ্রিজারেটরের মাপ ও ধারণক্ষমতা নির্ভর করা উচিত পরিবারের সদস্যসংখ্যা এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের উপরে। ছোট পরিবার বা একক ব্যবহারকারীর জন্য ১৫০–২৫০ লিটার ধারণক্ষমতা যথেষ্ট হলেও, ৪–৫ জনের পরিবারের জন্য ৩০০ লিটারের বেশি ধারণক্ষমতা দরকার হতে পারে। অতিরিক্ত বড় রেফ্রিজারেটর না কিনলে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়, আবার প্রয়োজনের চেয়ে ছোট কিনলে সংরক্ষণে সমস্যা হয়। তাই সঠিক পরিমাপ বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

মাল্টি ডোর মডেল ভালো
মাল্টি ডোর মডেল ভালো

মাল্টি-ডোর মডেল

দুই বা ততোধিক দরজার রেফ্রিজারেটর (যেমন: ডাবল ডোর, ট্রিপল ডোর, ফোর ডোর, সাইড-বাই-সাইড) ব্যবহার করলে প্রতিবার দরজা খোলার সময় পুরো ইউনিটের ঠান্ডা বাতাস বের হয়ে যায় না। এতে একদিকে যেমন অভ্যন্তরের তাপমাত্রা দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়, অন্যদিকে খাবার সতেজ থাকে এবং ফ্রিজের কম্প্রেসরকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় না—ফলে বিদ্যুৎ অনেকটাই সাশ্রয় হয়। তাছাড়া এসব মডেল সাধারণত জায়গা ও সংরক্ষণ সুবিধার দিক থেকেও এগিয়ে।

ইনভার্টার প্রযুক্তি

ইনভার্টার কম্প্রেসর রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাপমাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে গতি নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে বারবার চালু ও বন্ধ হওয়া লাগে না, যার ফলে বিদ্যুৎ খরচ প্রচলিত কম্প্রেসরের তুলনায় প্রায় ২৫–৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম হয়।— ইনভার্টার প্রযুক্তির রেফ্রিজারেটর দীর্ঘস্থায়ী হয়, শব্দ কম করে এবং চালু থাকা অবস্থায়ও কমপক্ষে কম বিদ্যুৎ খরচ করে।

রেফ্রিজারেটর যেমন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য অপরিহার্য, তেমনি এটি বিদ্যুৎ বিলের বড় একটি অংশও দখল করে থাকে। তাই এটির সচেতন ব্যবহার ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি আর বোঝা নয়, বরং সাশ্রয়ের এক দুর্দান্ত উপায় হয়ে উঠতে পারে। একটু সতর্কতা, সামান্য কৌশল আর কিছু ছোট ছোট পরিবর্তনেই মাস শেষে আপনি বিদ্যুৎ বিলে সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখতে পারবেন।

তথ্যসূত্র: দ্যা বাস্টেড নিউজ

ছবি: পেকজেলস ও ইন্সটাগ্রাম

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৭: ০৯
বিজ্ঞাপন