ঘরবাড়ি গুছিয়ে রাখার কোনো বিকল্প নেই। শহুরে ঠাসবুনোটের ফ্ল্যাটবাড়িতে জায়গা এক বড় দামি ব্যাপার। আর বেশির ভাগ সময় এই বাসাগুলোতে রান্নাঘরের আয়তন থাকে বেশ ছোট। তার মধ্যে যদি অপ্রয়োজনীয় জিনিসে ঠেসে রাখি, তবে সমস্যা বেড়েই চলবে। তাই আজই মনস্থির করে কিছু জিনিস ফেলে দিতে হবে রান্নাঘর থেকে।
প্রায়ই দেখা যায়, বাসার সব ঘরের সবকিছু পরিষ্কার–পরিপাটি। কিন্তু রান্নাঘর মনের মতো করে গোছানো যাচ্ছে না। আবার কী রাখবেন, কী রাখবেন না—সেটাও ঠিক করতে পারছেন না। অভ্যাসবশত আপনার বাসায় থাকতে পারে, এমন কিছু জিনিস, যা এখনই ফেলে দেওয়া উচিত, সেগুলো এবার দেখে নেওয়া যাক।
যতবার বাজারে যাওয়া হয়, ঠিক ততবারই সঙ্গে আসে কিছু পলিথিনের ব্যাগ। কাজে লাগবে ভেবে হয়তো আগের ব্যাগগুলোই কোথাও না কোথাও স্তূপ করে রেখেছেন, আবার যোগ হয় নতুন কিছু। পলিথিনের ব্যাগের ভেতরেই ঠেসে রাখা হয় বাকি ব্যাগগুলো। প্রতিবার নতুন পলিব্যাগ এনে ঘর ভরানোর চেয়ে বরং সব কটিকে একত্র করে গুছিয়ে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে প্রয়োজনে এদের পুনর্ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঘরে জঞ্জাল কমে আসার পাশাপাশি পরিবেশের ব্যাপারে একটু সচেতন হওয়ার কথা ভেবে মানসিক প্রশান্তি আসবে।
সবজি, মাছ-মাংস কাটতে কাটতে হয়তো আপনার কাটিং বোর্ডটিতে পড়েছে অসংখ্য আঁচড়। এসব আঁচড়ের গভীরতা আর সংখ্যা যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে এখনই উপযুক্ত সময় আপনার কাটিং বোর্ডটি পরিবর্তন করার। কারণ, পুরোনো এসব আঁচড়ের গর্ত ব্যাকটেরিয়াদের খুব পছন্দের জায়গা। তাই নিজকে সুস্থ রাখার তাগিদে হলেও কাটিং বোর্ড নিয়মিত পরিবর্তন করা উচিত।
ব্যবহার করতে করতে একসময় নন–স্টিক পাত্রে অসংখ্য আঁচড় পড়ে ওপরের প্রলেপ উঠে যায়। এ ধরনের স্ক্র্যাচযুক্ত পাত্র অবশ্যই বেশি দিন ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, প্রলেপ উঠে আসা নন–স্টিক পাত্র থেকে টক্সিক রাসায়নিক নিঃসৃত হয়। এগুলো খাবারের সঙ্গে মিশে খাদ্যগুণকে প্রভাবিত করে। তাই স্ক্র্যাচ পড়া পাত্রগুলো পরিবর্তন করে নতুন প্যান আনা উচিত। আর আঁচড় থেকে বাঁচাতে নন-স্টিক পাত্রে কাঠের চামচ বা সিলিকন স্প্যাচুলা ব্যবহার করতে হবে।
একটা লেবু কাটার পর অব্যবহৃত টুকরাগুলো অনেক সময় পরে ব্যবহার করব বলে আমরা ফ্রিজে রেখে দিই। তিন-চার দিন পর দেখা যায় সেগুলো শুকিয়ে খাওয়ার অনপুযোগী হয়ে আছে। ফ্রিজে খাবার ভালো থাকে সত্য কিন্তু তার মানে এই নয় যে অনাদিকাল পর্যন্ত ভালো থাকবে। কিছুদিন পর পর নিয়মিত ফ্রিজ পরিষ্কার করার পাশাপাশি যেসব খাবার অনেক দিন যাবৎ ফ্রিজে পড়ে আছে সেসব কতটুকু ঠিক আছে, যাচাই করা উচিত। যেমন বেকারির তৈরি খাবার কেক, ব্রেড ইত্যাদি। ফ্রিজে অন্য কিছুর প্রভাবে বরফের টুকরাগুলোতে গন্ধ হয়ে আছে কি না দেখা প্রয়োজন। তেমন হলে সেগুলো ফেলে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। নিয়মিত এভাবে খেয়াল রাখলে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিমান যেমন ঠিক থাকবে, তেমনি আপনার ফ্রিজটিও থাকবে দুর্গন্ধমুক্ত।
জ্যাম, আচার, সস—এগুলো থাকে সুন্দর সব বয়ামে। যেহেতু এসব রোজ প্রয়োজন হয় না, তাই অতি যত্নে তুলে রাখা হয় ফ্রিজের দরজার তাকে। এদের প্রতি তাই খুব সহজে মনোযোগও যায় না। তাই কখন মেয়াদ গেল, কতটুকু অবশিষ্ট আছে—সেসব খেয়াল করা হয় না। তিন মাস অন্তর ফ্রিজের দরজার এই বয়ামগুলো পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এদের স্বাদ, গন্ধ ও উপকরণগুলো কত দিন ভালো থাকে—এসব জেনে নেওয়া উচিত আর সেই অনুযায়ী পরখ করা উচিত প্রতিটি বয়াম আর বোতল। যেগুলো এই পরীক্ষায় পাস করবে না, তাদের যথারীতি ফেলে দিতে হবে।
বিট লবণ, পিংক সল্ট , হিং, পাঁচফোড়ন ইত্যাদি মসলা নিত্যদিনের রান্নায় তেমন একটা প্রয়োজন আসে না। কিন্তু আমরা কিনে রেখে দিই, প্রয়োজনে কাছে পাওয়ার আশায়। দীর্ঘদিন রেখে দিলে এসব মসলার স্বাদ নষ্ট হয়। তাই এত মায়া না করে এই এই মসলাগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ফেলে দেওয়া উচিত। মসলা ছাড়াও আটা, ময়দা, বেসন, রান্নাঘরের এই নিত্যকার উপকরণগুলোও নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। কারণ, এসব দ্রুত নষ্ট হয়।
সব রান্নাঘরেই জমে যায় নানা আকৃতির প্লাস্টিকের পাত্র। এদের একেকটি একেক রঙের, আকারও বেশ ভিন্ন হওয়ায় যতই চেষ্টা করা হোক সহজে গুছিয়ে রাখা যায় না। এসব কনটেইনারের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো এরা পলিকার্বনেট দিয়ে তৈরি, যা এতে দীর্ঘ সময় ধরে রাখা খাবারের সঙ্গে মিশে খাদ্যগুণ নষ্ট করে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাঁচ বা সিলিকনের তৈরি জার ব্যবহার করা যেতে পারে। এভাবে নিয়ম করে খেয়াল রাখলে রান্নাঘরকে আরও গোছানো মনে হবে। পরিষ্কার করাও সহজ হবে নিঃসন্দেহে।
ছবি: পেকজেলসডটকম