বাড়ি সাজানোর জনপ্রিয় স্যাকিউলেন্ট–জাতীয় উদ্ভিদ বেশির ভাগই রসাল পাতার হয়ে থাকে। তবে অ্যাডেনিয়াম বা মরুগোলাপ স্যাকিউলেন্টের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। অ্যাডেনিয়ামের সবুজ পাতা আর রংচঙে ফুলের সঙ্গে এর আছে এক বিশেষ ধরনের নাদুসনুদুস কাণ্ড। এই গাছের গোড়া একেবারেই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, যা দেখে উদ্ভিদটিকে খুব সহজে চেনা যায়।
উপযুক্ত পরিবেশে অ্যাডেনিয়ামগাছের গোড়া একেবারে ত্যাড়াবাঁকা হয়ে ফুলে–ফেঁপে যায়। মূলত এ গাছের গোড়া আর কাণ্ড পানি সঞ্চয় করে রসাল হয়ে ওঠে বলে এমনটা হয়। এ ধরনের গাছকে বলা হয় কডেক্স (Caudex) প্ল্যান্ট।
এই অ্যাডেনিয়ামগাছের কিন্তু প্রচলিত অনেক নাম আছে। যেমন ডেজার্ট রোজ, ইম্পালা লিলি, সাবি স্টার ইত্যাদি। এর মধ্যে ডেজার্ট রোজ বা মরুগোলাপ নামেই গাছটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
ধরা হয়, অ্যাডেনিয়ামগাছের উৎপত্তি আফ্রিকার শুষ্ক, রুক্ষ প্রকৃতির বুকে। তাই তো সুযোগ বুঝে এ গাছ তার কাণ্ডে পানি ধরে রাখে অন্য সব মরুজ উদ্ভিদের মতোই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অ্যাডেনিয়ামপ্রেমী বাগানিদের লক্ষ্যই থাকে, এর এই বিশেষ ধরনের কাণ্ডকে যতটা পারা যায়, ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে রসাল করে তোলা। সে জন্য এর শিকড়, পাতা, ডাল ছেঁটে–কেটে সামলে রাখা হয় যেন বেশ মোটাসোটা একটি কাণ্ড পাওয়া যায়। গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার সময় খুব সাবধানে দিতে হয় মরুগোলাপের বেলায়। কারণ, অতিরিক্ত আর্দ্রতা গাছের গোড়া পচিয়ে দিতে পারে।
শুষ্ক আবহাওয়ায় অভ্যস্ত এই গাছের কিন্তু সুয্যিমামার সঙ্গে আছে বেজায় ভাব। বিশেষ করে এর উজ্জ্বল গোলাপি ফুল থোকায় থোকায় ফুটে ওঠে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পেলে। সাধারণত আমাদের দেশের মতো আবহাওয়ায় এ গাছ কিছুটা চিরহরিৎ প্রকৃতিরই হয়ে থাকে।
তবে শীতকাল এলে এর পাতা ঝরার প্রবণতাও দেখা যায়। খুব শীতপ্রধান দেশে এ গাছ ঘরের ভেতরই ভালো হয়। আর আমাদের দেশে অ্যাডেনিয়াম ঘরে-বাইরে সব জায়গায়ই খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে।
সাধারণ অবস্থায় বাড়তে দিলে মরুগোলাপের গাছ কয়েক ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আবার ছেঁটে–কেটে অনেকে একে বনসাইয়ের মতো করেও বাড়তে দেন। অ্যাডেনিয়ামগাছের ধূসর স্ফীত গোড়া ও অসমভাবে প্রস্থ বিস্তার করা কাণ্ডের ওপর এর ঝকঝকে মসৃণ সবুজ পাতার গুচ্ছ ভরে বৃত্তাকার সজ্জা এক অনন্য বৈপরীত্য আনে। আর তার ওপর যখন থোকা বেঁধে রঙিন ফুলের মেলা বসে, তখন মনে হয় অ্যাডেনিয়াম বাগানিরা নিজেদের সার্থক ভাবেন। গোলাপি ছাড়া অ্যাডেনিয়ামের ফুল কিন্তু উজ্জ্বল কমলা, লাল বা মিশ্রবর্ণেরও হতে পারে।
অ্যাডেনিয়ামের একটি অন্য রকম আবেদন আছে সারা বিশ্বের বাগানবিলাসী মানুষের কাছে। যাঁরা অ্যাডেনিয়াম ভালোবাসেন, এ গাছ তাঁদের নিজের শক্তিতে ভেতর থেকে বিকশিত হওয়ার উদ্দীপনা জাগায়। ধূসর কাণ্ডের ওপর সজীব পাতার ঝোপমতো সবুজ আর বর্ণিল ফুলের থোকা জীবনের জয়গান গায়। আবার এর ঘাতসহতা, দীর্ঘ প্রতিকূলতাকে সহ্য করে আবারও ফুলে ফুলে ভরে ওঠা—এসব থেকেই অ্যাডেনিয়ামপ্রেমীরা মানসিক শক্তি ও প্রশান্তি পেয়ে থাকেন।
আমাদের দেশে এখন বিশ্বের বহু দেশের মতো অ্যাডেনিয়াম অত্যন্ত প্রিয় হাউসপ্ল্যান্ট সবার কাছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইদানীং অ্যাডেনিয়াম বাগানি ও অ্যাডেনিয়ামপ্রেমীদের অনেক হৃদ্যতাপূর্ণ গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। অ্যাডেনিয়ামের যত্ন–আত্তি নিয়ে ভিডিও সাইটগুলোয় পাওয়া যায় অগুনতি শিক্ষামূলক ভিডিও।
সাবধানতা
এ গাছের কাণ্ডের ভেতরের রস থেকে অবশ্য একটু সাবধান থাকতে হবে। কারণ, এ মরুগোলাপের স্ফীত কাণ্ড বা কডেক্সে এর স্যাপ বা আঠালো রসে বিষাক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই শিশু বা পোষা প্রাণীর নাগাল থেকে অ্যাডেনিয়ামগাছ দূরে রাখলেই ভালো।
তবে স্নেক প্ল্যান্ট বা আরও অনেক পাতাবাহার গাছেই এমন বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি থাকে এবং একবারে যথেষ্ট পরিমাণ সেবন করলেই কেবল এর বিষক্রিয়া সেভাবে ঘটতে পারে। মরুগোলাপের দেখভাল করা এখন বর্তমান যুগে এক অনন্য শখের কাজ হিসেবে সবার কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাদের দেশের নার্সারিগুলোও এ থেকে বেশ লাভের মুখ দেখছে।