আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় ইলেকট্রনিক কিচেন গ্যাজেটের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। ঝটপট কাজ সারতে ও কাজের বোঝা কমাতে পারে, এমন একটি কিচেন গ্যাজেট হলো ডিশওয়াশার। আমাদের দেশে যে পরিমাণে মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, পানির ফিল্টার বিক্রি হয়, সে পরিমাণে ডিশওয়াশার বিক্রি হয় না। তবে এখন সেই চিত্রে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে। ডিশওয়াশার এখন মানুষের শৌখিনতা নয়, প্রয়োজনীয়তাও। বাংলাদেশে এখন বেশ ভালো মানের ডিশওয়াশার পাওয়া যায়। আছে বেশ কিছু ব্র্যান্ডের পণ্যও। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখা যায় স্যামসাং ডিশওয়াশারকে।
ডিশওয়াশার থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি সময় সাশ্রয় করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মানুষ প্রতি সপ্তাহে গড়ে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় কেবল থালাবাসন পরিষ্কারে ব্যয় করেন। ডিশওয়াশার থাকলে এ সময়ের অনেকটাই বেঁচে যায়। খাওয়া শেষে থালাবাসন মেশিনে দিয়ে টাইমার সেট করে ঘর বা নিজের অন্য যেকোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া যায়। বাসনকোসন পরিষ্কারের পর শুকানোর কাজটাও কিন্তু এই ডিশওয়াশারই করে।
অনেক সময় দেখা যায় সিরামিকের বাসনে হলুদ বা চায়ের দাগ লেগে থাকে। মাজুনি দিয়ে হাজার ঘষলেও এ দাগ যায় না। ডিশওয়াশার দিয়ে ধুলে এ ধরনের দাগ হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না। আবার অসাবধানতায় কখনো খাবার পুড়ে গিয়ে হাঁড়িতে লেগে কালো হয়ে যায়। এরপর যত চেষ্টাই করা হোক না কেন সে হাঁড়ির কালো দাগ সহজে পরিষ্কার হয় না। তাই ব্যস্ত জীবনে খাবার পোড়া ও কপাল পোড়া—এখন একই ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিশওয়াশার এখানে অবশ্য ত্রাতা হিসেবে কাজ করতে পারে। এর টাইম সাইকেল বাড়িয়ে পোড়া পাতিল বা দাগযুক্ত থালাবাটি রেখে দিলে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। সময় হয়তো কিছুটা বেশি লাগবে, তবে কায়িক পরিশ্রম কমে যাবে।
কেবল হাতে থালাবাসন, হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করলে ময়লা ও জীবাণু পুরোপুরি দূর হয় না। আবার এগুলো ধুতে যে স্পঞ্জ বা মাজুনি ব্যবহার করা হয়, তা ব্যাকটেরিয়ার আদর্শ প্রজননক্ষেত্র। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে ডিশওয়াশার খুব সহজে থালা-বাসনকে জীবাণুমুক্ত করতে পারে। কারণ, এতে গরম পানি দিয়ে সব ধোয়া হয়। ব্র্যান্ডভেদে বিভিন্ন ডিশওয়াশারের পানির তাপমাত্রা ৫০ থেকে ৭০ ডিগ্রি, এমনকি এর বেশি হতে পারে। বর্তমানে এমন কিছু ডিশওয়াশার আছে, যেগুলোর আলাদা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্লিনিং ফাংশন থাকে। এ ধরনের ফাংশন ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ জীবাণু ধ্বংস করে সর্বাধিক স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে।
বারবার হাত দিয়ে থালাবাসন ধোয়া হলে হাতের ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। ডিশওয়াশিং লিকুইড ও বারে যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘসময় এগুলো ব্যবহার করলে হাতের ত্বক সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে। ডিশওয়াশার দিয়ে থালাবাসন ধুলে ত্বকের এ ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
ডিশওয়াশারে থালাবাসন ধোয়া হলে পানির অপচয় কম হয়। দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ আধুনিক ডিশওয়াশারগুলো প্রতি সাইকেলে ৯ থেকে ১৪ লিটার পানি খরচ করে। কিন্তু হাতে থালাবাসন ধুলে এর চেয়ে অনেক বেশি পানি খরচ হয়। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এসেছে, ১৪৪টি থালাবাসন পরিষ্কার করতে ডিশওয়াশারের প্রায় ১৩ লিটার পানি হলেই চলে। অন্যদিকে একই পরিমাণ জিনিস হাতে ধোয়ার জন্য গড়ে ১০০ লিটার পানি ব্যয় হয়। এ ছাড়া আধুনিক প্রজন্মের ডিশওয়াশারগুলো যথেষ্ট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীও বটে।
বাসায় আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব দাওয়াত দিলে খাবার পরিবেশনের আগের ও পরের কাজগুলো খুবই কঠিন। সেটা সহজ করে দিতে পারে এই স্যামসাংয়ের এই ডিশওয়াশার। কারণ, ১৩ পিসের সেটিংসে একসঙ্গে প্রায় ১৩০ পিস ক্রোকারিজ পরিষ্কার করা যায়। একই সঙ্গে রান্নাঘর থাকে পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খল।
ছবি: পেকজেলস ডট কম