বাড়ির নকশা যেভাবে দূষণ ঠেকাতে পারে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আমরা ধরেই নিচ্ছি, বাইরে সারা দিনের কাজ সেরে ঘরে ফেরা মানে দূষণকে দরজার বাইরে রেখে আসা। আদতে কি তা ঠিক? মোটেও কিন্তু তা নয়। কারণ, আমাদের পরম শান্তি ও স্বস্তির গৃহকোণটিই আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে। আমাদের নিজেদেরই কিছু ভুলের জন্য আমরা নিজের অজান্তেই দূষিত করে ফেলছি আমাদের অন্দরমহল, যা এক নীরব ঘাতকের মতো আমাদের ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে। অথচ সঠিক স্থাপত্য নকশার মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই অন্দরদূষণের মতো সমস্যা থেকে বাঁচতে পারি।

নকশা শুরুর একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাস্থ্য ও সাশ্রয়ের বিষয়টি মাথায় রাখা একজন স্থপতির কর্তব্য
নকশা শুরুর একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাস্থ্য ও সাশ্রয়ের বিষয়টি মাথায় রাখা একজন স্থপতির কর্তব্য

কোনো বাড়ির নকশায় স্থপতি একেবারে প্রথম থেকেই কিছু আবশ্যিক বিষয় মাথায় রেখে কাজ করলে অন্দরের দূষণের মতো গুরুতর সমস্যা অনেকটাই এড়িয়ে যাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সবার আগে মনে রাখতে হবে, ভবন বা বাড়িতে যাঁরা বাস করবেন, তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বাস্থ্যের কথা। পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল ও আলো-হাওয়ার সুব্যবস্থা রাখা, ভবনের আবরণ বা দেয়ালে ইনস্যুলেশন ব্যবহার করা, টেকসই ও নন-টক্সিক উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিত করা। তাহলে অনেকাংশেই দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব। আর সেটা করতে পারেন একজন স্থপতি। নকশা শুরুর একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাস্থ্য ও সাশ্রয়ের বিষয়টি মাথায় রাখা একজন স্থপতির কর্তব্য।
ভবন নকশায় অবশ্যই প্রাকৃতিক আলো ও বাতাস প্রবেশের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ভবনের বহিরাবরণ হতে হবে পরিবেশবান্ধব। আজকাল ভবনে কাচের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এর ফলে বাইরের তাপকে আমরা অনেকটাই ঘরের ভেতরে টেনে আনছি। ঢালাওভাবে কাচের ব্যবহার কমাতে পারলে ঘরের ভেতরটা অহেতুক গরম হওয়া থেকে বাঁচে। তবে পর্যাপ্ত রোদের খুব প্রয়োজন। প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ি হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে, যা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

উত্তর-দক্ষিণ মেনে ভবনের নকশা সম্ভব হয়ে না হলে কৃত্রিম আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হয়
উত্তর-দক্ষিণ মেনে ভবনের নকশা সম্ভব হয়ে না হলে কৃত্রিম আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হয়
ঘর রং করার ক্ষেত্রেও সতর্কতা প্রয়োজন। আজকাল এমন অনেক রং পাওয়া যায়, যেগুলো ভেতরের দূষণ শুষে নিতে সাহায্য করে।
ঘর রং করার ক্ষেত্রেও সতর্কতা প্রয়োজন। আজকাল এমন অনেক রং পাওয়া যায়, যেগুলো ভেতরের দূষণ শুষে নিতে সাহায্য করে।

ঘরের বাতাস বিশুদ্ধকরণের ব্যবস্থা প্রাকৃতিক হলে সবচেয়ে ভালো হয়। আটকে থাকা বায়ুর সহজ নির্গমনও দূষণ কমায়। প্রয়োজন হলো বিল্ডিংয়ের সঠিক ওরিয়েন্টেশন। তবে আজকাল জনবসতি বেড়ে যাওয়ার ফলে সব সময় উত্তর-দক্ষিণ মেনে ভবনের নকশা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হয়। আজকাল অত্যাধুনিক মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন সিস্টেম পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ ফিল্টারিং সিস্টেম চালু করা থাকে, যা ক্ষতিকর ধূলিকণা বা অন্যান্য বায়ুবাহিত উপাদান থেকে অন্দরকে রক্ষা করে। ঘর রং করার ক্ষেত্রেও সতর্কতা প্রয়োজন। আজকাল এমন অনেক রং পাওয়া যায়, যেগুলো ভেতরের দূষণ শুষে নিতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞাপন

এবার আসা যাক আসবাবের কথায়। আজকাল অনেক ধরনের আর্টিফিশিয়াল মেটেরিয়ালের আসবাব বাজারে পাওয়া যায়। শুধু দামের কথা না ভেবে পরিবেশের কথাও ভাবা উচিত। এ জন্য আসবাবের ক্ষেত্রে অর্গানিক মেটারিয়াল খুব ভালো একটি পছন্দ হতে পারে। কাঠই ব্যবহার করতে হবে, এমন চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসেছে আজ বিশ্ব। তবে ঘরের ভেতরে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। বাঁশ ও বেতের আসবাব এ ক্ষেত্রে পছন্দের জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে এবং এগুলো পরিবেশবান্ধবও বটে। ঘরের দূষণ কমানোর আরেকটি সহজ সমাধান হলো গাছ লাগানো। নানা জাতের গাছ আজকাল ঘরের ভেতের যথেষ্ট রাখা হয়। সঠিক গাছ পছন্দ করে ঘরে রাখলে অনেকাংশেই তা দূষণ কমিয়ে আনে।

স্থপতি ও জমির মালিক উভয়কেই মাথায় রাখতে হবে, ভবনের বাইরে তো বটেই, ভেতরটাও যেন দূষণমুক্ত থাকে
স্থপতি ও জমির মালিক উভয়কেই মাথায় রাখতে হবে, ভবনের বাইরে তো বটেই, ভেতরটাও যেন দূষণমুক্ত থাকে

একটা কথা স্থপতি ও জমির মালিক উভয়কেই মাথায় রাখতে হবে, ভবনের বাইরে তো বটেই, ভেতরটাও যেন দূষণমুক্ত থাকে। স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বাস্থ্য—এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে সঠিক ও গ্রহণযোগ্য উপায়ে। তাহলে অন্তত এটা মনে হবে না যে সারা দিন আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে টেনে নিচ্ছি অগুনতি ধূলিকণা। আর সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত অন্দর কাজের গতি যেমন বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ, মনকে রাখে প্রফুল্ল আর শরীর থাকে চাঙা। তাই ভবন নকশার সময় সব দিক বিবেচনা করে এমনভাবে কাজ করা উচিত, যেন থাকার জায়গাটি হয় দূষণমুক্ত।

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১৬: ০০
বিজ্ঞাপন