মোগল বাদশাহ মোহাম্মদ শাহর রাজত্বকালে বজরার জায়গিরদার পারস্যের পীর মিয়া আম্বর শাহর নির্দেশে আমানুল্লাহ ও ছানাউল্লাহ ৩০ একর জমিতে একটি দিঘি খনন করেন। দিঘি খননকালে সেখানে একটি গম্বুজ পাওয়া যায়। এ কারণে এই স্থানে এর আগেও মসজিদ ছিল বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে দিঘির পশ্চিম পাড়ে দিল্লির শাহি জামে মসজিদের অনুকরণে ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লাগে ২৬ বছর। বর্তমানে মসজিদটি বজরা শাহি মসজিদ নামে পরিচিত।
নোয়াখালী জেলার উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনার অন্যতম বজরা শাহি মসজিদ। মসজিদটির অবস্থান নোয়াখালী সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে বজরা গ্রামে। চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা, মসজিদের প্রবেশপথটি পূর্ব দিকে। মসজিদে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে জানা যায়, সম্রাট মোহাম্মদ শাহর রাজত্বকালে ১৭৪১ সালে আমানউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি ৩০ একর জমিতে বিশাল এক দিঘির পাশে মসজিদটি গড়ে তোলেন। দিল্লির শাহি জামে মসজিদের আদল দেওয়া হয়। পরে ১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের মাঝামাঝি বজরার জমিদার খানবাহাদুর আলী আহমদ ও খানবাহাদুর মুজির উদ্দিন আহমদ মসজিদটি মেরামত করে সিরামিকের টুকরা দিয়ে সজ্জিত করেন।
মসজিদটির প্রতিটি দরজার ওপর অর্ধগম্বুজাকৃতির ভল্ট এবং মাঝে সরু মিনার রয়েছে। আয়তাকার মসজিদটি উত্তর–দক্ষিণে লম্বা। মসজিদের পূর্ব দিকে তিনটি, উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি দরজা রয়েছে। মসজিদের পূর্ব দিকের মাঝের দরজায় ফারসিতে লেখা একটি ফলকে এর নির্মাণকাল ও নির্মাতার নাম আছে।
মসজিদের ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব অত্যন্ত কারুকার্যময়। মসজিদের চার কোণে চারটি সুন্দর মিনার রয়েছে, যা এর সৌন্দর্যকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। বজরা শাহি মসজিদ নির্মাণে মোগল স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করা হয়। মসজিদের পূর্ব দিকে আছে বিরাট তোরণ। তোরণের দোতলার ওপরে রয়েছে মনোরম উঁচু মিনার। এর সৌন্দর্য ও অলংকরণের জন্য চীনা গ্লাস কেটে মসজিদের গায়ে লাগানো হয়।
মোগল সম্রাট মোহাম্মদ শাহর বিশেষ অনুরোধে মক্কা শরিফের বাসিন্দা সেই সময়ের অন্যতম আলেম হজরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিক ঐতিহাসিক মসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে নিয়োজিত হন। তাঁর বংশধরেরা যোগ্যতা অনুসারে আজও এ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে প্রথম ইমাম সাহেবের সপ্তম পুরুষ ইমাম হাসান সিদ্দিক ওই মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে চলছেন।
১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বজরা শাহি মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষা ও দুর্লভ নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে।
নোয়াখালীর মাইজদী শহর থেকে বজরা শাহি মসজিদের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সোনাইমুড়ীগামী লোকাল বাস অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বজরা শাহি মসজিদে যাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে নোয়াখালী সদরে যাওয়ার পথে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা বাজারে গাড়ি থেকে মূল সড়কে নেমে হেঁটে অথবা রিকশায় করে কয়েক মিনিটে চলে যেতে পারবেন ঐতিহাসিক এ স্থাপনায়।
ছবি: কমল দাশ