ঢাকা শহরে রাস্তার পাশে ময়লা দেয়ালের তো আর অভাব নেই। পানের পিক ফেলা, মলমূত্র বিসর্জন, নান ঢঙের পোস্টার লাগানোর কারণে দেয়ালগুলো বিবর্ণ ও নষ্ট হয়ে যায়। এতে রাস্তার পাশে বসবাসরত মানুষ, পথচারী সবার জন্যই বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।
কিন্তু মিরপুর ১৪ এলাকায় পুলিশ ব্যাটালিয়নের উল্টো দিকের জামে-উল-উলুম মাদ্রাসাসংলগ্ন মূল সড়কে গেলেই দেখতে পাবেন, কী এক নতুন রূপ ধারণ করেছে রাস্তাটি! নোংরা-আবর্জনায় জর্জরিত এই রাস্তা খুব সম্প্রতি পেয়েছে এক নতুন জীবন। গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ফ্ল্যাশমপ নামের এক অনন্য উদ্যোগে অংশ নেওয়া সবার একটানা পরিশ্রমের ফলে সম্ভব হয়েছে কাজটি।
এই প্রসঙ্গে কথা হয়েছে ফ্ল্যাশমপের পরিকল্পনা যিনি করেছেন দেশের সুপরিচিত কার্টুনিস্ট ও চিত্রশিল্পী মোরশেদ মিশুর সঙ্গে। বললেন, প্রায় দেড় বছর আগে থেকেই ঢাকা শহরের নোংরা দেয়ালজুড়ে চিত্রকর্ম এঁকে এর চেহারা পাল্টে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন তিনি। অনেক কাজের চাপেই কোমর বেঁধে নামা হচ্ছিল না। সম্প্রতি শহরের রাস্তার দেয়ালের চেহারা পাল্টে দেওয়া প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন মিশু।
পরবর্তী সময় কাজটির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। উদ্যোগটিকে সফল করতে যাবতীয় লজিস্টিক ও সামগ্রিক সাপোর্ট দিতে ইউএনডিপি বাংলাদেশ ও রং সরবরাহ করতে এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ যথাযথভাবে যুক্ত ছিল।
মোরশেদ মিশু বলেন, ‘ঢাকা শহরের যে নিজস্বতা, আঁকিবুঁকির মাধ্যমে তা দেয়ালে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াসেই এই চিন্তা মাথায় আসে। এই চিত্রকর্মই দেয়ালের ভাষা হতে পারে। দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে যদি আমরা একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি, সেটাই হবে এর সার্থকতা।’ কাজটির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে যুক্ত হয়েছিলেন অনেক পরিচিত মুখ। সংগীতশিল্পী মাশা ইসলাম, নৃত্যশিল্পী হৃদি শেখ, চিত্র ও অভিনয়শিল্পী মাসুদা খানসহ আরও অনেক কার্টুনিস্ট, আর্টিস্ট ও স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন সেখানে।
চাইলেই অনেক কিছু পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করেন আর্টিস্ট মাসুদা খান। তিনি বলেন, ‘উদ্যোগটি পরবর্তী সময় বেশ ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করি। এর মাধ্যমে রাস্তাগুলোকে একটা প্রাণবন্ত রূপ দেওয়া যাবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত এবং সচেতন করা যাবে।’ ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশনস মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো শহরের নাগরিকদের সচেতনতা তৈরি করা যে আমাদের শহরটিকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।’
এই ফ্ল্যাশমপের মতো স্ট্রিট আর্ট বা পথশিল্প হলো শৈল্পিক অভিব্যক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ, যা শহরের রাস্তাগুলোকে রঙিন, আরও সুন্দর ও আধুনিক করে তোলে। সাধারণত এর মাধ্যমে কোনো শিক্ষামূলক বা রাজনৈতিক বিষয়, অনুভূতি, শিল্পীর নিজস্ব আবেগের দ্বারা লালিত কোনো বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পথশিল্পের এই অভিব্যক্তিগুলো একসঙ্গে বহু মানুষের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।