স্টিভ স্মিথের মতো ক্রিকেটার দীর্ঘ সময় ধরে যে শুধু প্রতিভার বদৌলতে সেরা খেলা উপহার দিচ্ছেন, এমনটা ভেবে থাকলে আপনি ভুল ভাবছেন। এর পেছনের অন্যতম প্রধান কারণ কঠোর খাদ্যাভ্যাস রুটিন মেনে চলা, প্রাত্যহিক পর্যাপ্ত ব্যায়াম এবং সেই সঙ্গে প্র্যাকটিস।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক পুরুষদের লাইফস্টাইল–বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ‘মেন অব মেনি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিভ স্মিথ জানিয়েছেন খেলা চলাকালীন এবং খেলার বাইরের সময়ে তাঁর নিত্যদিনের খাবার ও ব্যায়ামের রুটিন। স্মিথ তাঁর তরুণ বয়সে এখনকার তুলনায় ছিলেন বেশ খানিকটা মোটা, যা তাঁর মাঠের পারফরম্যান্সে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলত। পরবর্তী সময়ে নিজের ফিটনেস নিয়ে কাজ শুরু করেন। এখন তিনি তাঁর ডায়েট ও ওয়ার্কআউট পরিকল্পনার মূলে রয়েছে দুটি মৌলিক দর্শন—এক. চরম আত্মত্যাগ এবং দুই. সম্পূর্ণভাবে আচরণগত সচেতনতা।
খাদ্যাভ্যাসেও দুটি বিষয় মেনে চলেন স্মিথ। এক. অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলা এবং দুই. প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ।
ফিট থাকার জন্য স্মিথের নিত্যদিনের ডায়েট প্ল্যানে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক এবার।
সকালে সাধারণত বড় এক বাটি ওটমিলের সঙ্গে স্কিম মিল্ক যোগ করে খেয়ে থাকেন স্মিথ, যা হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, শরীরে বাড়তি শক্তি জোগাতে এবং কোলেস্টেরলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কাজ করে। সেই সঙ্গে প্রাতরাশে প্রোটিন হিসেবে থাকে একটি ডিম। কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও পুষ্টির জোগান দিতে গ্রহণ করেন তাজা ফলের জুস। সবশেষে নাশতায় চা অথবা কফি তো থাকেই।
খেলা না থাকলে নাশতা শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর ফিটনেস ওয়ার্কে মন দেন। পোস্ট ওয়ার্ক আউট খাবারের মেনুতে থাকে প্রোটিন পাউডার ও গ্লুকোজ মিশ্রিত পানীয়। এরপর প্রায় ৪৫ মিনিট পরে গ্রহণ করেন স্ন্যাক্স–জাতীয় খাবার। যার মধ্যে থাকে অল্প চর্বিযুক্ত পনিরের সঙ্গে ওটকেক। স্বাস্থ্যকর এই স্ন্যাক্স সারা দিনের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
দুপুরের খাবারে সাধারণত চিকেন স্যান্ডউইচ অথবা চর্বিহীন মাংস বা সামুদ্রিক কোনো মাছের বড় টুকরা থাকে। সঙ্গে থাকে প্রচুর পরিমাণে সবুজ সবজিযুক্ত সালাদ। আরও থাকে অল্প পরিমাণে মিশ্র বাদাম এবং লো ফ্যাট সমৃদ্ধ দই। সঙ্গে পানি বা অন্য কোনো বেভারেজ তো থাকেই।
নেটে ক্রিকেট প্র্যাকটিসের পরেও সাধারণত কিছু খাবার খেয়ে থাকেন স্মিথ। যার মধ্যে থাকে ওটকেক, মিক্সড সিড এবং কোনো ফল।
ডিনার বা রাতের খাবারে থাকে চর্বিহীন প্রোটিনজাতীয় খাবার। যেমন স্টেক, মুরগির বুকের মাংস বা মাছের মধ্যে কোনো একটা। সাইড ডিশ হিসেবে থাকে সেদ্ধ আলু, অল্প পরিমাণে ভাত বা ভাজা মিষ্টি আলু। সঙ্গে শাকসবজি তো থাকেই। এ ছাড়া মেনুতে থাকে অল্প পরিমাণে কম চর্বিযুক্ত দই।
ফিট থাকতে স্মিথ মেনে চলেন আরেকটি বিষয়। আর তা হলো, বিয়ারের মতো অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলেন সাধারণত। কারণ, এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। আর তাই শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করেন তিনি।
স্বাস্থ্যকর খাবার তথা লো-কার্ব ডায়েটের পাশাপাশি স্টিভ স্মিথ বেশ কঠিন ওয়ার্ক আউটই করে থাকেন। প্রতিদিন সকালে বেশ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার পর শুরু করেন জগিং। ঘণ্টাখানেকের এই পর্ব। বিশ্রাম শেষে শুরু করেন ব্যায়াম। এই সময়ের ক্রিকেটাররা সাধারণত ইন্টারভাল ওয়েট ট্রেনিং (আইডব্লিউটি) করে থাকেন, যা শরীরের মেদ কমানোর পাশাপাশি পেশি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। ইন্টারভাল ওয়েট ট্রেনিং মূলত একটি ক্রস ট্রেনিং মেথড। যার মধ্যে ওয়েট লিফটিংয়ের সঙ্গে থাকে কিছু শারীরিক কসরত।
তিন ধাপে সচরাচর এই ওয়ার্ক আউট করা হয়। প্রথম ধাপে থাকে হাই পুলআপ বা পাওয়ার ক্লিনের সাধারণ ভারোত্তোলন জাতীয় ব্যায়াম। ৮ থেকে ১২ সেটের এই কাজ শেষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফ্রি অ্যারোবিক এক্সারসাইজ। মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে এভাবে চলে দুই ধরনেরই ব্যায়াম। দ্বিতীয় ধাপে থাকে ফ্রন্ট স্কোয়াট বা ব্যাক স্কোয়াটের মতো ওয়েটলিফটিং। এটাও ৮ থেকে ১২ সেটের। এরপর আবার ফ্রি অ্যারোবিক এক্সারসাইজ। এভাবে দুটির সমন্বয়ে কয়েকবারের পর দ্বিতীয় ধাপ শেষে বিরতি দিয়ে শুরু হয় তৃতীয় ধাপ।
তৃতীয় ধাপে থাকে সার্কিট ট্রেনিং। সার্কিট ট্রেনিং হলো ধারাবাহিক ব্যায়ামপ্রক্রিয়া, যার প্রতিটির মধ্যে বিভিন্ন পরিমাণে বিশ্রামের সঙ্গে একের পর এক সম্পাদিত হয়। যার মধ্যে থাকতে পারে পুশ-আপ, সিট-আপ, স্কোয়াট, চিন-আপ, লাঞ্জেস সহ আরও কয়েকটি ব্যায়াম। সার্কিট ট্রেনিংয়ের প্রতি ধাপ সম্পন্ন হবে তিন থেকে পাঁচটি সেটের মাধ্যমে।
খাবার ও ব্যায়াম, সেই সঙ্গে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা—এসবের মিশেলেই স্টিভ স্মিথ ফিট থাকেন। ব্যাট হাতে মাঠে রানের ফোয়ারা ছোটান।