বিশ্ব ডিম দিবস: যে কারণে ডিমের কোনো বিকল্প নেই
শেয়ার করুন
ফলো করুন

দাম কমুক আর বাড়ুক, ডিমের বিকল্প আসলেই নেই। সারা বিশ্বেই পুষ্টিসাধনে ও রোগপ্রতিরোধে ডিমকে চ্যাম্পিয়ন ধরা হয়। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা সব বয়সের সব মানুষকেই নিয়মিত ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অতিমারিকালে করোনা মোকাবিলায় এই ডিম ছিল মানবদেহের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। করোনার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব বা লং কোভিডেও সেই ডিম খাওয়ার বিধানই দেওয়া হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। একনজরে এর পুষ্টিগুণের জানা-অজানা তথ্যগুলো আবারও ঝালিয়ে নেওয়া যাক।

বিজ্ঞাপন

পুষ্টিমানে অনন্য

পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ডিম তার অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে অনেক আগে। আস্ত একটি ডিমে রয়েছে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পুষ্টি উপাদান। একটি বড় সিদ্ধ ডিমে আছে দৈনিক চাহিদার ৬ শতাংশ ভিটামিন এ, ৫ শতাংশ ফোলেট, ৭ শতাংশ ভিটামিন বি ৫, ৯ শতাংশ ভিটামিন বি১২, ১৫ শতাংশ ভিটামিন বি২, ৯ শতাংশ ফসফরাস আর ২২ শতাংশ সেলেনিয়াম। ডিমে আরও রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬, ক্যালসিয়াম ও জিংক। একটি বড় আকারের সেদ্ধ ডিমে আরও আছে ৭৭ ক্যালরি, ৬ গ্রাম প্রোটিন আর ৫ গ্রাম উপকারী ফ্যাট। ফোলেট আর সেলেনিয়ামের প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে ডিমের অবস্থান প্রথমেই।

বিজ্ঞাপন

ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে ডিম

এইচডিএল বা হাই ডেনসিটি লাইপো প্রোটিনকে যে ভালো কোলেস্টেরল বলে, তা আজকাল অনেকেরই জানা। রক্তে ঠিকঠাক পরিমাণ এইচডিএল থাকলে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়। স্ট্রোকও কম হয়। ডিম খেলে কার্যকরভাবে এই ভালো কোলেস্টেরল বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। দেখা গেছে, নিয়মিত ডিম খেলে সাধারণভাবে ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল ছোট ও উচ্চ ঘনত্বের অণু থেকে কিছুটা ক্লাস্টার আকারের বড় আকারে পরিণত হয়, যার ক্ষতিকর প্রভাব রক্তে কিছুটা কম।

ডিমে আছে কোলিন

মানবদেহের জন্য কোলিন একটি অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান। অথচ আমরা যথেষ্ট পরিমাণ কোলিন পাই না খাবার থেকে। এর সম্পর্কে বেশি কিছু জানিও না। দেহের কোষের মেমব্রেন বা ঝিল্লি তৈরিতে এর কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। মস্তিষ্কের সিগন্যাল ধারণকারী অণুগুলোও কোলিনের ওপর নির্ভরশীল। ডিমই হচ্ছে একমাত্র প্রাকৃতিক উৎস, যাতে ১০০ মিলিগ্রামের চেয়েও বেশি কোলিন রয়েছে।

চোখের যত্নে ডিম

লুটেইন আর যেক্সানথিনের মতো অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে ডিমে। চোখ ভালো রাখে গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদানগুলো। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে এলে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। উপরে উল্লেখ করা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দুটো চোখের রেটিনা ভালো রাখে বলে জানা যায়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত ডিম খান, তাদের চোখে ছানি আর ক্ষয়িষ্ণু দৃষ্টির সমস্যা কম হয়। ভিটামিন এ থাকার কারণেও ডিম চোখের জন্য উপকারী।

আমিষের সর্বোত্তম উৎস

যত ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে, এর সবই আছে ডিমে। আর অ্যামাইনো অ্যাসিড যে প্রোটিনের গাঠনিক উপাদান, তা অনেকেই জানেন। সেভাবে চিন্তা করলে পুরো দেহের বাইরে ও ভেতরে সবকিছুই অ্যামাইনো অ্যাসিডের গাঁথুনিতে গড়া। ডিমে শুধু উচ্চমানের আমিষ আছে তা–ই নয়, সব অ্যামাইনো অ্যাসিড এতে আছে সঠিক অনুপাতে। তাই শরীরের বৃদ্ধি, ক্ষয় পূরণ, রোগপ্রতিরোধ—এ সবকিছুতেই অত্যন্ত সহায়ক ডিম।

ওজন নিয়ন্ত্রণে ডিম

বর্তমান সময়ে আধুনিক বিশ্বে মরবিড ওবেসিটি বা ক্ষতিকর স্থূলতা এক বড় সমস্যার নাম। ডিম পেট ভরায় কম ক্যালরিতে। মাংসপেশি গড়ে তুলে চর্বির দৌরাত্ম্য কমাতে পারে ডিম। সকালের নাশতায় বা বিকেলের স্ন্যাকসে ডিম আদর্শ হাই প্রোটিন খাদ্য। সাধারণভাবে নীরোগ দেহের জন্য ডিমের কোনোরকম ক্ষতিকর প্রভাব নেই। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে তেল ছাড়া সেদ্ধ বা পানি পোচ ইত্যাদি পদ বেছে নেওয়া ভালো।
সূত্র: হেলথলাইন

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৮: ০০
বিজ্ঞাপন