বাসাবাড়িতে কীটনাশক ব্যবহারে যে সতর্কতাগুলো মানতেই হবে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আমাদের দেশের কলকারখানায় পেস্ট কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্টের (কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা) সঠিক নিয়মগুলো যতটা গুরুত্ব সহকারে মেনে চলা হয়, ঠিক যেন ততটাই অবহেলিত আমাদের বাসাবাড়িতে। কীটপতঙ্গের ধরনের ওপর নির্ভর করে এর নিয়ন্ত্রণের কার্যপ্রণালি ও ব্যবহারবিধিও একেক রকম হয়। সহজভাবে যদি বলা যায়, কোনো গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির বড় গুদামে তেলাপোকা, ইঁদুর, উইপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো কি বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা যাবে? সহজ উত্তর-না।

কারণ, বাসাবাড়িতে সব সময় মানুষের আনাগোনা থাকে। যেখানে নবজাতক থেকে বয়োবৃদ্ধ মানুষের বসবাস। সে জন্যই পেস্ট কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্টের সঠিক নিয়ম না মানলে ঘটতে পারে মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা। পেস্ট কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্টের দিকনির্দেশনায় বাসাবাড়িতে কোন কোন কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে, কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে আর কত দিন পর পর ব্যবহার করা যাবে—এ বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে। আর এগুলো ব্যবহারের আগে বাসায় যাঁরা থাকবেন, তাঁদের ব্যবহারবিধি ও সংরক্ষণবিধি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

বাসায় কীটনাশক ব্যবহারবিধি

* প্রথমেই জানতে হবে আমরা কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করব ও কিনব। কীটনাশক কেনার আগে প্যাকেটজাত বা বোতলজাতের মোড়কে বাসায় ব্যবহার করার জন্য বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কি না, তা দেখতে হবে। কেনার সময় অবশ্যই মোড়কে লেখা ব্যবহারবিধি দেখে কিনতে হবে।

* কোনো পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানির ওপর চোখ বন্ধ করে নির্ভর না করে জেনে নিতে হবে তারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পর্যায়ে ব্যবহারযোগ্য কীটনাশক ঘরে ব্যবহার করছে কি না বা অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করছে কি না। পণ্যটির নাম ও বিবরণ না জেনে প্রয়োগ করতে দেওয়া যাবে না।

* কীটনাশক তরল, পাউডার, স্প্রে—যে ধরনেরই হোক অবশ্যই গ্লাভস, মাস্ক, হেড কভার ব্যবহার করে ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহার শেষে সেই মাস্ক, গ্লাভস, হেড কভার ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।

* বাসায় কীটনাশক নির্দিষ্ট জায়গায় চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করতে হবে, শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

* মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।

* কীটনাশক যেখানেই রাখা হোক না কেন, সেখানে কোনো রকম খাদ্যদ্রব্য যেন না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

* ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে স্থানে কীটনাশক না রাখাই উত্তম। এতে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কীটনাশকের গুণগত মান খারাপ হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থেকে যায়।

বিজ্ঞাপন

কীটনাশকে যে যে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়

বর্তমানে দেশে ৯২টি রাসায়নিক গ্রুপের ৩৭৭টি বালাইনাশক বাজারজাতকরণের জন্য নিবন্ধিত আছে)। জাত-উপজাত সব মিলিয়ে একেক ধরনের কীটপতঙ্গের জীবননাশের উদ্দেশ্যে এই কীটনাশক তৈরি করা হয়। কীটনাশক সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের আইন রয়েছে, যা বালাইনাশক (পেস্টিসাইডস) আইন, ২০১৮ হিসেবে পরিচিত। ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলোর নাম আসলে জনসম্মুখে না আনাই ভালো। কারণ, এতে অসৎ লোকেরা সেগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহার করে আরও বেশি পরিমাণ ক্ষতির শিকার করবে সাধারণ মানুষকে।

বাসায় কীটনাশক কম ব্যবহার করার উপায়

* বাসাবাড়িতে যদি আমরা নিয়মিত ঘর পরিষ্কার রাখি, বিশেষ করে, রান্নাঘর ও স্টোররুম— তাহলে তেলাপোকার উপদ্রব অনেকাংশে কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে একটা রুটিন ওয়ার্কের মাধ্যমে যদি আমরা লিকুইড ক্লিনার (ফ্লোর ক্লিনার, ওয়াল ক্লিনার কিংবা যেকোনো অ্যান্টিসেপ্টিক লিকুইড) দিয়ে যদি নিয়মিত পরিষ্কার করি, তাহলে দেখা যাবে অনেকাংশেই কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন কমে যাবে।

* পরিচ্ছন্নতাই সবচেয়ে বড় বিষয়। রান্নাঘর, স্টোররুম, ওয়াশরুমসহ ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে হবে রুটিন ধরে। এঁটো থালাবাসন ফেলে রাখা যাবে না রাতভর।

* বাসাবাড়ি বা যেখানেই হোক, প্রথম করণীয় হলো কীটনাশক ব্যবহারবিধি ও সংরক্ষণবিধি মেনে চলা। কোনোভাবেই কীটনাশক হেলাফেলায় রাখা যাবে না। আর ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যাবে না।

* অনেকেই প্রাকৃতিক উপায়ে কীটনাশক দমনের উপাদান বাসাবাড়িতে ব্যবহার করে থাকেন। তেজপাতা, গোলমরিচ, শুকনা মরিচ, লবঙ্গ ইত্যাদি ব্যবহার করে অনেক সময় কার্যকর ফল পাওয়া যায় বাসাবাড়িতে পোকামাকড় দমনে।


লেখক: কেমিকৌশল প্রকৌশলী এবং সংযোগ-কানেক্টিং পিপল নামক সেবামূলক সংস্থার প্রধান

ছবি: ইনস্টাগ্রাম

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩, ১০: ০৯
বিজ্ঞাপন