বাড়িতে শোভা বর্ধন করে নানা রকম গাছ। তবে ঘরের ভেতরের সতেজতা বজায় রাখতে বায়ু পরিশোধনকারী ইনডোর প্ল্যান্টের জুরি নেই। নাসার মতে, কিছু উদ্ভিদ ঘরের ক্ষতিকারক টক্সিন শোষণ করতে পারে, যা অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের একটি প্রাকৃতিক সমাধান। প্রাকৃতিক হিউমিডিফায়ার হিসেবেও দারুণ কাজ করে।
এই চমৎকার উদ্ভিদের সাদা ডোরাযুক্ত লম্বা লম্বা পাতা অনেকটাই মাকড়সার পায়ের সঙ্গে মিল রয়েছে। ঝুলন্ত টবে স্পাইডার প্ল্যান্ট বসার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে। এই গাছ রং এবং কৃত্রিম কাপড় থেকে কার্বন মনোক্সাইড, বেনজিন, ফরমালডিহাইড, জাইলিন ও টলুইনের মতো বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক নির্মূল করতে পারে। খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন নেই। আর্দ্র স্থান ও মাঝারি তাপমাত্রা (১৩-২৭ সেলসিয়াস) স্পাইডার প্ল্যান্টের জন্য ভালো। খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এরা। তবে বেবি স্পাইডার প্ল্যান্টে মাঝেমধ্যে পানি দিতে হয়। একবার বড় হয়ে গেলে পরিমিত পানি দিলেই হবে।
মোমযুক্ত চকচকে পাতার গাছটি গৃহপালিত গাছ হিসেবে জনপ্রিয়। রবারগাছ ফরমালডিহাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও ট্রাইক্লোরিথিলিনের মতো বিষাক্ত পদার্থগুলো ফিল্টার করে এবং অভ্যন্তরীণ বায়ুর গুণমান উন্নত করে। শক্তিশালী বায়ু পরিশোধনকারী গাছটি মাঝারি তাপমাত্রায় (১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রাখলে ভালো। মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে পরিমিত পানি দিতে হবে। খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এই গাছ। তবে বাড়িতে যদি কোনো পোষ্য থাকে, যেমন বিড়াল ও কুকুরের জন্য এই গাছ বিষাক্ত।
সাপের মতো আকৃতি এই গাছের। তাই নামটাও স্নেক প্ল্যান্ট। গাছের পাতার গঠন এবং অনন্য ডোরাকাটা নকশার জন্য এই গাছকে সেন্ট জর্জের তলোয়ার ও শাশুড়ির জিবের মতো আকর্ষণীয় নামেও ডাকা হয়। গাছটি অক্সিজেন উৎপাদন, কম আলোতে বা রাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করার মতো গুণ রয়েছে। তবে বিড়াল ও কুকুরের জন্য বিষাক্ত হতে পারে স্নেক প্ল্যান্ট। মাটির পাত্রে এই গাছ সবচেয়ে ভালো থাকে এবং সপ্তাহে একবার পানি দিলেই হয়। ঠান্ডা তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না স্নেক প্ল্যান্ট, তাই আলোতে রাখতে হবে। আদর্শ তাপমাত্রা হলো ২১-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গোল্ডেন পোথোস নামটা অপরিচিত অনেকের কাছে, তবে পরিচিত নাম হলো ‘মানি প্ল্যান্ট’। শয়তানের আইভি, এই নামেও অনেক জায়গায় গাছটি পরিচিত। সবচেয়ে কার্যকর ইনডোর এয়ার পিউরিফায়ারগুলোর মধ্যে এটি একটি। কম আলোতেও ভালোভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। অফিস, অন্ধকার কক্ষ বা বাথরুমে খুব সহজেই রাখা যাবে এই গাছ। আর তেমন কোনো পরিচর্যার দরকার হয় না। মাটি কিংবা পানি—দুভাবেই একে রাখা যায়। তবে মাটি শুকিয়ে গেলেই পানি দেওয়া জরুরি। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদটি উষ্ণ তাপমাত্রা পছন্দ করে। গ্রীষ্ম ও বসন্তকালে একবার মাটিতে সার দিতে পারলে ভালো। পোথস ক্ষতিকারক বায়ুদূষণকারী যেমন ফরমালডিহাইড, জাইলিন, টলুইন, বেনজিন ও কার্বন মনোক্সাইড শোষণ করে। ঝুলন্ত টবে এই গাছ দেখতে সবচেয়ে সুন্দর। তবে মনে রাখতে হবে, যেকোনো গাছ পোষা প্রাণীর নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
নাসার গবেষণামতে, পিচ লিলি ফরমালডিহাইড, বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, জাইলিন—এমনকি অ্যামোনিয়ার মতো ক্ষতিকারক দূষণকারী উপাদানগুলো দূর করে। তাই ঘরে শোভাবর্ধনের পাশাপাশি বায়ু পরিশোধনকারী উদ্ভিদ হিসেবেও অনেকে ঘরে রাখেন। রক্ষণাবেক্ষণেরও ঝামেলা নেই। গাছটি উত্তরমুখী জানালার সামনে রাখতে পারেন, তবে সরাসরি সূর্যালোক পেলে শুকিয়ে যাবে। আর্দ্রতা ধরে রাখতে মাঝেমধ্যে পানি দিতে হবে। গাছটির সাদা ফুল এবং চকচকে টিয়ার আকৃতির পাতাগুলো বাড়িতে শান্তির প্রশান্তি ছড়িয়ে দেবে। তবে এটি পোষা প্রাণী এবং শিশুদের জন্য হালকা বিষাক্ত হতে পারে।
অ্যালোভেরার আরেক নাম ঘৃতকুমারী। নানা উপকারের জন্য সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় হাউস প্ল্যান্টগুলোর মধ্যে এটি একটি। ত্বকের উপকারিতা এবং ঔষধি ব্যবহারের জন্যও এটি বেশ পরিচিত। যেহেতু ঘৃতকুমারী রসাল প্রজাতির উদ্ভিদ, তাই ঘন ঘন পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ১০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালো বৃদ্ধি পায় গাছটি । বাতাস থেকে বেনজিন, ফরমালডিহাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিকগুলোও ফিল্টার করতে পারে এই গাছ। তবে এটি পোষা প্রাণী-বান্ধব নয়।
চায়নিজ এভারগ্রিন; অর্থাৎ চিরসবুজ এই গাছের বিচিত্র রঙিন পাতাই সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য। এটি বৃক্ষপ্রেমীদের প্রিয় হাউস প্ল্যান্টও বলা যায়। আলো ও ছায়া—দুটিই সহ্য করতে পারে এই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদ। শুধু পানি স্প্রে করলেই চলে, যেন মাটি আর্দ্র থাকে। তবে এটি জলাবদ্ধ হতে দেবেন না। এতে শিকড় পচে যাবে। যেহেতু এই গাছ উষ্ণতা পছন্দ করে, তাই দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ১৮-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার চেষ্টা করুন। চায়নিজ চিরসবুজ গাছ উজ্জ্বল আলো পছন্দ করে। রান্নাঘর বা লিভিং রুমের সমতল দেয়ালের বিপরীতে একটি সুন্দর বৈসাদৃশ্য নিয়ে আসবে। তবে এটিও কুকুরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
ছবি: পেকজেলসডটকম