বিশ্ব হাতি দিবসে জেনে নিন হাতি সম্পর্কে ১০টি অবাক করা তথ্য
শেয়ার করুন
ফলো করুন

এই তো কয়েক দিন আগে রেললাইনে আটকে মারা গেল হাতিশাবক। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় হাতির পালের চরম খাদ্যাভাব দেশে। নগরীতে দেখা মেলে চাঁদাবাজিতে বা শখের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত রুগ্‌ণ, দুর্দশাগ্রস্ত হাতিদের। কিছুই কি করার নেই আমাদের এ ব্যাপারে?

আজ বিশ্ব হাতি দিবস। দিবসটি পালনের মূল লক্ষ্য হলো হাতিদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষাবিষয়ক সচেতনতা গড়ে তোলা। হাতির আবাসস্থলের ক্ষতি, হাতির দাঁতের চোরাচালানসহ নানা কারণে অস্তিত্বের সংকটে পড়ছে হাতিরা। তাই জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২ সালে কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা প্যাট্রিসিয়া সিমস ও মাইকেল ক্লার্ক আর থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট রিইন্ট্রোডাকশন ফাউন্ডেশন মিলে বিশ্ব হাতি দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় এবং এর পর থেকেই প্রতিবছর ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস পালিত হয়ে আসছে।


প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট থিমকে কেন্দ্র করে পালিত হয় হাতি দিবস। এ বছরের হাতি দিবসের থিম হলো ‘অবৈধ বন্য প্রাণী বাণিজ্যের সমাপ্তি’। এ থিমটি হাতির দাঁত ও অন্যান্য পণ্যের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করার ওপর গুরুত্বকে তুলে ধরে৷ কারণ, অনুমান করা হয়, প্রতিবছর শুধু মূল্যবান দাঁতের জন্য প্রাণ যায় প্রায় ২০ হাজার হাতির। তাই আমাদের সবার উচিত হাতির সুরক্ষাবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসা।
চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক এই চিরচেনা প্রাণী সম্পর্কে ১০টি মজার ও অদ্ভুত তথ্য।

বিজ্ঞাপন

১. হাতি কখনো কিছু ভোলে না

আপনি-আমি হয়তো হুটহাট কোনো কাজের ডেডলাইন ভুলে যাই, বন্ধুদের জন্মদিন ভুলে যাই, ক্লাসের পড়া ভুলে যাই, তবে ডাঙার সবচেয়ে বড় প্রাণীটি কিন্তু কিচ্ছু ভোলে না! এর কারণ হলো স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে হাতির মস্তিষ্ক সবচেয়ে বড়। শুধু তা-ই নয়, গবেষণায় দেখা যায়, তাদের মস্তিষ্কে পিরামিডাল নিউরনের সংখ্যা মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে বেশি৷ এই নিউরনগুলো মানুষের তথ্য মনে রাখা ও এর অর্থ তৈরি করার কাজ করে। বহু বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও কোথায় কোন জলাশয় আছে, কবে কোন হাতি বা মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছিল—সব মনে থাকে তাদের। শুধু তা–ই নয়, হাতিরা তাদের সব তথ্য ভাগাভাগি করে নেয় তাদের পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে।

২. পা দিয়েও শুনতে পারে হাতি

হাতিরা নাক ডাকা, গর্জন করা, কান্না করাসহ নানা ধরনের শব্দ করে থাকে। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে হাতি পা দিয়ে শুধু হেঁটেই চলে না, বরং তারা শুনতেও পায় পায়ের সাহায্য। তাদের পায়ের তলায় থাকা স্নায়ুকোষগুলো ২০ মাইল পর্যন্ত শব্দের কম্পাঙ্ক টের পায়। যে কারণে দূরে কোনো বিপদ থাকলে, তা আগেই আঁচ করতে পারে হস্তির দল।

বিজ্ঞাপন

৩. চমৎকার সাঁতারু হাতি

হাতিকে পানিতে খেলা করতে, নিজেদের ও অন্যদের শুঁড় দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিতে তো আমরা সবাই দেখেছি, তবে অবাক করার বিষয় হলো সাঁতারেও পারদর্শী বিশালাকার প্রাণীটি। হাতি তার শক্তিশালী পা ব্যবহার করে সাঁতার কেটে থাকে। সাঁতার কাটা হাতিদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অনেক সময় খাবারের সন্ধানে তাদের নদী ও হ্রদ অতিক্রম করতে হয়।

৪. হাতি ব্যবহার করে সানস্ক্রিনও

শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে হাতিরা নিজেদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষার চেষ্টা করে! বাইরে থেকে হাতির চামড়া শক্ত দেখালেও হাতির ত্বক সংবেদনশীল, যা রোদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি প্রতিরোধ করার জন্য হাতিরা নিজেদের ওপর মাটি নিক্ষেপ করে। প্রাপ্তবয়স্ক হাতিগুলো ছোট হাতিদের ধুলায় মাখায়। নদী থেকে বেরিয়ে আসার সময় তারা সুরক্ষার স্তর হিসেবে নিজেদের ওপর কাদামাটি মাখে।

৫. গণিতে পটু হাতি

হাতিদের গাণিতিক দক্ষতা রয়েছে। জাপানের গবেষকেরা এশিয়ান হাতিদের কম্পিউটার টাচ স্ক্রিন প্যানেল ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিনটি হাতির মধ্যে একটি হাতি তার সামনে বিভিন্ন পরিমাণের সামগ্রী উপস্থাপন করার পর সঠিক উত্তরটি বেছে নিতে পেরেছিল। এক গবেষণায় দেখা যায়, এশিয়ান হাতির জন্য গড় আই কিউ. ২.১৪এবং আফ্রিকান হাতিদের ১.৬৭।

৬. মৃত হাতিদের সম্মান করে হাতিরা

হাতিদের বরাবরই মৃত হাতিদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে কোনো পারিবারিক সম্পর্ক না থাকলেও তারা মৃত হাতির গন্ধ নেওয়ার ও স্পর্শ করার চেষ্টা করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাতিরা মৃত হাতিদের সাহায্য করার চেষ্টা করে ও অন্যদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকে। এমনকি একটি হাতি মারা যাওয়ার অনেক দিন পরও হাতিরা ফিরে এসে এবং তাদের পা ও কাণ্ড দিয়ে অবশিষ্ট হাড়গুলোকে স্পর্শ করে।

৭. গুরুজনদের ছাড়া চলতে পারে না হাতিরা

হাতিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য তারা পেয়ে থাকে তাদের গুরুজনদের থেকে। তাই অল্প বয়সী হাতিদের তাদের পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে তারা জীবনধারণের সব নিয়মকানুন শিখতে পারে। প্রবীণেরা তাদের জ্ঞান অল্প বয়সী হাতিদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়। কোথায় খাবার ও পানি পাওয়া যায় থেকে শুরু করে বিপদে পড়লে কী করতে হয়—এর সবকিছুই হাতিরা তাদের বড়দের থেকে শেখে।

৮. হাতিরাও ভুগতে পারে পিএসটিডি-তে

অনেকেই কোন ভীতিকর ও কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেলে পিএসটিডি বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হয়। আমরা জানি যে হাতিরা সংবেদনশীল প্রাণী। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দৃঢ় বন্ধন। এ ছাড়া তাদের স্মৃতি দীর্ঘ। তাই সহজেই বোঝা যায় যে হাতিরা দুঃখ–কষ্ট অনুভব করতে পারে। শিকারীদের হাতে তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার মতো ভয়াবহতা দেখে তাদের পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

৯. ভাষার পার্থক্য ধরতে পারে হাতিরা

হাতি মানুষের যোগাযোগ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। কেনিয়ার অ্যাম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্কের গবেষকেরা দুটি ভিন্ন দলের কণ্ঠস্বর হাতিদের সামনে বাজিয়ে একটি পরীক্ষা করেছেন, যার মধ্যে একটি দল হাতিদের শিকার করে এবং অন্যটি করে না। হাতিরা যখন শিকারী দলটির কণ্ঠস্বর শোনে, তখন তারা ভয়ে আঁটসাঁট হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া একটি এশিয়ান হাতি কোরিয়ান ভাষায় শব্দ অনুকরণ করতে শিখেছে।

১০. বিপদের বন্ধু হাতি

হাতিরা অত্যন্ত সামাজিক ও বুদ্ধিমান প্রাণী। তারা মানুষের মতোই সহানুভূতি, দয়া ও পরার্থপরতা প্রকাশ করে। একটি সমীক্ষায় গবেষকেরা দেখেছেন যে যখন একটি হাতি যন্ত্রণাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তখন আশপাশের অন্য হাতিরা স্পর্শের মাধ্যমে সাড়া দেয় ও সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩, ১২: ১৮
বিজ্ঞাপন