স্টারবাকসকে যেভাবে বোকা বানিয়েছে সাত্তার মিয়া
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনায় আছে। আছে নানা জল্পনাকল্পনা। এমনকি কিছু মজার দাবিও। অনেকেই অনেক কিছু ফেরত চাইছেন তাদের কাছ থেকে। এরই মধ্যে তুমুল আলোচনায় এখন পাকিস্তানের ‘সাত্তারবাকস’ ক্যাফে।

কোথাও কি মিল আছে আসলে?
কোথাও কি মিল আছে আসলে?

সাত্তারবাকস ক্যাফে। পাকিস্তানের ব্যস্ত শহর করাচিতে ২০১২ সালে এই ক্যাফের যাত্রা শুরু। তখন কেবল স্টার্টআপ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে তরুণ প্রজন্ম। পাকিস্তানের কজন তরুণ এমন ক্যাফে তৈরির কথা ভাবলেন, যেখানে কেবল কফির কাপে চুমুক নয়, হবে চিন্তার আদানপ্রদানও। এই ভাবনা থেকেই জন্ম ক্যাফে সাত্তারবাকস–এর। ক্যাফের লোগো ও নাম হঠাৎ দেখলে আমেরিকার বিখ্যাত ফুড চেইন স্টারবাকস–এর সঙ্গে মিল আছে বলে মনে হয়। এ জন্য প্রথমে সবাই একে স্টারবাকস–এর কপি হিসেবে ধরে নেয়। অবশ্য ব্যাপারটি একেবারেই তা ছিল না।

বিজ্ঞাপন

এই ক্যাফের মেনু বেশ মজার। বার্গারে বানের ওপরের অংশ নেই। এই বার্গারের নাম তাই রাখা হয়েছে ‘বেশরম বার্গার’, যার মাথায় কাপড় নেই! আবার পিৎজার একপাশে আমিষ ও অন্যপাশে নিরামিষ অংশ রেখে বানানো হয়। আরেক পিৎজার নাম ‘দেহশাদগার্দ পিৎজা’, এর নিচে আবার লেখা—নাম এমন হলেও এ পিৎজা দেশদ্রোহী নয়! এর প্রতীকী অর্থ হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। এ ছাড়া বন্ধুদের আড্ডার জন্য বানানো হয়েছে ‘বাত্তমিজ বার্গার’। এর বাংলা করলে দাঁড়ায় বেয়াদব বার্গার। মেনুর প্রতিটি পদেরই আছে এমন মজার সব নাম।

সাত্তারবাকস ক্যাফে
সাত্তারবাকস ক্যাফে

শুধু মেনু নয়, ক্যাফের নকশাও একেবারেই অন্য রকম। চিত্রকর্ম, রাজনৈতিক গ্রাফিতি, সমাজসচেতন ক্যাম্পেইনের পোস্টার ও স্থানীয় শিল্পীদের তৈরি হস্তশিল্প দিয়ে সাজানো। এখানে কেউ এসে কফি খেতে পারেন, আবার চাইলে কবিতা পাঠ, নাটক মঞ্চায়ন, এমনকি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। সাত্তারবাকস কেবল একটি কফি শপ নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে এক মুক্ত মতপ্রকাশের কেন্দ্র। এই ক্যাফেতে সমসাময়িক রাজনীতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে বরাবর। মেনুর বিভিন্ন পদের নামেও সমসাময়িক রাজনীতি ও বিতর্কিত বিষয়ের ছাপ স্পষ্ট।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানের তরুণ সমাজ তৈরি হয় রক্ষণশীলতার মধ্য দিয়ে। ধর্মীয় আচার মেনে, বিধিনিষেধ অনুসরণে সব সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাদের। এ রকম একটি দেশে সাত্তারবাকস–এর মতো একটি ক্যাফে সত্যিই সাহসী পদক্ষেপ। এই ক্যাফে আদতেই ক্যাফে কালচারের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া পুঁজিবাদী সমাজকে প্রতিনিয়ত বিদ্রূপ করে চলেছে।

এই পিৎজা নিরীহ, দেশদ্রোহী নয়
এই পিৎজা নিরীহ, দেশদ্রোহী নয়

এমনকি ২০১৪ সালে নাম ও লোগো নিয়ে এক আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনও হয় সাত্তারবাকস। স্টারবাকস থেকে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। এতে অভিযোগ করা হয়, তারা স্টারবাকস–এর ব্র্যান্ড লোগো নকল করেছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা এই অভিযোগকে ভুল প্রমাণিত করেন। পুরোনো নথিপত্র ঘেঁটে জানান, প্রায় এক হাজার বছর আগে পাকিস্তানে সাত্তারবাকস নামে এক ব্যক্তির বাস ছিল। ক্যাফেটির নাম দেওয়া হয়েছে তাঁর নামে। এরপর স্টারবাকস আর টুঁ শব্দটি করেনি; উল্টো তাদেরকেই তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। কারণ, হিসেবমতো এই ফুড চেইনের জন্ম তো মাত্র বছর পঞ্চাশ আগে। তাহলে এটিই অন্য কোনো প্রাচীন ব্র্যান্ডের নকল নয় তো? এভাবে বিদ্রূপ করে সাত্তারবাকসের উদ্যোক্তারা বলেছেন, তাঁরা নকল করেননি, ব্যঙ্গ করেছেন। তবে সাত্তারবাকসের নাম নিয়ে আছে আরও বিতর্ক। অনেকেই দাবি করেন সাত্তারবাকস নামের গোঁফওয়ালা এক ব্যক্তি এই ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিজের নামে। লোগোর ছবিটি তাঁরই।

নামের উৎস যা-ই হোক না কেন, ক্যাফের ধারণাকে কেন্দ্র করে এমন একটি মুক্তচিন্তার জায়গা তৈরি করতে পারাটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। সমাজের গতি পরিবর্তনে সব সময় রক্তক্ষয়ী বিপ্লব প্রয়োজনীয় নয়, বরং একটি  ক্যাফেও সমাজের চিন্তা চিরাচরিত ধারাকে ঠাট্টার ছলে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এরই এক উজ্জ্বল নজির ক্যাফে সাত্তারবাকস।

ছবি: সাত্তারবাকসের ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডল থেকে

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬: ০০
বিজ্ঞাপন