দেহের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি নিয়ে কমবেশি আমরা অনেকেই চিন্তিত। শুধু স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নয়, দৈহিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে, ওজন কমাতে ও ফিটনেস ধরে রাখতে নারী-পুরুষ উভয়ই বিভিন্ন ধরনের ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করে থাকেন। এর জন্য প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি থাকলেও চটজলদি ওজন কমাতে বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা সংক্ষেপে আইএফ ডায়েট। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দ্রুত ওজন ঝরাতেই হয়, তবে এটিই সবচেয়ে নিরাপদ।
দ্রুত ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কার্যকরী একটি পদ্ধতি। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং হলো দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকার ডায়েট। নারী ও পুরুষভেদে এই না খেয়ে থাকার সময়সূচি আলাদা। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ে বেশ কয়েকটি নিয়ম অনুসরণ করা হয়। যেমন ১২: ১২ ঘণ্টা, ১৪: ১০ ঘণ্টা, ১৬: ৮ ঘণ্টা ফাস্টিং। এর অর্থ যথাক্রমে দিনের ১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে এবং পরবর্তী ১২ ঘণ্টা ইচ্ছেমতো খাওয়া যাবে। অথবা ১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে পরবর্তী ১০ ঘণ্টা ইচ্ছেমতো খাওয়া অথবা ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে পরবর্তী ৮ ঘণ্টা ইচ্ছেমতো খাদ্য গ্রহণ। এই ফাস্টিং দুই ধরনের হতে পারে, ওয়াটার ফাস্টিং অথবা ড্রাই ফাস্টিং। যদি ওয়াটার ফাস্টিং করা হয়, তবে উপবাসের সময়টুকুতে পানি খাওয়া যাবে। ড্রাই ফাস্টিংয়ে সম্পূর্ণ উপোস থাকতে হবে।
এই ডায়েটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো খাবারের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বিধিনিষেধে থাকে না। অর্থাৎ শর্করা, আমিষ, চর্বি—সব ধরনের খাবার গ্রহণ করা যাবে। তবে সত্যিই দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে শর্করা ও চর্বি–জাতীয় খাবার পরিমাণে অল্প খেতে হবে।
ফাস্টিং ক্ষুধা উদ্রেককারী হরমোন নিঃসরণে প্রভাব ফেলে অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা আমাদের বারবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। এর ফলে সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে আমাদের শরীর জমিয়ে রাখা চর্বি খরচ করে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর ফলে পুরোনো ও জমে থাকা ফ্যাট ঝরে গিয়ে শরীরের ওজন কমে যায়।
তা ছাড়া এ ধরনের অভ্যাস মেনে চলার অনেক উপকার রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার খেলে ক্যালরি কম গ্রহণ করা হয়। এতে বিপাকের হার ঠিক থাকে। এ ছাড়া গবেষণায় দেখা যায়, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোলেস্টেরল হ্রাস পায় এবং অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
তবে এ ধরনের ডায়েট অনুসরণ করার আগে অবশ্যই কোনো অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ান কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, রোগের ধরন, রোগে ভোগার সময়কাল—ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ফাস্টিংয়ের ধরন আর সময়কাল নির্ধারিত হয়। শুরুতেই কঠিন ধাপে যাওয়া ঠিক নয়।
এ ক্ষেত্রে ৮ ঘণ্টা উপবাস থেকে শুরু করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ রকম কিছু নিয়ম মেনে চললে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে।
ছবি: পেকজেলসডটকম