নুডলস দিবস স্পেশাল: আমাদের নুডলস সংস্কৃতিতে কোকোলা নুডলস থেকে কোরিয়ান রামেন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

নুডলসের সঙ্গে যেন আমাদের সব বয়সের মানুষের আবেগ জড়ানো আছে। ছোটবেলায় বিকেলের নাশতায় মায়ের হাতে বানানো নুডলস এখনো আমাদের প্রিয় খাবার। বাসায় অতিথি এলে ঝটপট নাশতার পদ হিসেবে নুডলস খুব জনপ্রিয়।
যাঁরা পরিবারের সঙ্গে থাকেন, তাঁদের জন্য নুডলস শুধুই নাশতামাত্র। তবে যাঁরা হোস্টেল বা মেসে থাকেন বা ব্যাচেলর জীবন কাটান, তাঁদের কাছে এটি যেন বিপদে পরম বন্ধু আর সব সমস্যার সমাধান।

রাত জেগে পড়ার সময়, জ্বর-ঠান্ডায় খেতে অরুচি হলে, মাস শেষে টাকার সংকটে কিংবা কখনো রাতের একমাত্র খাবার হিসেবে নুডলসই যেন হয়ে ওঠে শেষ ভরসা। হাতের কাছে পাওয়া একটু সবজি, পেঁয়াজ, ডিম দিয়ে ঝটপট বানিয়ে ফেলা যায় বলেই খাবারটি এত জনপ্রিয়। তবে কিছু না থাকলেও একটু পানি বেশি দিয়ে স্যুপের মতো বানিয়ে ইনস্ট্যান্ট নুডলস খেয়ে নেওয়া যায় অনায়াসে। খেতেও দারুণ লাগে।

বিজ্ঞাপন

এ দেশে নুডলসের প্রচলন ঘটে মূলত সত্তরের দশকে। শহরের নামীদামি চীনা রেস্তোরাঁয় চাওমিন নামেই তা মিলত বেশি। আর বাজারে পাওয়া যেত ড্রাগন নুডলস। সেটি সেদ্ধ করে নানা সবজি, ডিম, সস আর স্বাদমতো লবণ দিয়ে ঘরে ঘরে রান্নার প্রচলন শুরু হয়। নুডলস রান্নার স্টাইলটিকে ইন্দো-চাইনিজ বা হাক্কা নুডলস বলা যায়। এরপর প্রথম ইনস্ট্যান্ট নুডলস নিয়ে আসে ফুজি কোম্পানি। তখন মুরগিছানার ছবিওয়ালা ফুজি নুডলসের প্যাকেটটি যেন এক আনন্দের উৎস ছিল বিকেলে খেলা শেষে বাড়িফেরত ছেলেমেয়েদের জন্য।

এরপর ম্যাগি এসে ইনস্ট্যান্ট নুডলসের বাজারে একাই রাজত্ব করেছে বহু বছর। কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে নুডলস বলতে শুধু কোকোলা আর ম্যাগিই বুঝতাম সবাই। তবে এখন বাজারে পাওয়া যায় নানা ধরনের ও স্বাদের দেশি-বিদেশি ইনস্ট্যান্ট নুডলস। স্বাদে ভিন্নতা আনতে ব্যবহার করা হয় নানান ফ্লেভারের মসলা। আর হালের কোরিয়ান ক্রেজে এখন রামেন নুডলসের চাহিদা তুঙ্গে। আগুন ঝাল স্বাদের মজাদার এ নুডলস এখন ছোট-বড় সবার প্রিয়। রেস্টুরেন্টেও এ খাবার অনেক জনপ্রিয়।

বিজ্ঞাপন

নুডলস নিয়ে অবশ্য বিতর্কও কম নেই। এটিতে শর্করা আর সোডিয়াম বেশি থাকে। আঁশজাতীয় পদার্থ, প্রোটিন, ভিটামিন থাকে না বললেই চলে। তবে নুডলসে সবজি, ডিম, মাংস, চিজ যোগ করে সহজেই বাড়াতে পারেন পুষ্টিগুণ। স্বাদে আসে ভিন্নতা। খেতেও ভালো লাগে। ইনস্ট্যান্ট নুডলস যদি খেতেই হয়, তবে মসলাটুকু বাদ দিয়ে নিজস্ব সস আর সবজি দিয়ে রাঁধুন।


নুডলসের উদ্ভব ঘটে প্রায় চার হাজার বছর আগে, চীন দেশে। অর্থাৎ খ্রিষ্টের জন্মেরও দুই হাজার বছর আগে থেকেই নুডলস খাবার হিসেবে পরিচিত ও সমাদৃত। তবে শুরুর দিকে নুডলস বানানোর প্রক্রিয়া ছিল ভিন্ন। ছোট ছোট টুকরা করে ফুটন্ত পানিতে ছেড়ে বানানো হতো নুডলস। আর এটি পরিবেশন করা হতো রাজকীয় খাবার হিসেবে।
নুডলসের উৎপত্তি চীনে হলেও এর মতো সর্বজনীন খাবার পৃথিবীতে খুব কম আছে। তাই এটি বিশ্বের প্রায় সব সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নিজের ইচ্ছেমতো যেকোনো কিছু মিশিয়ে বানানো যায় বলে দেশভেদে স্বাদের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এটি যেন নিজের স্বাদ আর রং বদলেছে বারবার।

যেসব দেশের প্রধান খাবার নুডলস, তাদের রয়েছে নুডলস বানানোর নিজস্ব ধরন। পৃথিবীতে প্রায় ১ হাজার ২০০ ধরনের নুডলস বানানো হয়। এর মধ্যে প্রচলিত সাড়ে ৩০০র বেশি ধরনের।

যেমন চীনের অন্যতম জনপ্রিয় নুডলস হচ্ছে লামিয়ান। পাতলা আর চিকন নুডলস একমাত্র দক্ষ কারিগরেরাই বানাতে পারেন। সেদেশের লোমেইন আর চাওমিন তো রোজকার খাবার।

আবার জাপানের উদন ও রামেন বানানো হয় ময়দা আর লবণ দিয়ে। তবে উদন একটু ভারী করে কাটা হয়, আর রামেন চিকন করে।

জাপানের আরেকটি জনপ্রিয় নুডলস সোবা, যা বানানো হয় বাজরা থেকে। ভিয়েতনামের জনপ্রিয় ভাইন ফো হচ্ছে চাল দিয়ে তৈরি নুডলস।

আলুর স্টার্চ দিয়ে বানানো কোরিয়ার গ্লাস নুডলস, দেখতে হয় একদম স্বচ্ছ। থাইল্যান্ডের পাড থাই আর পাড-সি-ইউ নুডলস তৈরি হয় চালের আটা দিয়ে। একটু মিষ্টি স্বাদের সসে ভেজে বানানো হয় দুটি। এ ছাড়া আছে তিব্বতের থুকপা, সিঙ্গাপুরের লাকসা, বার্মিজ খাওসে। আমাদের দেশের চাকমা কুইজিনের মুংডির কথাও বলতে হয় এ ক্ষেত্রে। তবে আমাদের দেশে এখন নুডলসের রাজ্যের রাজা বলা যায় কোরিয়ান রামেন বা রামিউনকে।

বিশ্বে নুডলসের এই উন্মাদনা এতই তুঙ্গে যে জাপানের ইকোহামাতে রয়েছে কাপ নুডলস নিয়ে পুরো একটি মিউজিয়াম। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, নুডলস পৃথিবীর গণ্ডি পেরিয়ে মহাকাশচারীদের খাবার হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে।
আজকের এই বিশেষ দিনে প্রিয় মানুষকে নিয়ে পাশের রেস্টুরেন্টে ঢুঁ মারতেই পারেন এক বাটি হাক্কা নুডলস, চাওমিন বা রামেন খাওয়ার জন্য। নাহলে বাড়িতেই ঝটপট বানিয়ে নিন মজাদার খাবারটি। আর উপভোগ করতে পারেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে।

ছবি: পেকজেলস ডট কম, ইন্সটাগ্রাম

হিরো ইমেজঃ সেলিনা শিল্পী

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৫: ১০
বিজ্ঞাপন