কোরিয়ান রামেন আর কিমচি যেভাবে আমাদের দেশে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বর্তমানে দুনিয়াজুড়ে বিনোদনের জগৎ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সাউথ কোরিয়ান পপ মিউজিক, চলচ্চিত্র ও সিরিজ। সর্বত্রই এখন কোরিয়ান সংস্কৃতির জয়জয়কার। তবে শুধু বিনোদনের জগৎ জয় করেই থেমে নেই কোরিয়ানরা; তাঁদের দেশের খাবারও এখন বিভিন্ন দেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

কোরিয়ান সংস্কৃতির সঙ্গে খাবার যে কতটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা কোরিয়ান নাটক বা চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দৃশ্যে বৈচিত্র্যময় সব খাবারের অবতারণা করলেই বোঝা যায়। খাবারকে কেন্দ্র করে চিত্রনাট্য সাজানো না হলেও মোটামুটি বেশির ভাগ নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের খাবার খাওয়ার দৃশ্যগুলো যে কৌতূহল জাগায়, জিবে জল আনে, তা কোনো কে-ড্রামা-ভক্তই অস্বীকার করতে পারবেন না। আবার কোরিয়ান ‘মুকবাং’ ভিডিওগুলোর জনপ্রিয়তাও এখন তুঙ্গে, যেখানে বিপুল পরিমাণ খাবার নিয়ে বসে পেটে চালান করা হয় ক্যামেরার সামনে। এদিকে কে-পপ ব্যান্ডের সদস্যরা বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের কাছে হার্টথ্রবের স্থান পেয়েছেন পাকাপোক্তভাবে। তাঁদের প্রিয় কোরিয়ান খাবার রামেন বা কোরিয়ান প্যানকেকের প্রতিও তাই ঝোঁক বাড়ছে ভক্তকুলের।

বিজ্ঞাপন

সাধারণভাবে বলা যায়, ভিন্ন একটি দেশের খাবার আরেক দেশের প্রাত্যহিক খাদ্যাভ্যাসের অংশ হয়ে ওঠা একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু খাবারের স্বাদ ও রান্নার ধরন বাঙালি রান্নার ফ্লেভার ও উপকরণের সঙ্গে অনেকটা মিলে যাওয়ায় মাছ-ভাতপ্রেমী বঙ্গদেশীয় ভোজনবিলাসীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে কোরিয়ান খাবার। কোরিয়ান বারবিকিউ, বুলগগি, তোকবক্কি, কোরিয়ান ফ্রায়েড চিকেন, কোরিয়ান রামেন, গিমবাপ, কিমচি, বিবিমবাপের মতো খাবারগুলো শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। শুধু কোরিয়ান খাবার পাওয়া যায়, এমন রেস্টুরেন্টের সংখ্যাও কম নয়। এদিকে সুপারমার্কেট, এমনকি মুদিদোকানেও বাংলাদেশি ইনস্ট্যান্ট নুডলসের পাশে জায়গা করে নিয়েছে কোরিয়ান ইনস্ট্যান্ট রামেন। দাম বেশি হওয়া সত্ত্বেও বেশির ভাগ সুপারশপগুলোতেও সাধারণ ইনস্ট্যান্ট নুডলসের আগেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কোরিয়ান রামেন। অনেকে আবার ইউটিউব দেখে বাড়িতেই বানাচ্ছেন তোকবক্কি, বুলগগি ইত্যাদি। আর তাই নগরীর বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে কোরিয়ান সুপারশপও, যেখানে কোরিয়ান চিলি পেস্ট, শুকনা সি-উইড, সস আর বিভিন্ন কোরিয়ান খাবার তৈরির বিশেষ উপকরণগুলো পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের নামীদামি ফুড ভ্লগারদের ভিডিওতেও দেখা মিলছে বিভিন্ন কোরিয়ান খাবারের। কোরিয়ান রেস্টুরেন্টের রিভিউ কিংবা স্পাইসি রামেন চ্যালেঞ্জ করলেই পাওয়া যাচ্ছে হাজার হাজার ভিউ। তাই কোরিয়ান রেস্টুরেন্টগুলোতে বাড়ছে ভিড়।

কোরিয়ান খাবারের প্রতি এই ভালোবাসা যে কোরিয়ান ধারাবাহিক নাটক ও কোরিয়ান পপ মিউজিকের জনপ্রিয়তার সঙ্গেই বৃদ্ধি পেয়েছে, তা আর ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। বলা যায়, কোরিয়ান নাটকগুলো দেখতে দেখতে পাশে এক বাটি কোরিয়ান রামেন কিংবা এক বক্স কোরিয়ান স্টাইল ফ্রায়েড চিকেন নিয়ে বসলে জমে যাবে সময়টুকু। এদিকে পছন্দমতো সবজি দিয়ে বিবিমবাপ বানিয়ে পরিবারের সবার জন্য সুন্দর করে পরিবেশন করলে বিকেলের নাশতা হয়ে উঠবে অনন্য।

এসবই অবশ্য মূলত কে-ড্রামার বদৌলতে। নাটকে কেবল একটি প্রপ হিসেবে বা প্লটের প্রয়োজনে দেখানো ছাড়াও শুধু খাবারকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে অনেক কোরিয়ান নাটক। ‘ডিনার মেট’-এর মতো জনপ্রিয় কিছু শোতে খাবারই ছিল প্রধান। এখানে দুজন অপরিচিত ব্যক্তি নিয়মিত ডিনার ডেট করার সিদ্ধান্ত নেন, কোনো ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদান না করে। প্রধান চরিত্রগুলো নাটকের প্রায় পুরোটা জুড়েই বিভিন্ন খাবার আমাদের সামনে নিয়ে আসে। এই নাটকে সাধারণ ইনস্ট্যান্ট নুডলস থেকে শুরু করে পাঁচতারা হোটেলের দামি স্টেক—কোনোটিই দেখানো বাকি নেই। তাই ‘বিঞ্জ ওয়াচিং’ করে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী কে-ড্রামা ম্যারাথনের পর যদি ডাল-ভাতে মন না ভরে, তাহলে ঘরেই টুক করে বানিয়ে ফেলতে পারবেন, এমন কিছু কোরিয়ান খাবারের নাম জেনে নিলে বেশ হয়।

বিজ্ঞাপন

১.কোরিয়ান রামেন

যদিও ট্রেডিশনাল রামেন নুডলসগুলো ময়দা দিয়ে হাতে তৈরি করা হয়, ইনস্ট্যান্ট রামেনও মন্দ নয়। টপিং হিসেবে মুরগি বা গরুর মাংসের স্লাইস, জুলিয়েন কাট করা কাঁচা সবজি, সেদ্ধ ডিম ও শুকনা সি-উইড যোগ করতে পারেন।

২. বিবিমবাপ

হাতের কাছে কোরিয়ান সসগুলো থাকলে সে দেশের খাবারগুলো বেশ সহজেই রান্না করা যায়। হাতের কাছে থাকা সবজিগুলোকে জুলিয়েন করে কেটে সঙ্গে ডিম, মাংস আর বিভিন্ন সস যোগ করে হালকা ভেজে নিয়ে আগের রান্না করা ভাত দিয়ে নেড়েচেড়ে বিবিমবাপ রান্না করা হয়। কোরিয়ান ভাত ভাজা বলা যায় একে।

৩. কোরিয়ান ফ্রায়েড চিকেন

কোরিয়ান ফ্রায়েড চিকেনের মূল আকর্ষণ হচ্ছে এর সস। চিকেন ম্যারিনেট করে ডাবল ফ্রাই করা হয়। পরে বিভিন্ন সস, মধু ও কোরিয়ান চিলি পেস্ট (গচ্চুজাং) একসঙ্গে মিশিয়ে একটি মোটামুটি ঘন সস তৈরি করে এতে মুচমুচে করে ভাজা চিকেনগুলো গড়িয়ে নেওয়া হয়। ওপরে ছিটানো হয় সাদা তিল।

৪. কোরিয়ান প্যানকেক

সকাল কিংবা বিকেলের নাশতায় স্বাস্থ্যসম্মত কিন্তু মুখরোচক কিছু যোগ করতে চাইলে কোরিয়ান প্যানকেক একটি ভালো পদ হতে পারে। গাজর, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজপাতা, মাশরুম ইত্যাদি সবজি কুচি করে এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় মসলা ও ময়দা যোগ করে পাতলা গোলা তৈরি করা হয়। প্যানে অল্প তেল ব্রাশ করে এই ব্যাটার বা গোলা ঢেলে এপিঠ-ওপিঠ করে ভেজে কোরিয়ান প্যানকেক তৈরি করা হয়।

৫. কোরিয়ান এগ রোল

জাপানিজ তামাগোয়াকি বা রোল্ড অমলেট সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা কোরিয়ান এগ রোলের সঙ্গে এর সাদৃশ্য পাবেন। ডিম, গোলমরিচের গুঁড়া, লবণ আর ছোট ছোট করে টুকরা করা সবজি একসঙ্গে ফেটিয়ে নিয়ে অল্প অল্প করে প্যানে ঢালা হয়৷ এরপর এক প্রান্ত থেকে আস্তে আস্তে গোল করে পেঁচিয়ে নিয়ে, আবার ডিমের মিশ্রণ প্যানে ঢালা হয়। এই প্রক্রিয়া ডিমের মিশ্রণ শেষ হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে।
সব সময় রেস্টুরেন্টে গিয়ে কোরিয়ান খাবার খাওয়ার সুযোগ না থাকলে আপনার পছন্দের কে-ড্রামা দেখতে দেখতে এর মধ্যে কোনো একটি খাবার ঝটপট বানিয়ে ফেলতে পারেন।

ছবি: পেকজেলসডটকম ও ইন্সটাগ্রাম

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৩, ১৩: ৫৫
বিজ্ঞাপন