কিছুদিন আগে কাঁচা মরিচের দাম প্রায় বেড়েছে অনেক গুণ। এ অবস্থায় অনেকেই বন্ধ করেছেন রান্নায় কাঁচা মরিচের ব্যবহার। অথচ সব রান্না শেষে কাঁচা মরিচ না দিলে যেন কী একটা বাদ থেকে যায়। কাঁচা মরিচের সুগন্ধ খিদে বাড়িয়ে দেয় আরও কয়েক গুণ। রান্নায় তো ব্যবহার হয়ই, পাশাপাশি খাবারের সঙ্গেও আমরা কামড় দিয়ে কাঁচা মরিচ খেয়ে থাকি। এদিকে মুড়িমাখা, চটপটি, ফুচকা—কাঁচা মরিচ ছাড়া সবই পানসে।
কাঁচা মরিচ ডলে এক গামলা ভাত খাওয়া কোনো ব্যাপারই না। তেহারীর প্লেট এখনো একটা কাঁচা মরিচ ছাড়া কল্পনা করা যায় না। মরিচ বাঙালির কাছে এত নিত্যকার আর আটপৌরে একটি খাদ্যোপকরণ, যে কখনো এর পুষ্টিগুণ বিচার করে খাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু কাঁচা মরিচ স্বাদ ও গন্ধে যেমন অনন্য তেমনি এর স্বাস্থ্য–গুণও চমকপ্রদ। তাই টাকায় দাম যতই হোক না কেন, শরীরের জন্য এটি অতি দামি। চলুন জেনে নেওয়া যাক, মরিচের কিছু গুণ, যা একে এত দামি করেছে।
কাঁচা মরিচে কোন ক্যালরি থাকে না। বরঞ্চ এটি শরীরের মেটাবলিজম বা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলোর কার্যকারিতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ খাওয়ার তিন ঘণ্টা পর অন্যান্য সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ মেটাবলিজম বেড়ে যায়।
কাঁচা মরিচে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে বাঁচায়। ফ্রি র্যাডিকেল অনেকটা রোগব্যাধির নিমন্ত্রণকর্তা হিসেবে কাজ করে। মরিচে থাকা ক্যাপ্সাইসিন নামক উপাদান শরীরের কোষগুলোকে এ রকম ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। পুরুষদের জননগ্রন্থি বা প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যানসার আশঙ্কাও কমায় কাঁচা মরিচ। তাই স্বাভাবিকভাবেই কাঁচা মরিচ মানব দেহের জন্য অত্যন্ত দামি একটি খাবার।
গ্রামের মানুষজন এখনো ঠান্ডা লাগলে বেশি করে কাঁচা মরিচ দিয়ে ভর্তা মাখিয়ে খেয়ে থাকেন শর্ষের তেল সহযোগে। এর পেছনে আছে একটি বৈজ্ঞানিক কারণও। মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে মিউকাসকে পাতলা করে এর নিঃসরণ সহজ করে। যাঁরা সাইনোসাইটিসে ভুগছেন, তাঁদের জন্য কাঁচা মরিচ বেশ উপকারী। কাঁচা মরিচের এই ক্যাপসাইসিন উপাদানটি রক্ত চলাচল বাড়িয়ে সাইনাসকে আরাম দেয়।
কাঁচামরিচ হৃদ্যন্ত্রের ওপর বেশ কার্যকর প্রভাব ফেলে। এটি রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। প্লাটিলেট ঠিক রাখে। পাশাপাশি রক্তজমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমায়। তাই স্ট্রোক বা অন্যান্য হৃদ্রোগের সম্ভাবনা কমাতে ডায়েটে অনায়াসে কাঁচা মরিচ রাখা যায়।
মজার ব্যাপার হলো, পর্যাপ্ত ক্যাপসাইসিন মস্তিষ্ককে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর সংকেত দেয়। ফলে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। আর তাই গরমের দেশের মানুষের জন্য কাঁচা মরিচ খাওয়া ভালো।
মরিচে থাকা ভিটামিন-সি এবং বিটা-ক্যারোটিন চোখ ও ত্বক ভালো রাখে। এমনকি এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়ায়। তাপ, আলো ও বাতাসযুক্ত স্থানের চেয়ে কাঁচা মরিচ অন্ধকার ও ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করলে এর ভিটামিন-সি ভালো থাকে।
নাটক সিনেমায় দেখা যায়, মনের দুঃখে বিরহী নায়ক-নায়িকা একের পর এক কাঁচা মরিচ খেয়ে যাচ্ছেন। মরিচ খেলে অ্যান্ডরফিন অর্থাৎ হ্যাপি হরমোন নিঃসৃত হয়। ফলে আমাদের মন ভালো থাকে নিয়মিত মরিচ খেলে। তা ছাড়া গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে কাঁচা মরিচ রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে মুড ভালো থাকে৷
মনে রাখতে হবে, যাঁদের ডিওডেনাল বা পেপ্টিক আলসার আছে তাঁদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরিমিতভাবে মরিচ খেতে হবে।