বর্তমানে ডায়াবেটিস হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর একটি। এটি এমন একটি রোগ, যেখানে আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। যদিও এ রোগের কোনো স্থায়ী নিরাময় নেই। আর এখন বিশ্বের তরুণ জনগোষ্ঠীসহ বহু মানুষের ব্লাড সুগার ক্রমাগত হাই থাকে। আর এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় তা টাইপ-টু ডায়াবেটিসে পরিণত হয়। ডায়াবেটিসের ঠিক এই আগের পর্যায়টিকে বলা হয় প্রি-ডায়াবেটিস।
স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলেন, আপনার ডায়েটে কিছু পরিবর্তন আনলে তা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। আর এভাবে প্রি-ডায়াবেটিস পর্যায় থেকে ফিরে আসা সম্ভব হতে পারে। আমরা যদি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি সচেতন না হই এবং এ অবস্থাকে উপেক্ষা করি, তাহলে আরও বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাঁরা প্রি-ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং ভাবছেন কী ধরনের খাবার খেতে হবে, এ তালিকা তাঁদের কাজে আসবে। বেশ কিছু সহজলভ্য সুপারফুড রয়েছে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
হলুদ এমন একটি মসলা, যা আপনি সহজেই বাংলাদেশের প্রতিটি রান্নাঘরে পাবেন। এটি খাবারে একটি স্বতন্ত্র গন্ধ ও রং আনতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেসমৃদ্ধ এবং এর প্রদাহ প্রশমন করার ক্ষমতা রয়েছে। হলুদ ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। হলুদ থেকে পুষ্টি গ্রহণ করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, প্রতিদিন এক গ্লাস দুধে এক চা–চামচ হলুদগুঁড়া যোগ করে খাওয়া। তবে এটা বাজারের প্যাকেটজাত গুঁড়া হলে হবে না। নিজে তৈরি করে নিতে হবে অথবা অর্গানিক গুঁড়া জোগাড় করতে হবে।
আমরা সবাই জানি যে টমেটো ভিটামিন সির একটি চমৎকার উৎস। কিন্তু আপনি কি জানেন যে এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করতে পারে? টমেটোর একটি গুণগত বৈশিষ্ট্য হলো এটির গ্লাইসেমিক সূচক অনেক কম। অর্থাৎ রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধিতে এর তেমন কোনো প্রভাব নেই। এ ছাড়া টমেটো লাইকোপেনসমৃদ্ধ, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত হার্টের জটিলতার ঝুঁকি কমাতে পারে। যেকোনো জাতের টমেটো তাজা ও কাঁচা খাওয়াই ভালো। এতে আপনি সবচেয়ে বেশি পুষ্টি পাবেন।
আরেকটি সুপারফুড যা আপনাকে অবশ্যই আপনার প্রি-ডায়াবেটিক ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তা হলো বাদাম। টমেটোর মতো বাদামেরও গ্লাইসেমিক সূচক কম। বাদাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ এবং এটি রক্তে শর্করার পাশাপাশি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী। তাই অস্বাস্থ্যকর ভাজা স্ন্যাকস খাওয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের এক মুঠো বাদাম বেছে নিন। চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম মিশিয়ে খেলে ক্ষুধাও দ্রুত নিবারণ হয়, ব্লাড সুগারও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তেতো স্বাদের কারণে অনেকেই করলা এড়িয়ে চলেন। কিন্তু ব্লাড সুগার যদি বেশি থাকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই এটি আপনার ডায়েটে যোগ করার কথা বিবেচনা করতে হবে। এই সবজিতে পলিপেপটাইড-পি নামের একটি যৌগ রয়েছে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আপনি নিয়মিত করলা খেলে এ ক্ষেত্রে সুফল পেতে পারেন। রান্না করা করলা বা কলার জুস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী খাবার।
যেকোনো ধরনের শিম, মটর, কলাই, কিডনি বিনস, ডাল ইত্যাদি ফাইবারের দুর্দান্ত উৎস। এগুলো আমাদের ক্ষুধা মেটায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে পরিতৃপ্ত রাখতে সাহায্য করে। বিনস হজমপ্রক্রিয়ার গতি কমাতেও সাহায্য করে। ফলে খাবারের পর রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় না।
সূত্র: হেলথলাইন
ছবি: পেকজেলস ডট কম