চট্টগ্রামের 'অনেস্ট ক্যাফে'র মায়া ছড়ানোর প্রত্যয়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

চট্টগ্রামের জামালখান এলাকায় অবস্থিত অনেস্ট ক্যাফের নাম শুনেছি অনেক। জানা গেল, অনেস্ট ক্যাফে একটি সেবামূলক সংস্থার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘পে ইট ফরোয়ার্ড’। এর স্বপ্নদ্রষ্টার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ, যিনি বাদল সৈয়দ নামে লেখালেখি করেন। বাদল সৈয়দ একাধারে লেখক, মোটিভেশনাল বক্তা, সরকারি চাকরিজীবী ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তাঁর সব কাজের মটো ‘আসুন মায়া ছড়াই’।
ক্যাফে প্রাঙ্গনে ঢুকতেই বেশ মুগ্ধতা কাজ করল। সুপরিসর ফ্লোর স্পেসে আছে একটি সুপারশপ, একটি ক্যাফে আর অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি।


বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এই লাইব্রেরিতে যে কেউ বিনা মূল্যে পড়াশোনা করতে পারেন। ক্যাফেটি চালু হয় বিকেল চারটায়। সুলভ মূল্যে একেক দিন একেক মেনুর খাবার পরিবেশন করা হয় এখানে।জায়গাটি সব সময়ই শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষে পরিপূর্ণ থাকে।

বিজ্ঞাপন

মজার বিষয় হলো বেশ কিছু প্রাচীন যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী আছে এখানে। সেক্সট্যান্ট যন্ত্র, টাইপ রাইটার, প্রাচীন মুদ্রা, ঘড়ি, হারিকেন, হ্যাজাক বাতি আর নানা রকমের ক্যামেরা আছে এই সংগ্রহশালায়। আজকের প্রজন্মের অনেকে এসব জিনিসের সঙ্গে একেবারেই পরিচিত নন।

বাদল সৈয়দ
বাদল সৈয়দ

জানা হলো, বাদল সৈয়দ বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর্মরত আছেন। তিনি একটি অনলাইন ও অফলাইন চ্যারিটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির উদ্যোগ নেন, যেখানে বাজারমূল্যের চেয়ে কমে বা বিনা মূল্যে পণ্য কেনা বা বিতরণ করা যাবে। বর্তমানে লাখো মানুষ তাঁর প্রতিষ্ঠিত পে ইট ফরোয়ার্ড, অনেস্ট, প্যারেন্টস লাউঞ্জ, উন্মুক্ত লাইব্রেরি ইত্যাদি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে উপকৃত হচ্ছেন। উল্লেখ্য, এসব প্রতিষ্ঠান চ্যারিটির জন্য কোনো তহবিল সংগ্রহ করে না। সুপারশপ আর এই অনেস্ট ক্যাফের আয়ের বেশির ভাগই চ্যারিটিতে ব্যয় হয়। বন্ধু, স্বজন আর শুভানুধ্যায়ীদের উদ্যোগে বিভিন্ন চ্যারিটি প্রজেক্ট সম্পন্ন হয়।

বিজ্ঞাপন

এমন ভিন্ন চিন্তার প্রতিষ্ঠানটিতে রাখা আছে ওয়াকার, হুইলচেয়ার আর নেবুলাইজারের মতো চিকিৎসাসামগ্রী, যা দরিদ্র রোগীর সহায়তায় দেওয়া হয় বিনা মূল্যে। আপনার ঘরের যেকোনো অপ্রয়োজনীয় বই, কাপড় বা গৃহস্থালি দ্রব্য এখানে রেখে গেলে তাদের বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পে দেওয়া হয়। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ডোনেশন স্লিপ ও গিভিং বোলের সুবিধা। কেউ ইচ্ছা করলে যেকোনো পরিমাণ অর্থ ডোনেশন স্লিপের মাধ্যমে দান করতে পারেন।

আর গিভিং বোলের মাধ্যমে একটি পরিবারের প্রয়োজনীয় পরিমাণ মুদি দ্রব্যের প্যাকেজ কিনে তাদের জন্য দিতে পারেন। তাতে একটি দুস্থ পরিবারের এক সপ্তাহের জীবন নির্বিঘ্ন হয়।অনেস্ট ক্যাফেতে মজাদার খাবার আর সমৃদ্ধ বইয়ের সংগ্রহের পাশাপাশি রয়েছে গান পরিবেশনের ব্যবস্থা। কেউ গান শোনাতে চাইলে ক্যাফের কর্মীরা সানন্দে ব্যবস্থা করে দেন। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে আনন্দময় একটি সন্ধ্যা কাটানোর জন্য এটি হতে পারে একটি চমৎকার পছন্দ। যেখানে আপনার ব্যয় করা অর্থের একটা অংশে সম্পন্ন হবে কোনো দরিদ্র পরিবারের চিকিৎসা বা কোনো অনাথ শিশুর শিক্ষাব্যবস্থা। অনেস্ট ক্যাফের মূলমন্ত্র এ জন্যই ‘আসুন মায়া ছড়াই’।

ছবি: লেখক ও ফেসবুক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮: ৩০
বিজ্ঞাপন