হোম শেফদের জীবন বদলে দেওয়া উদ্যোগ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

রন্ধনশিল্প নারীর সহজাত দক্ষতাগুলোর একটি। আর এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েছেন ঢাকার দুই নারী উদ্যোক্তা ফারহানা তাসমিম ও লাবিবা জামান। পড়াশোনা শেষ করে সংসারজীবনে প্রবেশ করার পর পেশাগত জীবনে এগোতে গিয়ে সম্মুখীন হয়েছেন নানা প্রতিকূলতার। কিন্তু এখন তাঁরা ঘরে বসেই নিজেদেরকে গড়ে তুলেছেন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে, হয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। আর তাঁদের বয়ানেই জানা গেল, এই পুরো ব্যাপারটিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে ফুডপান্ডা হোম শেফ প্রোগ্রাম নামের অভূতপূর্ব উদ্যোগ।

বর্তমানে সঠিক সময়ে পছন্দমতো খাবার ডেলিভারির ক্ষেত্রে দেশের এক নির্ভরযোগ্য নাম ফুডপান্ডা। এরই ধারাবাহিকতায় ঘরে বসেই নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চমৎকার উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। হোম শেফ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তারা পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের উদ্যমী নারী উদ্যোক্তাদের। এই প্রতিষ্ঠানের হোম শেফ প্ল্যাটফর্ম রান্নায় পারদর্শী নারীদের খাবার তৈরি করে সেটা তাঁদের বাসা থেকেই ফুডপান্ডার বিতরণপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনন্য সুযোগ দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তারা একটি জনপ্রিয় ও স্বীকৃত প্ল্যাটফর্মে নিজেদের নিবন্ধিত করার ফলে কোনো বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই সহজে ক্রেতারা তাঁদের খুঁজে পান। ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ, অর্ডার পাওয়া ও খাবার ডেলিভারির ক্ষেত্রে ফুডপান্ডাই প্রযুক্তিগত সব সহায়তা দেওয়ায় আলাদাভাবে কোনো ঝক্কি তাঁদের পোহাতে হয় না। এভাবে রন্ধনশিল্পীরা তাঁদের স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজের মতো করে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

নারীর ক্ষমতায়নের এই চমৎকার নিদর্শনের আরও ভালো দিকটি হলো সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপায়ণে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। উল্লেখ্য, হোম শেফদের জন্য প্রয়োজনীয় আইটি ও ইন্টারনেট–সম্পর্কিত বিষয়গুলো তাঁরা বিনা মূল্যে শিখতে পারেন ফুডপান্ডা পরিচালিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যেম। এই কর্মসূচি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে হোম শেফদের তৈরি খাবার ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরার সুযোগ দেয়। এর ফলে উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের প্রাথমিক কঠিন ধাপটি পেরোনো অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

এই যাত্রায় শামিল আছেন ফারহানা তাসমিম। তাঁর গল্পটি আবার আরেকটু অন্য রকম। বিয়ের পর সংসার ও সন্তানদের সময় দিতে গিয়ে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। স্কুলের বাচ্চাদের মায়েরাই এই সুরাঁধুনিকে প্রাথমিকভাবে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন তাঁর নিজের তৈরি খাবার নিয়ে কিছু করতে। তাঁর মা–ও এ ব্যাপারে তাঁকে সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন। তিনিও বছর দুই আগে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন ফুডপান্ডা হোম শেফ প্রোগ্রামের কথা। এখানে নিবন্ধিত হওয়ার পরে তাঁর জীবনটাই বদলে যায় একেবারে। এত বড় একটি প্ল্যাটফর্মে নিজের খাবারের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে গেছেন তিনি ফুডপান্ডার সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তায়।

ফারহানা তাসমিম
ফারহানা তাসমিম

চার পুত্রসন্তানের জননী ফারহানার শক্তির আরেক উৎস তাঁর সন্তানেরা। বড় দুজন সব সময় কাজে সাহায্য করেন তাঁকে। পুত্রদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘ফোর সন্স কিচেন’। ফুডপান্ডার দিকনির্দেশনায় সঠিক সময়ে মানসম্পন্ন খাবার ক্রেতাদের কাছে ফারহানা পৌঁছে দিচ্ছেন অনায়াসেই। তাঁর খাদ্যতালিকায় রয়েছে সব রকমের খাবারই। মাসে ৩০ হাজার টাকার মতো আয় হয় এখন এই মায়ের। ফারহানাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সামাজিক মর্যাদাও নিশ্চিত করেছে এই হোম শেফ প্রোগ্রাম। এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবার অকুণ্ঠ সহযোগিতার কথা বললেন ফারহানা, ‘এখানে ক্রেতাদের খাবার অর্ডার করা থেকে শুরু করে তাঁদের কাছে খাবার পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটিই অনলাইনে হয় এবং তা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ কিছু বিষয় বুঝতে সমস্যা হতো। কিন্তু ফুডপান্ডার কল সেন্টারে ফোন করলে বা টিম ম্যানেজারদের শরণাপন্ন হলেই তাৎক্ষণিকভাবে মিলত সহজ সমাধান। এ নিয়ে তাই আমাকে কখনোই কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

ফুডপান্ডার হোম শেফ প্রোগ্রামের আওতায় সাফল্য অর্জনকারী আরেক নারী উদ্যোক্তা লাবিবা জামানের গল্পটিও উদ্দীপনা জাগানোর মতো। প্রায় ছয় মাস হতে চলেছে তিনি ফুডপান্ডার এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িয়েছেন। মাত্র ২০০০ টাকা মূলধন, ১২টি আইটেম ও একজন সাহায্যকারী নিয়ে তিনি শুরু করেন ‘মাম্মি’জ কিচেন। দারুণ ব্যাপার হচ্ছে লাবিবার এই উদ্যোগে সবচেয়ে বড় উৎসাহদাতা হচ্ছেন তাঁর জীবনসঙ্গী। আইন পেশায় নিয়োজিত লাবিবা যখন তিন সন্তান ও সংসার নিয়ে প্রতিদিন কোর্টে আসা-যাওয়া করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, তখনই তিনি ভাবলেন, খাবার বা মেকওভার নিয়ে ঘরে বসেই নিজের মতো করে স্বাধীনভাবে কাজ করবেন। দুই বছর ধরে এ দুটি বিষয়ে ধাপে ধাপে নিয়েছেন বিভিন্ন প্রশিক্ষণও। এরপর গত জুলাই থেকে ফুডপান্ডার হোম শেফ প্রোগ্রামে নিবন্ধিত হয়ে রীতিমতো প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন নিজের উদ্যোগ।

লাবিবা জামান
লাবিবা জামান

খাদ্যরসিক স্বামী ও আদরের সন্তানেরা উৎসাহ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সব রকমের সহযোগিতা করেন। সামনে পরিকল্পনা আছে তিনজন স্টাফসহ বড় করে কিচেনের কাজ করতে। তাঁর সাফল্যের পেছনে ফুডপান্ডার ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন লাবিবা। তিনি বলেন, ‘আমার আজকের সাফল্যের ৯৯ শতাংশের দাবিদার ফুডপান্ডা। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই শুধু আমাকে এই প্ল্যাটফর্মে সার্বিক সহযোগিতাই দেননি, বরং এই ব্যবসা নিতে নানাভাবে উৎসাহিতও করেছেন। তাদের ট্রেনিং সেশনটিও আমাকে সার্বিকভাবে অত্যন্ত সাহায্য করেছে। প্রাথমিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সার্বক্ষণিক কারিগরি ও ব্যবসাসংক্রান্ত সহায়তা দেয় ফুডপান্ডার টিম ম্যানেজার ও প্রতিটি সদস্য।’ তবে তিনি এখনই লাভের অঙ্কের চুলচেরা হিসাব করতে নারাজ। তিনি বিশ্বাস করেন, আগে নিজের তৈরি করা মানসম্পন্ন খাবার ক্রেতাদের কাছে যথাসময়ে পৌঁছে দিয়ে সুনাম অর্জন করলে পরবর্তীতে আপনাআপনিই ব্যবসায় প্রসার ঘটবে। এ ক্ষেত্রে মেনু তৈরি, প্যাকেজিং, ফুড আইটেমের মূল্য নির্ধারণ করা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসায়িক পরামর্শ দেওয়ার জন্য ফুডপান্ডা সদা প্রস্তুত বলে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানান তিনি।

স্বতন্ত্র রন্ধনশিল্পীদের এভাবে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি করতেই ফুডপান্ডার পক্ষ থেকে এই প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়। উল্লেখ্য, এখানে হোম শেফদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম পরিচালিত হয় সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে। বর্তমানে ফুডপান্ডার হোম শেফ প্রোগ্রাম প্ল্যাটফর্মে তিন হাজারেরও বেশি হোম শেফ সক্রিয় রয়েছেন। আর তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী। সম্প্রতি ফুডপান্ডা থেকে ২২ জন হোম শেফ আইসিটি বিভাগের দ্য ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ একাডেমি (আইডিইএ) প্রকল্প থেকে অনুদানও পেয়েছেন।

ছবি: সংগৃহীত

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮: ০৬
বিজ্ঞাপন