পার্বত্য চট্টগ্রামে কফি চাষে অপার সম্ভাবনা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ইতিমধ্যে কৃষি বিভাগ এবং পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড বাণিজ্যিক ও প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে কফি চাষ শুরু করেছে। কফি চাষের জন্য মাটি উর্বর, আবহাওয়া অনুকূল ও পরিত্যক্ত জায়গাগুলো কাজে লাগানো গেলে দেশে আয় বাড়বে ও বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সে জন্য পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ বাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহু বছর আগে থেকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেক পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে কফি চাষ করা হয়। এ ছাড়া খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় কফি চাষ করা হয়েছে। এতে কৃষিবিদদের নজরে আসে কফি চাষ। পরে তাঁরা গবেষণার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে অ্যারাভিকা ও রোবস্তা নামের দুটি প্রজাতি নিয়ে গবষেণা চলছে। ইতিমধ্যে খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে একটি কফির জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানা যায়।

বিজ্ঞাপন

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় পাঁচ বছর মেয়াদে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পে প্রচারের জন্য কফির জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী প্লট ও বাণিজ্যিক প্রদর্শনী প্লট কৃষকদের বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কৃষকদের কফি চাষে আগ্রহ বাড়াতে নানা সচেতনতা সভা ও পরামর্শমূলক কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এ প্রকল্পে ইতিমধ্যে কৃষকদের ১ হাজার ১৫৯টি প্রদর্শনী প্লট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১১৯টি কফি জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী এবং ৩০টি বাণিজ্যিক প্রদর্শনীতে চাষ চলছে।

দুটি ক্যাটাগড়িতে শুধু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৭০০ একর জমিতে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮১৫টি কফি চারা লাগিয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু কফি গাছে ফল ধরেছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কফি চাষ শুরু করেছে। তিন পার্বত্য জেলায় ৮০০ পরিবারকে ৩১০টি করে কফি চারা বিতরণ করেছে। এসব কফি চারা লাগানো, পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কৃষককে সব ধরনের সহায়তাও দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

কৃষি গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে কফি চাষে অপার সম্ভাবনা থাকায় জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে। জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে ২০১৯ সাল থেকে অ্যারাভিকা ও রোবস্তা—এই দুই জাত নিয়ে গবেষণা চলছে। ইতিমধ্যে গবেষণার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সহজে চাষ করা যাবে, এমন কফির জাত উদ্ভাবন করে বাণিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে।  

কাপ্তাইয়ের রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা শ্যাম প্রসাদ চাকমা বলেন, ‘আমরা দুই প্রজাতির কফি নিয়ে গবেষণা করছি। ইতিমধ্যে গবেষণা কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু সময়ের মধ্যে নতুন জাতের নাম দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে একটি নতুন কফির জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।’

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশাল এলাকাজুড়ে পরিত্যক্ত খালি টিলা রয়েছে। এসব টিলা কফি চাষ করলে এলাকা ও দেশে অর্থনীতি আয় বাড়বে। ২০২০ সাল থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও চাষ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ এসব প্রদর্শনী প্লটগুলো তত্ত্বাবধান করছে।

ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৫: ০০
বিজ্ঞাপন