পুরুষ দিবস স্পেশাল রেসিপি: রান্না কোনো লিঙ্গভিত্তিক রোল নয়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

নাদিমা জাহান

রন্ধনশিল্পী মানেই যেন পিংক কলার রোল। বলে রাখা ভালো, সমাজবিজ্ঞানের পরিভাষায় পিংক কলার রোল বলতে যে কাজগুলো শুধুই নারীই করবে ধরে নেওয়া হয়, সেই ভূমিকাগুলোকেই পিংক কলার রোল বলে। অথচ তাবৎ বিখ্যাত দেশি–বিদেশি শেফ এমনকি ঐতিহ্যবাহী পাচক ঠাকুর, বাবুর্চি সাহেবরাও সেই পুরুষ। কিন্তু খুবই সাংঘর্ষিক বিষয় হচ্ছে, ঘরের হেঁশেলে ঢুকতে যেন বাড়ির পুরুষপ্রবরটির প্রবল অনীহা। ব্যাপার অবশ্য আরও রয়েছে।

বাড়ির বউ-মেয়েরাও যেন পুরুষ রান্নাঘরে ঢুকলেই অনেক সময় আঁতকে ওঠেন। ইংরেজিতে ভুল জায়গায় ভুল লোকের উপস্থিতি বোঝাতে ‘বুল ইন দ্য চায়না শপ’ নামে একটি মজার কথা প্রচলিত আছে, যার মানে দাঁড়ায়, চীনামাটির শৌখিন তৈজসের দোকানে ষণ্ডবাবাজির প্রবেশ। কথাটি শুনলে ঠিক যতটুকু বিধ্বংসী চিত্র চোখে ভেসে ওঠে, কর্তা মহাশয় রান্নাঘরে ঢুকে কিছু রান্না করতে গিয়ে যে দক্ষযজ্ঞ চালান, গিন্নির মানসপটের ছবিটি তার থেকে খুব বেশি আলাদা কিছু নয়।

বিজ্ঞাপন

গ্রাফিকস ডিজাইনার ও অ্যানিমেটর থেকে এখন ব্যবসায়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ ঢাকার বাসিন্দা উপল আনোয়ার। উচ্ছ্বসিত হয়ে উপল জানালেন, পরিবারের সবাইকে রেঁধে খাওয়াতে খুবই ভালোবাসেন তিনি। ব্যবসা ও বায়িং হাউস সামলে আর সেই সঙ্গে তথ্যচিত্র তৈরি আর লেখালেখির শখের পাশাপাশি প্রায়ই হেঁশেলের দায়িত্ব নেন ভালোবেসে। ছুটির দিনের পারিবারিক ভোজ আর মেহমান এলে তো বটেই, নিত্যদিনের রান্নাও করেন উপল ফুরসত পেলেই। খাবারের ছবি তুলতেও ভালোবাসেন তিনি। সে কথা তাঁর তোলা ছবিগুলোই বলছে।

আজ তিনি হাল ফ্যাশনের পাঠকদের জন্য সিঙ্গাপুর স্টাইল চিলি ক্র্যাব তৈরি করে রেসিপি আর ছবি পাঠিয়েছেন। বললেন, ‘রান্না করে খাওয়ানোর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে!’

উপল আনোয়ারসহ সব পরিবারের সুরাঁধুনি পুরুষদের জন্য হাল ফ্যাশনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা। অনুধাবন করার সময় এসেছে, রান্না করা কোনো লিঙ্গভিত্তিক দায়িত্ব নয়, বরং এক জরুরি লাইফস্কিল।

বিজ্ঞাপন

সিঙ্গাপুর স্টাইল চিলি ক্র্যাব

সব ধরনের সি-ফুডের মধ্যে কাঁকড়ার জনপ্রিয়তা সারা বিশ্বেই চরম তুঙ্গে৷ বিদেশি বাটারড স্টিমড ক্র্যাব আর দেশি কাঁকড়ার ঝাল বা ভুনা তো হলো অনেক। এবার নাহয় সিঙ্গাপুর স্টাইল চিলি ক্র্যাব তৈরি করে চেখে দেখা যাক। এখানে ব্যবহৃত ওরিয়েন্টাল উপকরণগুলো আজকাল দেশে সুপারশপ, অনলাইন পেজ বা বিশেষায়িত দোকানে সহজেই মিলছে।

উপকরণ

কাঁকড়া আধা কেজি
মাখন ৪ টেবিল চামচ
রসুন মিহি কুচি ৩ টেবিল চামচ
পেঁয়াজকলিকুচি ৩ টেবিল চামচ
কাঁচা মরিচকুচি ১ টেবিল চামচ
লাল ক্যাপসিকামকুচি
পাপরিকা গুঁড়া ২ চা-চামচ
গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ
টমেটো কেচাপ আধা কাপ
ডার্ক সয়া সস ২ টেবিল চামচ
সয়াবিন পেস্ট ২ চা-চামচ
হইসিন সস ১ চা-চামচ
ডিম ২টি
লবণ ও চিনি পরিমাণমতো

প্রণালি

কাঁকড়া পরিষ্কার করে ধুয়ে টুকরা করে নিতে হবে। চুলায় প্যান দিয়ে সামান্য মাখনে ১ চা-চামচ রসুন দিয়ে একটু ভেজে নিয়ে তাতে কাঁকড়া ভেজে নিতে হবে লাল করে। ভেজে রাখা কাঁকড়া তুলে রাখতে হবে।

একই প্যানে বাকি মাখন দিয়ে অবশিষ্ট রসুনকুচি, পেঁয়াজকলিকুচি, কাঁচা মরিচকুচি, পাপরিকা ও গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে ভাজতে হবে। কিছুক্ষণ ভাজা হলে এতে টমেটো কেচাপ, ডার্ক সয়া সস, সয়াবিন পেস্ট, হইসিন সস আর লাল ক্যপসিকামকুচি দিয়ে ফুটিয়ে ঘন গ্রেভি করতে হবে। অল্প পানি দেওয়া যেতে পারে বেশি ঘন হলে।
ডিম ফেটিয়ে এই গ্রেভিতে আস্তে আস্তে দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। ডিম বেশি মিশেও যাবে না, আবার বড় বড় দলাও হবে না। এরপর লবণ আর একটু চিনি দিয়ে দিতে হবে।

ভেজে রাখা কাঁকড়া এবার গ্রেভিতে দিয়ে আস্তে আঁচে চুলায় ঢেকে রাখতে হবে মিনিট দশেক। ওপরে চাইলে আরও একটু মাখন দিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে ফেলতে হবে। হয়ে গেল টক–ঝাল–মিষ্টি সিঙ্গাপুর স্টাইল চিলি ক্র্যাব।

ছবি: উপল আনোয়ার

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৫: ৫৮
বিজ্ঞাপন