ফ্লোরিডার অবারিত সবুজ মাঠ, ঝকঝকে রাস্তার ধারে গাছের সারি আর ছবির মতো বাড়িঘর। হঠাৎই চোখে পড়বে বাড়ির পেছনের উঠানে, জানালার কার্নিশে বা ব্যালকনিতে রোদে দেওয়া হয়েছে টক-ঝাল-মিষ্টি আমের আচার।
চলতি পথে বাড়িটি পেরোতে পাঁচফোড়ন আর শুকনা মরিচের বাগাড়ে জিবে জল আনা আচারের ঘ্রাণে আন্দোলিত করতে পারে নাসারন্ধ্র বেয়ে চেতনাকে। এমন কিছু ঘটলে ধরে নেওয়া যেতে পারে, আপনি ফ্লোরিডা নিবাসী নীলু ইসলামের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, মায়ামি, হাওয়াই, পুয়ের্তোরিকোসহ বেশ কিছু ক্রান্তীয় গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে আম জন্মায়। আবার দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, চিলি, পেরু, কলম্বিয়া ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলের জামাইকাও আম উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে। ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় জাত হেডেন, কেন্ট, কেইট, টমি অ্যাটকিন্স ইত্যাদি আম এখন সবার পছন্দের শীর্ষে। এই অঞ্চলের আমগুলো দেখতে খুবই বর্ণিল আর পিচ ফলের মতো রসাল ও আঁশমুক্ত হয়। তবে শুধু পাকা নয়, বাঙালিমাত্রই কাঁচা আমের ভক্ত। আর কাঁচা আম বলতেই মনে পড়ে আম দিয়ে তৈরি নানা রকম আচার। খোসাসুদ্ধ টক আচার, কাশ্মীরি আচার, ঝুরি আচার, টক-মিষ্টি মাখা আচার, বারো মসলার আচার—শেষ নেই আমের আচারের রকমফেরের।
নীলু ইসলাম সেই ’৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রে পা রেখেছিলেন পিএইচডি করতে আসা স্বামীর কাছে। নিজেও ইউনিভার্সিটি অব মিজৌরির কলাম্বিয়া ক্যাম্পাস থেকে স্নাতক করেছেন। দীর্ঘদিন নিউইয়র্কে থেকে বর্তমানে ফ্লোরিডায় বাস তাঁদের। এইচএসবিসি ব্যাংকের ইনভেস্টম্যান্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন জীবনের অনেকটা সময়। এখনো দোভাষী হিসেবে কাজ করেন।
পছন্দ করেন গান শুনতে, ঘুরে বেড়াতে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে আর রোজ বিকেলে হাঁটতে। আর এই মৌসুমে হাঁটতে বেরোলেই আশপাশের সব জায়গার আমবাগানে আমের ভারে নুয়ে পড়া ডালগুলো থেকে চোখ ফেরানো দায়। খাওয়ারও যেন লোক নেই সেই আম। নেই দেশের মতো ঢিল মেরে কাঁচা আম পেড়ে দৌড় দেওয়ার মতো গল্পগুলো। দেদার জন্মানো নানা জাতের মার্কিনি আমগুলো নীলু ইসলামের নিপুণ হাতের মায়ায় রূপ নেয় সুস্বাদু সব আচারে।
রান্না করতে এমনিতে খুব ভালোবাসেন নীলু। আচারের সব রেসিপি তাঁর নিজেরই। মায়ের আচার বানানোর স্মৃতি থেকেই বানান তিনি এগুলো। বললেন, ‘মা খুব ভালো আচার বানাতেন। আমি প্রায় অনেক কিছুর আচার বানাই। যেমন আমড়া, কামরাঙা, সবজি। তবে আমের আচারের কোনো তুলনা হয় না। আমার মেয়েরা আর তাদের বিদেশি বন্ধুরা আচার খেতে খুব ভালোবাসে। আমাকে বাণিজ্যিকভাবেও আচার বিপণন করতে বলে।’
এই বয়সে নতুন ব্যবসা করার ইচ্ছা পোষণ না করলেও সবার জন্য আচার বানান তিনি। উপহার দেন সবাইকে। মার্কিন মুলুকের বিদেশি আম এভাবেই খাঁটি দেশি আচার হয়ে জয় করে নিচ্ছে মার্কিনিদের মন। আর তা নীলু ইসলামের হাত ধরে।
ছবি: লেখক