তুরস্কের ৫ পদ: বেড়াতে গেলে অবশ্যই চেখে দেখতে ভুলবেন না ৩
শেয়ার করুন
ফলো করুন

তুরস্কে রান্নাঘর পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ রন্ধন ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে যেমন চীনা, ভারতীয় বা ইতালিয়ান রেস্তোরাঁ ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি তুর্কি খাবারের রেস্তোরাঁও বিভিন্ন স্থানে সৌরভ ছড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে তুর্কি খাবারের প্রসঙ্গ উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে উত্তপ্ত কয়লার আঁচে শিকে গাঁথা নানা রকম কাবাব ও ডোনারের মোহনীয় ছবি।

ইস্তানবুল
ইস্তানবুল

অথচ তুরস্কের প্রতিটি অঞ্চল নিজস্ব খাদ্যসংস্কৃতি বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। এখানে এমন পাঁচটি পদ নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর সঙ্গে পরিচয় বাইরের দুনিয়ায় হয়তো সেভাবে নেই। অথচ তুরস্ক ভ্রমণে এই পঞ্চপদ না খেলে জীবন বোধ করি ষোলো আনাই মিছে হয়ে যাবে বলেই মনে হয়।

বিজ্ঞাপন

গুভেচ

এ নামটি উচ্চারণ করলেই জিবে স্বাদের সুগভীর সুর খেলে যায়। তুরস্কের রন্ধনকলায় এই পদটি এক অমূল্য রত্ন। আমার জীবনে উপভোগ করা শ্রেষ্ঠ খাবারগুলোর মধ্যে গুভেচ অনন্য। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের সময়, এই মাংসের রেসিপি তুরস্ক ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর গ্রামাঞ্চলে ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।
গুভেচ সেই গ্রামীণ সৌন্দর্যের এক জীবন্ত চিত্র, যা আমাদের দেশের কোরবানির সময় মাটির হাঁড়িতে খড়ি বা লাকড়ির চুলায় রান্না হওয়া মাংসের সঙ্গে তুলনীয়। এককালে যখন রেফ্রিজারেটরের প্রচলন ছিল না, তখন আমাদের গ্রামাঞ্চলে এভাবেই মাংস রান্না ও সংরক্ষণ করা হতো। কিন্তু আজকাল এমন দৃশ্য আর চোখে পড়ে না, যেন সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে একটি কাব্যময় অধ্যায়।

গুভেচ এক অনন্য স্বাদের মাংসের পদ
গুভেচ এক অনন্য স্বাদের মাংসের পদ

গুভেচকে তুরস্কের নিজস্ব শৈলীতে রান্না হওয়া মাংসের স্টু বলা যায়, যার স্বাদে মিশে আছে ঐতিহ্য আর নৈপুণ্যের গভীরতা। এটি প্রস্তুত করতে চাই পাথরের তৈরি বিশেষ পাত্র আর এক ঐতিহ্যবাহী চুলা, যা আমাদের দেশের পুরোনো দিনের বেকারিগুলোতে ব্যবহৃত চুলার সঙ্গে কিছুটা মিল পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

মাংসকে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ধরে আঁচে রাখা হয়, যেন প্রতিটি উপাদান ধীরে ধীরে নিজের সত্তা মেলে ধরে। গুভেচ রান্নায় সাধারণত গরু, খাসি কিংবা ভেড়ার মাংস ব্যবহার করা হয়। লবণ, গোলমরিচ, থাইম এবং কখনো কখনো শুকনা লাল মরিচ মিশিয়ে এক মোহনীয় স্বাদ সৃষ্টি করা হয়। দীর্ঘ সময় পাথরের পাত্রে রান্নার ফলে সব উপাদানের স্বাদ এক সুরে মিশে যায়, এক অপূর্ব সামঞ্জস্যের জন্ম দেয়।

শেফ মেহমেতের সঙ্গে লেখক
শেফ মেহমেতের সঙ্গে লেখক

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না স্লো কুকিং পদ্ধতির অনুসরণ। ফলে রান্না শেষে মাংসের টুকরাগুলো এতটাই নরম ও তুলতুলে হয় যে, মুখে দিতেই নিমেষে গলে গিয়ে জিবে ছড়ায় স্বাদের মোহময় আবেশ। মাংসের গায়ে থাকা চর্বি তেল হয়ে ওপরে ভেসে উঠে পাত্রজুড়ে সোনালি আভা ছড়ায়। গুভেচের স্বাদ আমার কাছে অমৃতসমান। একে কোনো উপমায় বাঁধা যায় না। সাধারণত নরম রুটি, ভাত কিংবা পিলাফের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় গুচেভ।

তুরস্কে গুভেচ রান্না একটি শিল্প, যা কেবল বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন শেফরাই আয়ত্ত করতে পারেন। কুতাহিয়া শহরে একবার গুভেচ খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। আহার শেষে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে শেফ মেহমেতকে বলেছিলাম, এটা আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খাবার। তিনি আবেগে আমাকে জড়িয়ে ধেরছিলেন। তাঁর সেই উষ্ণ উষ্ণতার আতপ আজও অনুভব করি।
গুভেচ আসলে একটি পদ নয়, বরং ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর রন্ধনশৈলীর অপূর্ব মেলবন্ধন।

ছবি: লেখক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ০০
বিজ্ঞাপন