শীতের সবজির বাজারে মধ্যমণি বলা চলে স্তুপ করে রাখা টসটসে টমেটো। আসলে এটি ফল হলেও বিভিন্ন খাবারের পদে টমেটোর যেমন বিচিত্র ব্যবহার রয়েছে, তেমনি এর পুষ্টিগুণও বলে শেষ করার নয়। বিশেষ করে, বর্তমান সময়ের মরণব্যাধি ক্যানসার প্রতিরোধসংক্রান্ত বেশির ভাগ নির্ভরযোগ্য গবেষণায় টমেটোর কার্যকারিতার সম্ভাবনার দিকে পাল্লা অত্যন্ত ভারী। এসবের মূলে রয়েছে এর অনন্যসাধারণ সব ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস আর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। টমেটোর আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকায় হলেও এখন পৃথিবীর সব দেশেই বহু জাতের, আকারের ও রঙের টমেটো মেলে। লাল টমেটো বেশি দেখা গেলেও তা পাওয়া যায় হলুদ, সবুজ,বেগুনি, কমলা আর কালো রঙেও। মনোলোভা টসটসে টমেটোর পুষ্টির সাতকাহন জেনে নেওয়া যাক এবার।
টমেটো লাইকোপিনের সবচেয়ে ভালো উৎস
লাইকোপিন নামের অ্যান্টি–অক্সিডেন্টটি নিয়ে এখন চিকিৎসাশাস্ত্র ও পুষ্টিবিজ্ঞানের জগতে চলছে হইচই। হৃদ্রোগ ও ক্যানসার প্রতিরোধ আর ব্যবস্থাপনায় এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রমাণ মিলেছে বহু নির্ভরযোগ্য গবেষণার ফলাফলে।
টমেটোর লাইকোপিনের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। লাল বর্ণের রঞ্জক আর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করা লাইকোপিনের স্বাস্থ্যগুণ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলে। আর লাইকোপিনের সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উৎস টমেটো। জানা যায়, খোসায় এটি সবচেয়ে বেশি থাকে আর টমেটো যত লাল, লাইকোপিন তত বেশি। লাইকোপিন খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমাতে কার্যকর। এই লাইকোপিনকে ঘিরেই ক্যানসার প্রতিরোধ করতে টমেটোর ভূমিকার কার্যকারিতাসংক্রান্ত গবেষণা বেশি হচ্ছে৷ পর্যবেক্ষণমূলক এসব সমীক্ষায় দেখা গেছে, টমেটোর মাধ্যমে লাইকোপিন গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ক্যানসার হওয়ার বা ফিরে আসার প্রবণতা লক্ষণীয় রকম কম।
ত্বকের যত্নে টমেটোর লাইকোপিন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত টমেটো খান, তাঁদের ত্বকের সমস্যা কম হয়। রোদে পুড়ে ম্লান হওয়া, পোড়াভাব থেকে বাঁচতে নিয়মিত টমেটো খাওয়া ভালো কাজে দেয়। লাইকোপিন ত্বকের কোষ সুস্থ রাখে বলে টমেটো খেলে পাওয়া যাবে টমেটোর মতোই টসটসে ত্বক।
টমেটোতে পানি থাকে প্রচুর। এর জলীয় অংশের পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ শর্করা ও আঁশ। ১০০ গ্রাম টমেটোতে থাকে—
ক্যালোরি ১৮
পানি ৯৫ শতাংশ
আমিষ ০.৯ গ্রাম
শর্করা ৩.৯ গ্রাম
চিনি ২.৬ গ্রাম
চর্বি ০.২ গ্রাম
খাদ্য আঁশের পরিমাণ যথেষ্ট টমেটোতে। একটি মাঝারি টমেটো থেকে ১.৫ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। লো–কার্ব রসাল স্ন্যাক হিসেবে টমেটো আদর্শ। দিনের চাহিদার ২৮ শতাংশ ভিটামিন সি মিলবে একটি মাঝারি টমেটো খেলেই। ভিটামিন সির গুণাগুণ বলে শেষ করা যায় না। রোগ প্রতিরোধ করতে এই ভিটামিন অত্যাবশ্যক। টমেটোর পটাশিয়াম হৃদ্যন্ত্রকে ভালো রাখে। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে আর ভালো রাখে হাড়ের স্বাস্থ্য। গর্ভবতী মায়েরা ফোলেটের দারুণ উৎস হিসেবে টমেটো খেতে পারেন। এতে ভ্রূণ আর পরবর্তীকালে গর্ভস্থ শিশুর পেশি এবং স্নায়ুর বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত হয়। আরও সব অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে টমেটোতে।
হলদে বা কমলা রঞ্জকযুক্ত বিটা ক্যারোটিনও থাকে টমেটোতে। এটি ভিটামিন এ–তে রুপান্তরিত হয়ে কাজ করে দেহে। বেশ কয়টি গবেষণায় দেখা গেছে, নারিঞ্জেনিন নামে যে ফ্ল্যাভোনয়েড গোত্রের পুষ্টি উপাদান টমেটোর খোসায় পাওয়া যায়, তা দেহের ভেতরে ও বাইরে প্রদাহ কমাতে পারে। এ ছাড়া টমেটোতে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ক্লোরজেনিক অ্যাসিড, যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া রক্তচাপ কমাতে কার্যকর হতে পারে৷ রক্তে ক্লটিং প্রতিরোধে টমেটো কাজ করে বলে গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গেছে।
সূত্র: হেলথলাইন